প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?আমাকে এক আহলে হাদীস ভাই কিছু মাসআলা দিয়েছে। এই মাসআলাগুলো আমাদের ফিক্বহের কিতাবে কেমন করে লিখা হল? আমি পর্যায়ক্রমে লিখবোঃ দয়া করে দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে তাদের মুখোশ খুলে দিন।
ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মতে চতুষ্পদ জন্তুর, মৃত দেহ বা নাবালেগা মেয়ের সাথে সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র হয়ে কিছু অংশ প্রবেশ করলেও অযু নষ্ট হয় না। শুধু পুংলিঙ্গ ধুইতে হবে। [দুররে মুখতার, অযু অধ্যায়]
প্রশ্নকর্তা- তানজীল, ঢাকা।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামী ফিক্বহ হল, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত মানুষের দৈনিন্দীন জীবনের
মাসায়েলের সুসমন্বিত রূপের নাম। যাতে সহজ ভাষায় কুরআন ও হাদীসের
বিধানাবলীকে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেমন অজুর ফরজ কয়টি? অজু ভঙ্গের কারণ
কতটি? কী কী কারণে অজু মাকরূহ হয়? কী কী কারণে অযু ভঙ্গ হয় না ইত্যাদি
বিষয় কুরআন ও হাদীসে আছে। কিন্তু স্পষ্ট শব্দে অনেক সময়ই পাওয়া যায় না।
যেমন নাম্বার দিয়ে, সংখ্যা উল্লেখ করে অযুর ফরজ, মাকরূহ, ভঙ্গের কারণ
ইত্যাদি কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যাবে না।তাহলে একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে পূর্ণ বিধানগুলো পালন করে অযু করবে? কী কী কারণে অযু ভেঙ্গে যায়? তা জানা না থাকলে একটি মানুষ কিভাবে তার অযু আছে কি না? তা জানবে?
তাহলে এসব মাসআলা জানাতো খুবই জরুরী বিষয়।
তাই ফিক্বহের কিতাবে সম্ভাব্য মাসায়েলের সূরত উল্লেখ করে বিধান উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে সাধারণ মুসলমানদের সহজতার জন্য।
যে ফুক্বাহায়ে কিরাম এত কষ্ট করে এসব মাসায়েল লিখে আমাদের শরয়ী জিন্দেগী যাপন করা সহজ করে দিয়েছেন তাদের জন্য সবারই মন থেকে দুআ করা উচিত।
এসব মাসআলা কেন লিখা হল?
এ প্রশ্নটিই একটি বোকামীসূলভ প্রশ্ন। আমাদের কথা হল, কেন লেখা হবে না? না লিখলে সাধারণ মানুষ এসব সমস্যার সমাধান জানবে কোত্থেকে? যদি কোন নালায়েক এমন জঘন্য কাজ করে বসে, অপরদিকে নামাযের সময় চলে যাচ্ছে, এখন তার অযু আছে কি না? গোসল করা লাগবে কি না? এসব জানা না থাকলে উক্ত ব্যক্তি কিভাবে নামায আদায় করবে?
এটাতো স্বাভাবিক কমন সেন্সের বিষয়। এসবতো প্রয়োজনীয় মাসায়েল। এখানে মাসআলা উল্লেখ করে দেয়া, মানেতো এসব কাজকে বৈধতা দেয়া নয়। বরং যদি কেউ করে ফেলে, তাহলে তার হুকুম কী হবে? এ বিষয়টি জানানো মাকসাদ।
তাই কেন এমন মাসআলা লিখা হল? প্রশ্ন করাই বাচ্চাসূলভ প্রশ্ন।
এবার আমরা প্রশ্নে উল্লেখিত মাসআলার দিকে দৃষ্টি দেই।
প্রথমে আমরা মূল কিতাবে মাসআলাটি কী আছে? তা দেখে নেই।
আদদুর মুখতার কিতাবে কী কী অবস্থায় গোসল ওয়াজিব হয় না? তা আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা হাসকাফী রহঃ লিখেন-
(و) ولا عند (وطء بهيمة او ميتة او صغيرة
غير مشتهاة) بأن تصير مفضاة بالوطء وان غابت الحشفة ولا ينتقض الوضوء، فلا
يلزم الا غسل الذكر…… (بلا انزال) (رد المحتار على الدر المختار شرح تنوير
الابصار-1/305-306)
চতুষ্পদ জন্তু, মৃত বা শিশুর সাথে সহবাস করলে বীর্যপাত না হলে গোসল
আবশ্যক হবে না। অযুও ভাঙ্গবে না, যদিও বিশেষ অঙ্গ খানিক ভিতরে প্রবেশ করে।
তবে পুরুষাঙ্গ ধৌত করা আবশ্যক। [রদ্দুল মুহতার আলাদদুররিল
মুখতার-১/৩০৫-৩০৬]
এখানে মাসআলা মূলত দু’টি। যথা-
১
উপরোক্ত সূরতে অযু গোসল আবশ্যক হবে কি?
২
চতুষ্পদ জন্তু বা মৃতের সাথে সহবাস করা যাবে কি?
