আলোর ঝর্ণাধারায়

হাজার দুয়ারি প্রাসাদের কথা মনে আছে? ভারতের মুর্শিদাবাদের এই প্রাসাদটির দোতলায় ছিল নবাবের বিচারকক্ষ। এই কক্ষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ঝাড়বাতি। ১৬১টি ঝাড়বাতির আলোয় আলোকিত হতো বিচারকক্ষ। আধুনিক যুগে এসে হাজার দুয়ারির কথা বলার কারণ কী? কারণ সেই কারুকার্যময় ঝাড়বাতি। এখনো অনেকেই ঝাড়বাতি পছন্দ করেন। ঘর আলোয় যেমন ভরে দেয় তেমনি আনে আভিজাত্যের ছোঁয়া।
ফ্রান্সে ঝাড়বাতির দেখা মেলে অনেক আগে। চতুর্দশ শতকে কাঠের দুটি গুঁড়ি আড়াআড়ি ফেলে, এর মাঝখানে বসিয়ে দেওয়া হতো মোম। কালে কালে ঝাড়বাতির নকশা, আলোর উৎসেও এসেছে নানা পরিবর্তন। মোমবাতির পর গ্যাস, বিদ্যুৎ হয়ে ওঠে ঝাড়বাতির আলোর উৎস। ছোট ছোট বাতি দিয়েই তৈরি হতে থাকে আধুনিক সব ঝাড়বাতি।
নানা রকম ঝাড়বাতিএকেকজনের রুচি ও পছন্দ আলাদা। বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের ঝাড়বাতি। একটু ছোট বা মাঝারি আকারের ক্রিস্টাল, কাঠ, ধাতব ঝাড়বাতি রয়েছে বাজারে। এ ছাড়া সিলিং, ইউনিক গ্লাস, বাটারফ্লাই মোটিফ গ্লাসের, ড্রাম, ফুলেল কিংবা আলোর রং বদলানো ঝাড়বাতিও আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরের আকার অনুযায়ী বেছে নিতে হবে ঝাড়বাতিটি। কৃতজ্ঞতা: সারসিনা লাইটিং, ছবি: সুমন ইউসুফঘরের আকার অনুযায়ী বেছে নিতে হবে ঝাড়বাতিটি। কৃতজ্ঞতা: সারসিনা লাইটিং, ছবি: সুমন ইউসুফবসার ঘরের আলোকছটাঅন্দরসজ্জাবিদ গুলশান নাসরীন চৌধুরী বলেন, ‘ঝাড়বাতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হলো বসার ঘর। বসার ঘরটি যদি একটু বড় হয় তাহলে বড় আকৃতির ঝাড়বাতি বেশ মানিয়ে যাবে।’ ঝাড়বাতি লাগানোর সময় সবার আগে খেয়াল করুন আপনার ঘরের আকার কেমন। এ ছাড়া খেয়াল রাখতে হবে বসার ঘরের আসবাবপত্রের দিকে। আসবাবপত্র যদি কারুকার্যখচিত হয় তবে কাচের ঝাড়বাতিই ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন গুলশান নাসরীন চৌধুরী। সেটা হতে পারে ক্রিস্টাল আকৃতির বা সোনালি রঙের। সোফাসেট বরাবর অথবা একটু কোণ করে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের ঝাড়বাতি খুব বেশি ঝুলে থাকে না বলে ফ্যাশনেবলও দেখাবে। বসার ঘরের সোফা যদি বেতের হয় তাহলে ঝাড়বাতিটিও রট আয়রন বা বেতের হলে ভালো লাগবে দেখতে—এমনটাই পরামর্শ দেন গুলশান নাসরীন চৌধুরী। মাঝারি আকারের বসার ঘরে চারকোনা আকৃতির ঝাড়বাতি সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ডুপ্লেক্স বাড়ির ক্ষেত্রে চাইলে আপনি সিঁড়ি বরাবর লাগিয়ে নিতে পারেন এই ঝুলন্ত ঝাড়বাতি।
