আব্বা আমি বিয়ে করবো।
বিয়ে করবো...বিয়ে করবো
কথাটা বেশ কয়েকবার প্রতিধ্বনিত হলো।
আব্বা বারান্দায় চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন,আমার কথা শুনে হাত থেকে পত্রিকাটা খসে পড়লো,আম্মার হাত থেকে কাচের গ্লাসটা পড়ে গিয়ে ঝনঝন করে উঠলো।বড় বোনের বাচ্চাটা কাদতেছিল,ওর কান্নাও থেমে গেল হটাৎ। বুয়া কাপড় আয়রন করা বাদ দিয়ে, হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কাপড় পোড়ার গন্ধ বের হচ্ছে।টিভিতে খবর হচ্ছিলো,উপস্থাপিকা খবর পড়া থামিয়ে কেন জানি মুচকি হেসে উঠলেন....
আসপাশের বিল্ডিংএর বারান্দায় মেয়েদের হটাৎই শোরগোল বেড়ে গেল মনে হচ্ছে।
আমি মেজাজ খারাপ করে বল্লাম,এতো ওভার রিয়াক্ট করছো কেন সবাই?
আব্বা বললেন-বিয়ে করবে তাহলে??
হ্যা,মেয়ে দেখুন আপনারা।
আম্মা খুশিতে হাত থেকে আরেক টা গ্লাস ফেলে দিলেন।বড় বোনের বাচ্চার বয়স ৪ বছর, তবুও সে কথা বলতে পারে না।সে আজ ফাস্ট কথা বললো-মামা বিয়ে করবে, কি মজা।
কি আশ্চর্য!!যেন আমার বিয়ের জন্য এতোদিন কথা বলে নি....
বুয়া তো খুশিতে আত্নহারা।ওর এতো খুশির কি হলো,মাথায় ঢুকলো না।
পড়ে মনে হয়েছিল, ওর নাকি ছোট একটা পরীর মতো বোন আছে।
আমার রুমের জানালার সামনের বিল্ডিং এর প্রতিটা ফ্লাটের সুন্দরী মেয়ে বারান্দায় এসে, বক যেভাবে পুটি মাছ শিকারের জন্য ওত পেতে থাকে ওভাবে সব মেয়ে তাকিয়ে আছে।কেন যে আমায় এতো পছন্দ করে, বুঝে আসে না...
এমন সময় হটাৎ পাশের বাসা থেকে ভাবী আসলেন আমাদের বাসায়।আম্মা তাকে দেখে সাথে সাথেই বললেন-জানো,সোহান না বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে,লজ্জাবতী কলমি ডগার মতো হয়ে বললেন-সত্যি বিয়ে করবে?
তাইতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমার উত্তর শুনে,কিশোরীর মতো ছুটে পালিয়ে গেলেন।
কে জানে,উনি কি বুঝলেন।
ছোট বোন কলেজ থেকে এসে রুমে ঢুকেই আম্মাকে বল্লো,ভাইয়া নাকি বিয়ে করবে??
আমি বল্লাম,তোকে কে বল্লো?
আমাদের কলেজ সুন্দরি অবিবাহিত বাংলা ম্যাম।সেই জন্য তো কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি আসলাম।
কিহ?তোর ম্যামে কিভাবে জানলো?
তোর রুমের সামনের বিল্ডিং এর পাশের বিল্ডিং এর ১৫ তলায় ওনার বড় বোন-দুলাভাই থাকে।তারাই ফোন দিয়ে ম্যাম কে বলছে।
ওনাদের কে বল্লো??অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
তা আমি কিভাবে বলবো??আসার সময় দেখলাম, সবাই তোকে নিয়েই আলোচনা করছে।আর শোন,বিকেলে আমার কলেজের সব বান্ধবী আসবে তোর সাথে দেখা করতে।কয়েক টা কিন্ত সেই সুন্দরী রে.....
আমার মাথা গরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে।মাথা ঠান্ডা করার জন্য রুমে ঢুকলাম।রুম দেখি কাগজ দিয়ে ভরা।জানালা খোলা ছিল, সবাই প্রেম পত্র নয়, বিয়ে পত্র লিখে রুমে ছুড়ে রুমের তেরোটা বাজিয়েছে ।কয়েকটা তো বিয়ে না করলে কি করবে সেই হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।রাগে দুঃখে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।পালিয়েই বলা চলে।কারণ???
ভাইয়া বিয়া করবেন?সোহান মেয়ে দেখছো?আমার ছোট বোন কে বিয়ে দেয়া লাগতো..,আরে সোহান যে, বাসায় আসো।ভাইয়া আমি এখনো সিংগেল।
এই সব কথা
৫ তলা থেকে নামার সময় কয় হাজার বার যে শুনলাম ইয়াত্তা নাই।আর লিফট হারামজাদা কে আজকেই খারাপ হইতে হইলো..
দারোয়ান কিছু বলার জন্য পিছন থেকে ডাকছে।শোনার টাইম নাই...
চায়ের দোকানে গিয়ে বল্লাম,ভাই কড়া করে এক কাপ চা দেন তো।
দোকানদার বল্লো,বাবা আমি তোমার বাবার বয়সী ভাই না বলে চাচা ডেকো।আমি কোন কিছু না ভেবেই বললাম,আচ্ছা চাচা বলেই ডাকবো।এক কাস্টমার হটাৎ চা চাচাকে বললো,কি খবর ভালো আছেন?
উনি উত্তরে বল্লেন-ভালো আর ক্যামনে থাকি কও?মাইয়াডার বিয়া দেওয়া লাগতো।ভালো পোলাই পাইতাছি না।আমার দিকে ইংগিত দিয়ে বল্লেন-এমন একটা পোলা পাইলে....
আমি লাফ দিয়ে উঠলাম।ওনার কথা শুনে গরম চা দিয়ে জিভ পুড়ে গেছে।আমি চা না শেষ করেই তড়িঘড়ি করে চলে আসলাম।পিছন থেকে দোকানী বলতে লাগলো-বাবাজী কি হইলো?চা শেষ না কইরা গ্যালা যে?
ওনার কথায় কান না দিয়ে চলে আসলাম।খালি রিক্সা দেখে উঠে বসলাম।
কই যাইবেন??
আপাতত সামনে যাও,পরে বলতেছি।
পকেটা থেকে ফোন বার করে দেখি টোটাল মিসকল সংখ্যা ১০০+
আমার তো আক্কেল গুড়ুম।এই জন্য বিয়ে করতে চাই না।আর বুঝি না আমার পিছনে ক্যান যে সবাই লাগে....
আরে আমায় কই নিয়ে কই যাচ্ছেন?
আমাগো বাড়ীত...
বস্তি মতো এলাকায় ঢুকতে ঢুকতে রিক্সাওয়ালা বল্লেন।
কিন্ত কেন?কিছুটা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
গরীবের বাড়ীত দুপুরের খানা ডা খাইবেন।খাইতে অসুবিধা থাকলে কন...
না,মানে..কোন অসুবিধা নাই।
খাইতে বসে দেখি বুটের ডাল,ব্রয়লার মুরগি, আর কি সব ভাজি ভুজি।
আমি বল্লাম-ব্যাপক আয়োজন করছেন দেখছি..
আমাগো বাড়ীত পোথোম আইলেন যে, ওনার স্ত্রী উত্তর দিলো
বুঝলাম না...
কিছু না,আপ্নে হাত ধোন তো আগে।রিক্সাওয়ালা বললো,এই যে খানা গুলা দেখতেছেন এগুলা কিন্ত আমার বৈনে রানধছে।
তাই নাকি?ভালো রান্না করে তো।
হে হে হে,সে কথা ব্যাবাক মাইনষি কয়।কিরে ফুলকলি ভিত্রে আয়...
ফুলকলি রে দেইখা আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল।নাহ,ভালোই ফুলছে।শরীরের সাথে নামের মিল ভালোই আছে।
আমার সাথে চোখাচুখি হওয়ার সাথে সাথে পান খাওয়া দাতে যে হাসি দিল,তাতে আমার পিলে চমকায় গেল....
আপ্নে কি করেন?
আমি?এইতো একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে ডিরেক্টর পদে আছি।
ভাইজান কি বিয়াশাদী করছেন?
বিয়ের কথা শোনা মাত্র অজানা আশংকায় হেচকি উঠতে লাগলো।কোন রকমে বল্লাম-না করি নাই হুংক্কু...
আমিও বিয়া করি নাই...
বাথরুমের কথা বলে,সেখান থেকে কোন রকমে পালিয়ে আসলাম।রাস্তা তাড়াহুড়ো করে পার হতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করলাম।পাশের হাসপাতালে গেলাম। বেডে শুয়ে আছি,পায়ে ভালো ইনজুরি হয়েছে।নার্স চেক-আপ করতে এসে জিজ্ঞেস করলো-বিয়ে করবেন নাকি?
আমি কোনক্রমে মাথা উপুড়-নিচ করে বল্লাম হ্যা।
উনি দেখি কিছু না বলে চলে যাচ্ছেন।যাক বাবা,এই যাত্রা বাঁচলাম। আরে নার্স দেখি দরজা বন্ধ করছে।বুক ঢিপ ঢিপ করা শুরু করে দিয়েছে।আমার দিকে মুচকি হেসে বল্লো-আমিও অবিবাহিত....