গরু ও বকরীর পেশাব কি পাক না নাপাক? একটি দালিলিক আলোচনা

Image result for islamic picture
প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম,
শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেব আমি আহলে হক মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হচ্ছি। আল্লাহর কাছে আপনাদের সার্বিক কল্যান কামনা করি। আমার একটি প্রশ্নের উত্তর জানাবেন
প্রশ্নঃ আমাদের দেশের তথাকথিত আহলে হাদিস আলেম তার সরল পথ নামক পত্রিকায় লিখেছে গরু ছাগলের পেশাব পাক পবিত্র। আসলে ব্যপার টি কী দলিল সহ জানালে উপকৃত হব।
উত্তর:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যে সকল প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েজ সে সকল প্রাণীর পেশাব পাক কি নাপাক এ বিষয়ে হাদীসের মাঝে ভিন্নতা থাকার কারণে খোদ ইমামদের মাঝেই ইখতেলাফ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে ফতওয়াগ্রাহ্য ও অগ্রগণ্য মত হল তা পাক নয়। নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করা হল-
১.
হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন –
أكثر عذاب القبر من البول. ” رواه الحاكم وقال: حديث صحيح على شرط الشيخين، ولا أعرف له علة ولم يخرجاه ورواه الدارقطنى (৪০৫ ) وقال: صحيح.
অর্থাৎ কবরের অধিকাংশ আযাবই পেশাব এর কারণে হয়ে থাকে। (মুস্তাদরাকে হাকেম হাদীস নং ৬৫৩ দারাকুতনী  হাদীস নং ৪০৫)
২.হযরত আবু উমামা রা.থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ইরশাদ করেছেন-
  ” اتقوا البول ; فإنه أول ما يحاسب به العبد في القبر “. رواه الطبراني في الكبير، ورجاله موثقون.
“তোমরা পেশাব থেকে বেচে থাক। কেননা কবরে সর্বপ্রথম এ বিষয়ে হিসাব নেওয়া হবে।” তবরানী তাঁর ‘আল মু‘জামুল কাবীর’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হায়ছামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগণকে বিশ্বস্ত বলা হয়েছে।
( মাজমাউয যাওয়ায়েদ  ১/২০৯   হাদীস নং ১০৩৪ )
৩.
হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদীস। তিনি রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ইরশাদ করেছেন-
“استنزهوا من البول، فإن عامة عذاب القبر منه”. صححه ابن خزيمة وغيره ، كذا فى فتح البارى (قوله باب من الكبائر أي التي وعد من اجتنبها بالمغفرة.)
তোমরা পেশাব থেকে পবিত্র থাক বা বেচে থাক। কেননা কবরের অধিকাংশ আযাবই পেশাব থেকে না বাচার কারণে হবে। (সহীহ ইবনে খুযায়মা, বরাতে ফতহুল বারী)
উল্লেখ্য যে, এ সকল হাদীসে যে পেশাবের কথা বলা হয়েছে তা ব্যাপক অর্থে এসেছে। মানুষ, মানুষ ছাড়া  অন্য প্রাণী, গোশত খাওয়া বৈধ এমন প্রাণীর পেশাব, গোশত খাওয়া বৈধ নয় এমন প্রাণীর পেশাব         সবই এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভূক্ত।
৪.
হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রা.থেকে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদীসে রয়েছে-
  إذا جاء أحدكم إلى المسجد فلينظر: فإن رأى في نعليه قذرا، أو أذى فليمسحه وليصل فيهما.
যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতা দেখে নেয়। যদি তাতে দুর্গন্ধযুক্ত কিছু কিংবা নাপাকী পায় তাহলে সে যেন তা মুছে নেয় অত:পর তাতে নামাজ পড়ে।  (আবু দাউদ হাদীস নং- ৬৫০)
উল্লেখ্য যে, সাধারণত রাস্তা ঘাটে জীব জন্তুর পেশাব -পায়খানায়ই পড়ে থাকে । অতএব এই রেওয়ায়েত থেকেও  তা নাপাক হওয়া প্রমাণিত হয়।
৫.