আদদুররুল মুখতার প্রণেতা পবিত্রতা অধ্যায়ে আলোচনা করছেন। এখানে আলোচ্য হল, কোন ব্যক্তির জীবনে এমন নোংরা ঘটনা ঘটলে তার অযু গোসলের বিধান কী হবে? তা জানানো উদ্দেশ্য। তাই এ মাসআলা লিখে দেয়া হয়েছে। যেন মাসআলার সমাধান জানা যায়।
কিন্তু মাসআলার হুকুম বলার দ্বারা উপরোক্ত কাজের বৈধতা প্রদান করা হয়নি।
এখানে লা-মাযহাবী কথিত আহলে হাদীসরা এ অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে যে, উক্ত মাসআলাটি কুরআন ও হাদীসের খেলাফ কি না? যদি খেলাফ হয়, তাহলে এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীস উপস্থাপন করে প্রতিবাদ করতে পারে। কিন্তু উপরোক্ত মাসআলাকে নোংরা মাসআলা বলে তাচ্ছিল্য করার সুযোগ নেই।
চুরি করা হারাম। যিন করা হারাম। তাই বলে কি এসব হারাম বস্তুর হুকুম কিতাবে লিখা যাবে না? না বললে এসবের বিধান জানবে কি করে?
পেশাব পায়খানা নোংরা জিনিস। নোংরা বলে, এসব থেকে পবিত্রতা অর্জনের সূরত বলাও কি নোংরামী?
একি আজীব মানসিকতা পোষণ করেন লা-মাযহাবী কথিত আহলে হাদীসরা?
একই মাসআলা আহলে হাদীস নামধারী বন্ধুদের শায়েখদের কিতাবেও বিদ্যমান!
কথিত আহলে হাদীসদের বিশিষ্ট ইমাম ওয়াহিদুজ্জামান খান সাহেব লিখেন “এমনিভাবে [গোসল ওয়াজিব হয় না] যখন চতুষ্পদ জন্তুর যৌনাঙ্গে অথবা মানুষ বা প্রাণীর পিছনের রাস্তায় প্রবেশ করানো হয়। [নুযুলুল আবরার মিন ফিক্বহিন নাবিয়্যিল মুখতার-১/২৩]
“আমাদের ফিক্বহের কিতাবে থাকলে তা নোংরা মাসআলা, আর তাদের শায়েখদের কিতাবে থাকলে তা সহীহ মাসআলা” এ কেমন দ্বিমুখী নীতি লা-মাযহাবীদের?
দ্বিতীয় বিষয়ঃ
উপরোক্ত কর্মকে আদদ্দুর মুখতার কিতাবে শুধু জঘন্য কাজই আখ্যা দেয়া হয়নি। বরং চতুষ্পদ জন্তুর সাথে সহবাসকারীর জন্য শাস্তির হুকুম আরোপিত করেছে। সেই সাথে উক্ত বিষয়টি নোংরা হবাপর কারণে এবং জঘন্য কর্মটি যেন মানুষের আলোচনায়ও না আসে, এজন্য উক্ত পশুকে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে উপরোক্ত নোংরা পশু দ্বারা জীবিত বা মৃত অবস্থায় কোন কাজ নেয়াকেও মাকরূহ হিসেবে উল্লেখ করেছে। দেখুন-
بَلْ يُعَزَّرُ وَتُذْبَحُ ثُمَّ تُحْرَقُ، وَيُكْرَهُ الِانْتِفَاعُ بِهَا حَيَّةً وَمَيِّتَةً مُجْتَبَى
(পশুর সাথে যিনাকারীকে) শাস্তি দিতে হবে। আর উক্ত পশুকে জবাই করে পুড়ে
ফেলবে। উক্ত পশু দ্বারা জীবিত বা মৃত অবস্থায় কোন উপকার নেয়া মাকরূহ।
[আদদুররুল মুখতার মাআ রদ্দুল মুহতার-৪/২৬]
তাজীর বা শাস্তি কী হতে পারে? আদদুররুল মুখতার প্রণেতা লিখেনঃ
قَالَ فِي الدُّرَرِ بِنَحْوِ
الْإِحْرَاقِ بِالنَّارِ وَهَدْمِ الْجِدَارِ وَالتَّنْكِيسِ مِنْ مَحِلٍّ
مُرْتَفِعٍ بِاتِّبَاعِ الْأَحْجَارِ. وَفِي الْحَاوِي وَالْجَلْدُ أَصَحُّ
وَفِي الْفَتْحِ يُعَزَّرُ وَيُسْجَنُ حَتَّى يَمُوتَ أَوْ يَتُوبَ؛
আগুনে পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে, দেয়াল চাপা দেয়ার মাধ্যমে, পাথার চাপা
দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে। [আদ্দুররুল মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার-৪/২৬}সুতরাং বুঝা গেল আদদুররুল মুখতার প্রণেতা উক্ত কর্মকে বৈধতা দেবার জন্য উপরোক্ত মাসআলা উল্লেখ করেননি। বরং উপরোক্ত হালাতে মাসআলা কী হবে? তা বুঝাতে তিনি তা এনেছেন।
সুতরাং এসব মাসআলা উল্লেখ করে ফিক্বহের কিতাবের বিরুদ্ধে নোংরামীর অভিযোগ উত্থাপন করা ছোট মনের পরিচয় ও মুর্খতার পরিচায়ক ছাড়া আর কিছু নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী