দেয়ালও কথা বলে

সিরামিক সামগ্রী দিয়ে বাড়ির দেয়াল এভাবেই সাজিয়েছেন ডিজাইনার এমদাদ হক ও তাঁর স্ত্রী দিপ্তী হক (ছবিতে)। ছবি: নকশা
দেয়াল ছাড়া কি আর ঘর হয়? না চাইলেও এই চার দেয়ালের মধ্যেই বসবাস। অন্দরসজ্জায় দেয়ালের ভূমিকাও কিন্তু কম নয়। শুধু দেয়ালের রংটাই যদি বেঠিক হয়ে যায়, ঘরের নকশা খুব একটা কাজে আসবে না। দেয়ালসজ্জার চলতি ধারাটাও এখন বেশ জমজমাট। ঘরের দেয়ালের সাজটা কেমন হতে পারে, সে বিষয়ের টুকিটাকি জানাতেই এই প্রতিবেদন।
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া জান্নাত বলেন, ব্যক্তিসত্তার সৃষ্টিশীলতা এবং সুরুচির প্রকাশ ঘটে অন্দরসজ্জায়। অন্দরসজ্জার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের মধ্যে একটি দেয়ালসজ্জা। দেয়ালের রং, আলোক বিন্যাস এবং রুচিশীল উপায়ে দেয়াল সাজানো—গৃহসজ্জার জন্য এই তিনটি বিষয়ই খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

দেয়ালে টাঙানো ছবিতাসমিয়া জান্নাত বলেন, রুচিশীলতার এক অসাধারণ প্রকাশমাধ্যম ঘরের দেয়ালে ছবির বিন্যাস। তাই ছবি বিন্যাসের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। পারিবারিক ছবি, হাতে আঁকা ছবি বা কারুকার্যময় ওয়ালম্যাট, এর যেকোনোটি থাকতে পারে আপনার বাড়িতে। তবে বসার ঘরে পারিবারিক ছবি মানানসই নয়, বরং তা আপনার শোবার ঘরেই অধিক মানানসই। তবে পরিবারের সঙ্গে আয়েশি সময় কাটানোর মতো আলাদা ঘর বা ফ্যামিলি লিভিং রুম থাকলে সেখানেও পারিবারিক ছবি রাখা যায়। অতিথিদের বসার ঘরে দেশীয় কৃষ্টি-ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে—এমন ছবি বা এ ধরনের অন্য কোনো উপাদান (যেমন সিরামিক বা টেরাকোটা) সাজিয়ে রাখা যায়। প্রাকৃতিক দৃশ্যও মানাবে বসার ঘরে। চাইলে রাখতে পারেন পছন্দের কোনো ব্যক্তির ছবিও। শিশুর পছন্দের কার্টুন চরিত্রের ছবি থাকতে পারে ওর ঘরে। আর খাবার ঘরে রাখতে পারেন মজার কোনো খাবারের ছবি।
এমন উচ্চতায় ছবি রাখা উচিত, যেন কষ্ট করে ঘাড় উঁচিয়ে তা দেখতে না হয়। আমাদের দেশের মানুষের গড় উচ্চতা বিবেচনা করে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় ছবি না রাখাই ভালো। ৫ ফুট উচ্চতায় ছবি রাখলে তা মোটামুটিভাবে চোখের সঙ্গে একই সমতলে থাকবে। একই দেয়ালে একাধিক ছবি রাখতে চাইলে পর্যায়ক্রমিকভাবে এর চেয়ে নিচে রাখতে পারেন। গৃহসজ্জায় রং, বিন্দু, রেখা, অনুপাত, ছন্দ প্রভৃতির সমন্বয় অপরিহার্য। তাই ছবির বিষয়বস্তু, ছবির আকার এবং ফ্রেমের ধরন অনুযায়ী ছবিগুলো সাজাতে হবে, যেন সৌন্দর্যের ছন্দপতন না ঘটে।

টুকিটাকি পরামর্শদেয়ালসজ্জার টুকিটাকি বিষয়ে আরও পরামর্শ দিয়েছেন তাসমিয়া জান্নাত
ঘরের চারটি দেয়ালের মধ্যে একটি দেয়াল কিছুটা অন্য রকম হতে পারে। এটির রং অন্য তিনটির চেয়ে আলাদা হতে পারে। আবার রঙের ভিন্নতা না চাইলে অন্যভাবেও একটি দেয়ালকে প্রাধান্য দিয়েও ঘর সাজাতে পারেন। নির্দিষ্ট কোনো নকশাতেও সাজাতে পারেন একটি দেয়াল। লাগাতে পারেন ওয়াল পেপার। আঁকতেও পারেন চাইলে। তবে প্রিন্টের বা নকশা করা দেয়াল পছন্দ করলে খেয়াল রাখুন, তা যেন অফিস-আদালতের মতো একপেশে কোনো নকশা না হয়; বরং নিজের ঘরের জন্য অনন্য একটি নকশা রাখুন।
 একটি দেয়ালকে আলাদা প্রাধান্য দিতে চাইলে সেটিতে আলাদা আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন।
 বসার ঘরে আভিজাত্যের ছোঁয়া আনতে দেয়ালে সোনালি, হালকা বেগুনি কিংবা বাদামি রং ব্যবহার করতে পারেন।
 একটি রঙের ভিন্ন ভিন্ন শেড কাজে লাগিয়ে দেয়াল সাজাতে পারেন। আবার একটি রঙের ব্যবহারের মাঝে অন্য কোনো রঙের ব্যবহার (কনট্রাস্ট) করা যায়। তবে একই সঙ্গে এ দুটো পদ্ধতির ব্যবহার দৃষ্টিকটু হতে পারে। মনোক্রোমেটিক পদ্ধতিতে কোনো একটি রঙের হালকা থেকে গাঢ় কিংবা গাঢ় থেকে হালকা শেড পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
 দেয়ালে কৃত্রিম ফুলও সাজাতে পারেন। ইনডোর প্ল্যান্টও সাজাতে পারেন দেয়ালের কোনো একটি অংশে।
 একটি ঘরের চারটি দেয়ালই সাজানো ঠিক নয়। চারটি দেয়াল সাজানো হলে ঘরটি দেখতে ভালো না-ও লাগতে পারে।
নবীনতর পূর্বতন