নেপালে তালেগোলে

নেপালে তালেগোলে

নেপালের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি রোজই খবরের কাগজে যখন প্রথম পাতায়, তখনই শোনা গেল নেপাল সফর ঠিক হয়েছে, অবশ্য দিন পাচেকের জন্য। চারটি পরিবারের ১২ জনের দল— একেবারে বারোয়ারি ব্যাপার। ছ’ মাসের বাচ্চা, কিশোর কিশোরী, তরুণ দম্পতী এবং মধ্যবয়স্ক, কে নেই এ দলে? মনের মধ্যে কিছুটা সংশয় নিয়েই বেরোনো হল।
পথে দেখা সবুজে ঘেরা নেপাল
কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ানে যাওয়া সবচেয়ে আরামের। কিন্তু আমরা ছাপোষা বাজেটে যাচ্ছি। তাই হাওড়া থেকে মিথিলা এক্সেপ্রস ধরলাম। বিকেল চারটেয় ছাড়ে। রেক্সৗল পৌছয় পরদিন সকাল ৯ টায়। সেটা ভারত নেপাল সীমান্ত। ও পারে নেপালের বীরগঞ্জ। বীরগঞ্জ থেকে দু’ভাবে কাঠমাণ্ডু যাওয়া যায়, বাসে ও বিমানে। এবারে আমরা বিমানযাত্রা করব। তাই রেক্সৗল থেকে যেতে হবে সিমারা বিমানবন্দর। রেক্সৗল থেকে বীরগঞ্জ যাবার জন্য রিকশা, টাঙ্গা কিংবা গাড়ি নেওয়া যায়। আমরা সিমারা পর্যন্ত গাড়ি নিলাম। দুটো টাটা সুমো, ভাড়া সিমারা পর্যন্ত ১৭০০‌।
এক বিশাল তোরণ আমাদের নেপালে স্বাগত জানাল। সীমান্ত পেরিয়েই গাড়ির ‘ভনসার’ করাতে হল। নেপালিতে এ কথাটির অর্থ হল ‘করদান’। প্রায় বিশ মিনিট পর ছাড়া পেলাম ‘ভনসার’ থেকে। এর পর গাড়ি ছুটে চলল সিমারার দিকে। প্রায় ৪৫ মিনিটের পথ, সুন্দর, মসৃণ। রেক্সৗলের রিকশা, টাঙ্গা, ট্রাক অধ্যুষিত খানাখন্দময় রাস্তার সঙ্গে অনেক তফাত। মনে হল নিমেষে পৌছে গেলাম সিমারা। আপনারা বিমানবন্দর বলতে যা জানেন, যা বোঝেন সিমারার সঙ্গে তার কোনও মিল নেই। ধানক্ষেতের মধ্যে শুধুমাত্র ঘরোয়া উড়ানের জন্য এই বিমানবন্দর। আমাদের মধ্যে যারা প্রথম আকাশপথে যাবে বলে উত্তেজনা অনুভব করছিল, তারা খুবই নিরাশ হয়ে পড়ল। বাইরে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান ছাড়া আর প্রায় কোথাও কিচ্ছু নেই। নেপালে বহু আন্তর্দেশীয় ছোট ছোট বিমান সংস্থা আছে। আমাদের টিকিট তাদের মধ্যে ‘সীতা এয়ার’ -এ। আমরা নিজস্ব গাড়িতে সিমারা এলাম বটে, কিন্তু সাধারণত নিজস্ব বাসে বীরগঞ্জ থেকে যাত্রীদের আনার এদের ব্যবস্থা থাকে।
পশুপতির প্রধান মন্দির
নিরাপত্তা তল্লাশির পর বিমানে উঠলাম। ছোট্ট বিমান, সেবিকা নিয়ে ১৮ জন। তার মধ্যে সিংহভাগ আমরাই। কাঠমাণ্ডু পৌছতে লাগে ১৭ মিনিট। বিমান থেকে নীচে তাকালে দেখা যায় পাহাড়, হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, যা ঘিরে রেখেছে কাঠমাণ্ডু উপত্যকা। মে মাসে কাঠমাণ্ডুর আবহাওয়া মনোরম। নাতিশীতোষ্ণ। বিমানবন্দরে হোটেল থেকে গাড়ি হাজির ছিল। নেপালি সময় ৩:৩০ মিনিটে (যা আমাদের থেকে ১৫ মিনিট এগিয়ে) আমরা হোটেলে পৌছলাম। পথে চোখে পড়ল প্রচুর বন্দুকধারী সেনা যারা এখন কাঠমাণ্ডুর নিরাপত্তারক্ষী। আমরা ছিলাম শহরের মাঝামাঝি, সুন্ধরাতে হোটেল ইমপেরিয়াল। হাটা পথে নিউ রোড, যা কাঠমাণ্ডুর পার্ক িষ্ট্রট ও নিউ মার্কেট।
