ঝকঝকে ঘর ফুরফুরে মন

আজকাল যখন সংসারের কর্তা-কর্ত্রী দুজনই সমানতালে কর্মক্ষেত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন ঘরদোর পরিপাটি রাখাটা সত্যিই কষ্টকর হয়ে পড়ছে। পরিষ্কারের জন্য বাজারে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রপাতি পাওয়া গেলেও তার অনেকই আমাদের দেশে ব্যবহারের উপযোগী নয়, আর ব্যয়বহুলও। তা ছাড়া কর্মব্যস্ত দিনের পর বা সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে কেই-বা চায় আরাম-আয়েশ বাদ দিয়ে ঘরদোর সাফ-সুতরোয় লেগে পড়তে! ঘরে ছোট শিশু থাকলে তো কথাই নেই, কাজ বেড়ে হয় দ্বিগুণ। তাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বাসা জীবাণুমুক্ত রাখাটাও জরুরি হয়ে পড়ে। কারও কারও বাড়িতে গৃহকর্মী থাকলেও অনেক সময়ই তাদের দক্ষতায় ঘাটতি দেখা যায়। বাসা বদলানোর সময়, ঈদে-উৎসবে কিংবা ঘরোয়া কোনো আয়োজনে প্রয়োজন হয় দক্ষ হাতে ঘরের আগাপাছতলা ঝেড়ে-মুছে ঝকঝকে করে তোলার। ইদানীং এসব ঝামেলা-ঝক্কি কাঁধে তুলে নিয়েছে বেশ কিছু প্রফেশনাল হোম ক্লিনিং সার্ভিস। তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ কর্মীরা আপনার সিলিং ফ্যান থেকে শুরু করে টয়লেটের কমোড পর্যন্ত ঝকঝকে ও জীবাণুমুক্ত করে তুলবেন। আর এর খরচাপাতিও মধ্যবিত্তের নাগালের ভেতরেই। তবে ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরও অনেক সময় তেলাপোকা, ইঁদুর, উইপোকা, ছারপোকার উপদ্রব দেখা যায়। দরজার ফাঁকফোকর, জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে পোকামাকড়। আবার ছারপোকা আক্রান্ত খাটে বা চেয়ারে কিছুক্ষণ বসে থাকলে পরনের কাপড়ই হয়ে উঠতে পারে ছারপোকার বাহক! হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে পোকামাকড় দূর করার বিভিন্ন ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক সমাধান বেছে নেওয়া যায়। না হলে স্রেফ মোবাইলে একটা কল করলেই আপনার বাসায় এসে পড়বে পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানির কর্মী বাহিনী, যারা আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে পোকামাকড় তাড়াতে সিদ্ধহস্ত। কোম্পানিভেদে তিন বা ছয় মাসের গ্যারান্টির ব্যবস্থা আছে। এই সময়ের মধ্যে পোকামাকড় ফিরে এলে বিনা খরচায় তারা সেবা দিয়ে থাকে।

ঘরদোর পরিস্কারের জন্য পেশাদার সেবা পাওয়া যাচ্ছে কৃতজ্ঞতা: অ্যাডভান্স ক্লিনিং, ছবি: নকশাঘরদোর পরিস্কারের জন্য পেশাদার সেবা পাওয়া যাচ্ছে কৃতজ্ঞতা: অ্যাডভান্স ক্লিনিং, ছবি: নকশাঘরোয়া কাজে পেশাদারত্বপশ্চিমা দুনিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই গৃহকর্মীর সংকট দেখা দেয়। সত্তরের দশক থেকে সেখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিচ্ছন্নতাসেবা চালু হয়। বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গৃহকর্মী ছিল সুলভ। সামাজিক সচেতনতার প্রসার, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পোশাকশিল্পের উত্থানের কারণে এ পেশায় মানুষ আর তেমন আসছে না। এ পরিস্থিতিতেই গড়ে উঠছে পরিচ্ছন্নতাসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুরুতে এই সেবা শুধু করপোরেট অফিসগুলোর গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন বাসাবাড়িতে এর চাহিদা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের উদীয়মান খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এটি।

