পুতুল দিয়ে ঘর সাজাতে

ঘরের বিভিন্ন কোনা, তাক সাজিয়ে তুলতে পারেন দেশি–বিদেশি পুতুল দিয়ে। ছবি: নকশা
পুতুল দিয়ে ঘর সাজাতে ভালোবাসেন অনেকেই। ঘরের একেকটি কোনায় নানা রকম, নানা ভঙ্গিমার পুতুল মানুষ চরিত্রেরই এক একটা দিককে যেন প্রকাশ করে। পুতুল তৈরির উপকরণও আছে নানা রকম। পিতল, মাটি, সিরামিক, কাচ, কাপড়, পাট এমনকি কাগজ! ঢাকার আড়ং, যাত্রা, সোর্স, আইডিয়ায় পাওয়া যায় যে পুতুলগুলো, সবই হাতে তৈরি। হাতি-ঘোড়া, বিড়াল, কুকুর ছাড়াও নানা জীবজন্তুর প্রতিমূর্তি পাওয়া যায়। কাপড়ের তৈরি পুতুলের দাম শুরু হয় ৩০-৪০ টাকা, আছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। কাঠের পুতুলগুলো ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম। হস্তশিল্পের প্রায় প্রতিটা দোকানেই পাওয়া যায় পাটের সুতোয় বোনা পুতুল। পাটের সুতোয় রং করে, সুতোয় গিঁট পেঁচিয়ে হাতে বানানো এই পুতুলগুলো খুব সুন্দর। পিতলের পুতুলগুলোর দাম একটু বেশিই। আকার অনুযায়ী ১০০ টাকা থেকে দাম শুরু করে পিতলের একেকটা পুতুল ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকাও হয়ে থাকে।
 পুতুল দিয়ে ঘর সাজানোয় খুব বড় পারদর্শিতার দরকার না হলেও মানতে হবে কিছু টিপস। আপনার ঘরের আসবাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বেছে নিতে হবে পুতুলগুলো। আবার সব ঘরে সব ধরনের পুতুলও মানাবে না। বাড়ির সদর দরজার ভেতরে কিংবা বাইরে ফাঁকা জায়গায়, অতিথির চোখ যেখানে সবার আগে যায়, এমন জায়গায় রাখুন শান্ত-সৌম্য প্রতিকৃতি। ছোট ছোট অনেক পুতুল রাখলে এগুলোর মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
বসার ঘরের আসবাবের ওপর নির্ভর করে বাকি সাজসজ্জা কেমন হবে। বাঁশ কিংবা বেতের সোফার সঙ্গে ঝাঁ-চকচকে পিতল খুব মানানসই হবে না। তার চেয়ে বরং রাখতে পারেন মাটির টেপা পুতুল, কিংবা কাপড়ের তৈরি পুতুল। এই দুই উপাদানে কিনতে পারেন জোড়া পুতুল, জামাই-বউ, চাষি, জেলে, মা-মেয়ে, রেলগাড়ি পুতুল (কাঁধে হাত দিয়ে পরপর লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তি), জোড়বিহীন এক কাঠের প্যাঁচা ইত্যাদি। আরও অনেক বাঙালি ধাঁচের পুতুল। রাখতে পারেন কাঠের পুতুলও।
 বসার ঘরের জমকালো সোফার সঙ্গে যদি থাকে পিতল কিংবা সিরামিকের পুতুল, ঘর সাজানোয় বাড়তি কোনো অনুষঙ্গ আদতে আর দরকার নেই। ছোট্ট ঘরের এক কোনায় তাগড়াই এক বড়সড় ঘোড়া থাকলেই চলে। আপনি যদি ভিনটেজ থিমের ভক্ত হন, তবে শোবার ঘর কিংবা করিডরে রাখতে পারেন জাপানি কোকেশি পুতুল, চীনা পোর্সেলিন অথবা বিস্ক পুতুল। চীনা জিপসি পুতুলগুলো দেখতে অনেক রঙচঙা হয়। বিস্ক পুতুলগুলো চীনামাটির তৈরি। কিন্তু পুতুলের রঙে ম্যাট ভাব থাকায় ভিনটেজ থিম ফুটিয়ে তুলতে এর চাহিদাই বেশি।
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলসান নাসরিন চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম পুতুল দিয়ে ঘর সাজানোর ব্যাপারে। তিনি বললেন, ‘আমাদের বাংলাদেশি প্রায় সব ধরনের ঐতিহ্যবাহী পুতুলই এখন হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। পুতুল দিয়ে ঘর সাজানো খুব নতুন কোনো ধারণা নয়। তবে ঘরের কোন জায়গায় কেমন পুতুল বসবে, সেটা নিয়ে আগে থেকেই একটু ভেবে নিতে হয়। যেমন বসার ঘরের এক কোণে, নিচু কাঠের টেবিলের ওপর যদি একই রকম কিংবা একই উপাদানের তিনটি ভিন্ন আকারের পুতুল পরপর দাঁড় করিয়ে রাখা যায়, বেশ লাগে দেখতে।’ ঘরের কোণের পুতুল সাজাতে সঙ্গে ইনডোর প্ল্যান্ট থাকলে ভালো হয়। ঘরে ঢোকার মুখে দেয়ালে ঝুলন্ত পুতুল রাখা যেতে পারে। কিংবা জায়গা থাকলে কোমর সমান উঁচু টেবিলের ওপরও রাখা যেতে পারে পুতুল। ঘরে প্রবেশপথে পুতুল রাখলে সেটি হাসিমুখের পুতুল হলেই ভালো দেখাবে বেশি। এখন তো শোবার ঘরে জায়গা খুব কমই থাকে। তারপরও কেউ যদি চান সেখানেও রাখতে পারেন পুতুল। তবে এ ক্ষেত্রে যুগল পুতুলই বেশি ভালো দেখাবে। যেমন এক জোড়া সাঁওতাল দম্পতি।
 শিশুর ঘরে তাদের পছন্দমতো পুতুল রাখাই ভালো। বিভিন্ন কার্টুন চরিত্র, টেডি বিয়ার, কাপড়ের নরম পুতুলগুলো, যেটা শিশু ভালোবাসে। বাচ্চাদের ঘরে শক্ত উপকরণের বদলে নরম কাপড়ের পুতুল রাখা উচিত। পড়ার টেবিলের এক কোণে বেণি ঝোলানো কাপড়ের পুতুল বেশ লাগে দেখতে।
 পুতুল থাকতে পারে বারান্দাতেও। সুতোর তৈরি পাখির আদল আর সঙ্গে বাঁধা ছোট্ট ঘণ্টি ঝুলিয়ে দেওয়া যায়। ছোট পাত্রে গাছের গোড়াতেও বসিয়ে দিতে পারেন সিরামিকের খুদে পুতুল। মাটির পুতুল মন্দ লাগবে না। ছোট্ট বেলার খেলার সাথি বড় হতে হতে ভিন্ন মাত্রা পায় ঠিকই, কিন্তু একবারে যে হারিয়ে যাচ্ছে না, স্থান পাচ্ছে অন্দরে—এটা ভাবতেই যেন বেশ লাগে।
নবীনতর পূর্বতন