হোটেলের ব্যবস্থা ছিল মনোমতো। যদিও দেখলে বোঝা যায় এক সময় আরও উন্নত ব্যবস্থা ছিল। জানা গেল গত দুবছরে পর্যটক এত কমে গেছে যে ওদের খরচটাই প্রায় ওঠে না। হোটেলের রেেস্তারাতে দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। নেপালে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার নয়, শনিবার। আমরা যেহেতু শনিবার পৌছে ছিলাম তাই বাজারে বিশেষ ভিড় চোখে পড়ল না। কাঠমাণ্ডুর পরিবহন ব্যবস্থা বেশ ভাল। সরকারি ব্যবস্থায় আছে বাস, ম্যািক্স (টয়োটা ভ্যান) ও টুকটুক (বড় অটো)। এ ছাড়া ব্যয়সাপেক্ষ ট্যািক্স তো আছেই। কাঠমাণ্ডুতে ইলেিট্রক বাস আছে। বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার সময় চোখে পড়েছিল।
নাগারকোটে হিমেল হাওয়ায় জড়সড়
বাজার ছেড়ে আমরা গেলাম দরবার মার্গ। এখানে বেশ কিছু বড় হোটেল আছে। হোটেল অন্নপূর্ণা, হোটেল ইয়াক অ্যাণ্ড ইয়েতি, হোটেল সেরপা, সবই পাচতারা। আর আছে প্রচুর সুসজ্জিত দোকান, বড় ব্যাঙ্কের প্রধান শাখা। দরবার মার্গের শেষ প্রােন্ত দাড়িয়ে প্রহরী ও প্রাচীর ঘেরা ‘নারায়ণ হিতি’, নেপালের রাজপ্রাসাদ। বাইরে থেকে প্রাসাদ দেখা যায় না। আর প্রহরী দেখে ঠিক সাহস পেলাম না রাজতোরণের ফাক দিয়ে উকি মারার।
এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের বেখেয়ালে বেশ রাতই হয়ে গেল। দেখলাম প্রহরীরা এসে গাড়ি দাড় করিয়ে তল্লাশি শুরু করে দিল। আমরাও ধরা পড়লাম এই তল্লাশিতে। প্রথমে কিছু প্রশ্ন, নাম ধাম ইত্যাদি, তারপর দেখতে চাইল পরিচয়পত্র। নেপাল গেলে কিন্তু পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না। ওটা অবশ্যই জরুরি। রাত ন’টা মানে কাঠমাণ্ডু শহর নিঝুম, ঘুমন্ত। সূর্যােস্তর পর একটু ঠাণ্ডা আমেজ গায়ে শিহরণ জাগায়। উপভোগ করার মতো।
দক্ষিণকালী
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম কাঠমাণ্ডুর আশেপাশে বিভিন্ন দ্রষ্টব্য জায়গার উেদ্দশ্যে। প্রথমে বৌদ্ধস্তূপ স্বয়ম্ভূনাথ। শহর থেকে মিনিট কুড়ি দূরে পাহাড়ের উপর এই স্তূপ। পথে দেখার মতো বিশেষ কিছু নেই কারণ রাস্তা শহরের মধ্যে দিয়েই। তবে পাহাড়ের উপর থেকে দৃশ্য বড়ই সুন্দর। পুরো কাঠমাণ্ডু শহরটা যেন পায়ের নীচে। যতদূর চোখ যায় বিস্তৃত শহর আর তারপর চোখ আটকে যায় পাহাড়ের গায়ে। স্তূপের ভেতরে রয়েছে বিশাল বুদ্ধমূর্তি, সোনার তৈরি। আশেপাশে কয়েকটা বোধিসত্ত্বর মূর্তি ও দলাই লামার ছবি। এখানে পুজো দেওয়া মানে প্রদীপ জ্বালানো। পাশে একটি ঘরে সাজানো রয়েছে শয়ে শয়ে মাখন প্রদীপ। বৌদ্ধদের বিশ্বাস প্রদীপ জ্বালালে মনোকামনা পূর্ণ হয়। স্বয়ম্ভূ থেকে নেমে শহরের মাঝে আবার মিন্দর, বুড়া নীলকণ্ঠ। এখানে বিষ্ণু অনন্ত শয্যায় শায়িত। জলের মধ্যে বিরাট পাথরের মূর্তি।
হনুমান ঢোকা ও দোকান চত্ত্বর