খোঁজখবর আর খরচাপাতিঅ্যাডভান্স এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডে, পরিপাটি, হ্যান্ডিমামা, সেবা.এক্সওয়াইজেড, হাইজিন সার্ভিসেস, সাফাই, থ্রি এফ ক্লিনিং সল্যুশনস, ক্লিনজারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্নতাসেবা দিয়ে আসছে। ফেসবুকে এদের পেজে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন। ওয়েবসাইটে পাবেন বিস্তারিত বিবরণ। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খরচাপাতি নির্ধারিত হয় দুভাবে—ঘরের আকার-আয়তনের ভিত্তিতে স্কয়ারফিটের হিসাবে কিংবা কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। যেমন এক হাজার বর্গফুটের মেঝে ঝেড়ে-মুছে সাফ করিয়ে নিতে গুনতে হবে ৩০০-৫০০ টাকা। রেফ্রিজারেটর পরিষ্কারে খরচ পড়বে ৫০০ টাকা। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সোফা ৩০০ টাকা থেকে শুরু, কিচেন ক্যাবিনেট ৬০০ টাকা, একেকটি সিলিং ফ্যান ১০০-২০০ টাকা, টয়লেট ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। পরিষ্কার করিয়ে নিতে পারবেন রান্নাঘরের এক্সস্ট ফ্যান কিংবা গ্যাসের চুলাও।
পরিপাটি হোম ক্লিনিং সার্ভিসের উদ্যোক্তা শাবাবা তানিয়া বললেন, ‘একবার একটা সার্ভিস নিলে যে খরচ পড়ে, সেই একই সার্ভিস সারা মাসের প্যাকেজ হিসেবে নিলে ছাড় থাকে।’
পোকামাকড় নিধনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএম পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস, জিরো পেস্ট, জিরো ইন্সেক্ট পেস্ট কন্ট্রোল, কুইক নক পেস্ট কন্ট্রোল, ওয়ানস্টপ সল্যুশন বিডি ডটকম উল্লেখযোগ্য। দেড় হাজার বর্গফুটের একটি বাসা থেকে তেলাপোকা, পিঁপড়া, ছারপোকা, মাকড়সা, টিকটিকি তাড়াতে তিন হাজার টাকা খরচ পড়বে। একই আয়তনের বাসা ইঁদুরমুক্ত করতে খরচ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

বাড়ি ঝকঝকে রাখার কাজে লাগে নানারকম উপকরণবাড়ি ঝকঝকে রাখার কাজে লাগে নানারকম উপকরণনতুনের মতো উজ্জ্বলকর্মক্লান্ত দিনের শেষে সবাই ফিরতে চায় শান্তির নীড়ে। যদি ফিরতে হয় অগোছালো-অপরিষ্কার ঘরে, তাহলে ক্লান্তি যেন আরও বেড়ে যায়। আর ঘরে পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে জিনিসপত্র তো নষ্ট হয়ই, নানা রকম অসুখ-বিসুখের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
অ্যাডভান্স এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাসাবাড়ি পরিষ্কার করা উচিত দক্ষ হাতে। যেহেতু সেখানে মানুষ বেশি সময় ধরে থাকে, তাই চোখ এড়িয়ে একটু একটু করে বিভিন্ন জায়গায় ময়লা জমে। তাই অনেক দিন ফেলে না রেখে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।’ জহির উদ্দিনের পরামর্শ হলো, বাসাবাড়ি পরিষ্কারের জন্য মব ব্যবহার করা উচিত সঠিক উচ্চতার। সাধারণত ৫ ফুট উচ্চতার মব দিয়ে ফ্লোর পরিষ্কার করলে কোমরে ব্যথা হয় না।
ঝকঝকে-তকতকে, নতুনের মতো উজ্জ্বল কিংবা ছবির মতো পরিপাটি ঘর আমাদের মন এমনিই ভালো করে দেয়।
নবীনতর পূর্বতন