হযরত ইবনে উমর রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن أكل الجلالة وألبانها
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  জাল্লালা প্রাণীর গোশত ও দুধ খেতে নিষেধ করেছেন।
(তিরমীযী হাদীস নং ১৮২৪)
জাল্লালা অর্থাৎ যে সকল প্রাণী নাপাকী, বিষ্ঠা ইত্যাদি ভক্ষণ করে।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.বলেন-
 إن الحديث لأبي حنيفة والشافعي في نجاسة أزبال ما يؤكل لحمه وغيره بأن الشريعة منعت عن لحم الجلالة ولبنها ، والجلالة من الجلّة ( يگنى ) وهي روثة الغنم والإبل وغيرهما ولم يتبادر ذهن أحد إلى هذا الدليل .
সারমর্ম: এ হাদীসটি ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শাফেয়ীর মতের স্বপক্ষে গোশত খাওয়া বৈধ এমন প্রাণীর বর্জ্য নাপাক হওয়া প্রমাণিত হয়। কেননা শরীয়াত জাল্লালা প্রাণীর গোশত ও দুধ খেতে নিষেধ করে। আর জাল্লালা হলো যে সকল বকরী, উট ও অন্যান্য  প্রাণী যারা বিষ্ঠা ভক্ষণ করে। (আল আরফুশ শাযী, প্রাগুক্ত হাদীস)
অর্থাৎ বকরী বা উট বিষ্ঠা ভক্ষণ করলে তাদের দুধ ও ঘাম দুর্গন্ধ হয়ে যায়। যদি এ সকল বর্জ্য ও বিষ্ঠা পাকই হবে তাহলে এ সকল প্রাণীর গোশত ও দুধ খেতে নিষেধ করা হবে কেন?  যদ্বারা বুঝা যায় যে এ সকল প্রাণীর বর্জ্য নাপাক। এবং এর দ্বারা গোশত খাওয়া বৈধ এমন সকল প্রাণীর বিষ্ঠা নাপাক হওয়াও প্রমাণিত হয়। বিষয়টি আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন  (ইলাউস সুনান ১/৪১২-৪১৭ মারেফুস সুনান ১/২৭১-২৭৬)
এছাড়া যুক্তিও গরু ছাগলের পেশাব নাপাক হবার দাবী করে।
মানুষের গোস্ত পাক। কিন্তু মানুষের রক্ত নাপাক, সেই সাথে পেশাবও নাপাক।
এখন আমরা গরুর দিকে তাকাই। গরুর গোস্ত সর্বসম্মতভাবে পাক, তেমনি তার রক্ত সর্বসম্মতভাবে নাপাক। সুতরাং তার পেশাবও নাপাক হবে। কারণ তার রক্ত নাপাক।
যেমন মানুষের রক্ত নাপাক তাই তার পেশাবও নাপাক।
আপনি সরল পথ নামক পত্রিকার উদ্ধিৃতিতে  প্রশ্নে যে কথা উল্লেখ করেছেন এ বিষয়েই লা-মাযহাবীদের মান্যবর আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান তার ‘নুযুলুল আবরার মিন ফিকহিন নাবিয়্যিল মুখতার’ (১/৪৯) গ্রন্থে তো লিখেছেন  ভয়ংকার কথা। তিনি এ কথাও লিখেছেন যে, “প্রত্যেক হালাল এবং হারাম জন্তুর পেশাব পাক। তবে খিনযীর ব্যাতীত। খিনযীরের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এক বর্ণনা মতে তাও পবিত্র”।
আপনি লা-মাযহাবী ভাইদেরকে আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, গরুও ছাগলের পেশাব পাক এ মর্মে তারা কোনরূপ কিয়াসের আশ্রয় ছাড়া কোন সহীহ হাদীস দেখাতে পারবেন কি?।  কারণ তারা তো শরয়ী কিয়াস মানতে চান  না বরং কিয়াস নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ ও উপহাস করেন।
وفى الدر المختار: 1: 296 ( وبول مأكول ) اللحم ( نجس ) نجاسة مخففة . 
 والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান
أحدث أقدم