শোবারঘরশোবারঘরে একটু ফুলেল নকশা বা ক্রিস্টালের ব্ল্যাক ক্যান্ডেলার ঝাড়বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এর আলো বেশি উজ্জ্বল হয় না, তাই শোবারঘরে একটা আলো-আঁধারির মিশেল সহজেই তৈরি হয়ে যাবে। অনেকেই শোবারঘরে হালকা রং ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে প্রজাপতি মোটিফের ঝাড়বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা হালকা রঙের সঙ্গে এই আবছা আলো সহজেই মানিয়ে যায়। চাইলে সবুজ কিংবা নীলচে আলোর শূন্য পাওয়ারের বাল্বও এতে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যালকনি কিংবা সিঁড়িঘর
বড়ব্যালকনিটি হলে মানাবে ক্রিস্টালের মাঝারি আকারের ঝাড়বাতি। গুলশান নাসরীন বলেন, ‘ব্যালকনিতে গুটি কয়েক গাছ, পাশে একটি আরামকেদারার সঙ্গে ঝাড়বাতিটি বেশ মানিয়ে যাবে।’ এ ছাড়া অনেকেই সিঁড়িঘরেও ঝুলন্ত ঝাড়বাতি ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে সিঁড়িঘর প্রশস্ত হতে হবে।
চাইলে আপনি খাবারঘর, পড়ার ঘরেও ঝাড়বাতি ঝুলিয়ে দিতে পারেন। গুলশান নাসরীনের মতে, পড়ার ঘরে কাঠের তৈরি ঝাড়বাতি মানানসই। এতে বাল্বের পরিবর্তে মোমবাতিও রাখা যেতে পারে। ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী বাচ্চাদের ঘরে রঙিন ঝাড়বাতি সুন্দর দেখাবে। এগুলো বিভিন্ন উপাদান ​ও আকৃতির হতে পারে।
খেয়ালকরুন
খুব বেশি কারুকার্যময় ফার্নিচার ছাড়া ক্রিস্টালের বড় ঝাড়বাতি মানায় না। 
ঝাড়বাতিতে হলুদ আলো সুন্দর দেখায়। তাই বাল্বটি হলদে আলোর দেখে কিনুন। তবে দেয়ালের রং যদি হয় চাঁপা সাদা কিংবা হালকা গোলাপি, তাহলে সাদা আলোও ব্যবহার করতে পারেন।
ঢাকার নবাবপুরের লাইটিং স্টলের বিক্রেতা শরিফুল্লাহ আলম জানান, ‘আজকাল বড় ঝাড়বাতিগুলোর সঙ্গে ওয়াল ব্র্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ঝাড়বাতিটি সুরক্ষিত থাকে।’
তিন মাস অন্তর ঝাড়বাতি পরিষ্কার করুন।
যেখানে যেমন
বিভিন্ন ডিজাইনের ঝাড়বাতি আপনি পেয়ে যাবেন পল্টন, গুলশান ২ নম্বর সার্কেল, বসুন্ধরা সিটি, পুরান ঢাকার নবাবপুর, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে। এখানে অনেক লাইটের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে থেকেই বাছাই করে নিতে পারেন পছন্দের ঝাড়বাতি।
ক্রিস্টালের ঝাড়বাতির দাম সবচেয়ে বেশি। ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত এর দাম পড়তে পারে। আর সাধ্যের মধ্যে পাবেন ঝুলন্ত ঝাড়বাতি। এর দাম পড়বে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা।
বিভিন্ন ধরনের কাচের সঙ্গে কাঠ কিংবা মেটালের মিশ্রণে তৈরি যেসব ঝাড়বাতির দাম ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সিলিং ঝাড়বাতি পাবেন ৫ থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। ঝাড়বাতির ব্র্যাকেট পাবেন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
নবীনতর পূর্বতন