দশর্ন সেরে আমরা গেলাম নেপালের প্রধান তীর্থদশর্ন পশুপতিনাথ। বাগমতির তীরে অবিস্থত বহু প্রাচীন এই হিন্দু তীর্থ। সঙ্গে লাগোয়া মহাশ্মশান। বাগমতি দেখলে আফসোস হয়। মজে যাওয়া নালার বেশি আর কোনও অিস্তত্বই নেই তার। নদী বলে বিশ্বাস করাই কঠিন। পশুপতির বিশাল চত্বর। এখানে প্রধান দরজার পাশে বিজ্ঞিপ্ত দেওয়া, মিন্দর চত্বরে অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ। নেপালিরা স্বভাবত খুবই ধর্মভীরু ও নিষ্ঠাবান। এই মিন্দরে তাদের নিষ্ঠাপূর্ণ পুজো দেখলে তা বোঝা যায়। বিগ্রহ এখানে পাথরের পঞ্চমুখী শিব। মিন্দরের সামনে এক বিশাল নন্দী বসে, সোনার তৈরি। প্রধান মিন্দর ঘিরে আশেপাশে রয়েছে অজস্র ছোট ছোট মিন্দর। হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতার কেউই মনে হয় বাদ পড়েননি। একপাশে ১০৮টি শিবলিঙ্গ সাজানো আছে গোলকধাধার আকারে, প্রদক্ষিণ করার জন্য। তাতে নাকি পুণ্য অর্জন হয়। বলতে বাধা নেই আমার মনে ভক্তি কম, তাই আমি প্রদক্ষিণ করে মজাই পেয়েছি। বাগমতির পাড়ে যেখানে ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণা’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল সেই জায়গাটাও আমি দেখে নিলাম। পশুপতি যাবার পথে পড়ল বৌদ্ধা, ২৫০০ বছরের পুরনো তিব্বতি স্তূপ, পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ।
স্বয়ম্ভূনাথের সামনে স্বর্ণ বৌদ্ধমূর্তি
সারাদিন অনেক পুণ্য করে বিকেলে চললাম হিমালয় দর্শনে। কাঠমাণ্ডু থেকে এক-দেড় ঘন্টার পথ নাগরকোট। পরিকল্পনা ছিল হিমালয়ের গায়ে সূর্যাস্ত দেখার। পাকদণ্ডির পথ পেরিয়ে পৌছলাম নাগরকোট। হিমেল হাওয়া একেবারে হাড় কাপিয়ে দিল। তড়িঘড়ি গায়ে চড়ালাম গরম জামা, মাথায় টুপি। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে সূর্যােস্তর আশায় যাওয়া সেটাই দেখা হল না, আকাশ ছিল মেঘাবৃত, সুতরাং হিমালয় দর্শনও মুলতুবি। নাগরকোটের দামি হোটেলে এক কাপ চা আর পকোড়া খেয়ে আমরা সে দিনের মতো কাঠমাণ্ডু ফিরে এলাম।
আমরা, একদল বাঙালি গেছি বিদেশ ভ্রমণে আর সুপার মার্কেট থেকে বাজার করে মালপত্র বাড়াব না তাই হয়? পরদিন সকাল সকাল চলে গেলাম কাঠমাণ্ডুর সব থেকে বড় সুপার মার্কেট ‘ভাট ভাটানি’তে। বিদেশি জিনিসে ভরপুর। কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনি আর ক’টা কিনি তার হিসেব করতে লাগলাম। শেষে দলের ছেলেদের বিরক্তি আর অসহিষ্ণুতার জন্য কিছু বিদেশি চকোলেট ও সুগন্ধী কিনে ইতি দিলাম।
নেপাল বেড়াতে গেলে আমাদের, মানে ভারতীয়দের কাছে একটা বড় আর্কষণ ক্যাসিনো, যার সুযোগ এ দেশে বিশেষ নেই। কাঠমাণ্ডুর সব বড় হোটেলেই ক্যাসিনো আছে। রাতেই সেখানে ভিড় বেশি। আমরা সোলটি ক্রাউন প্লাVার ক্যাসিনো নেপালে গেলাম। এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করার উৎসাহ নিয়ে। মনে করার চেষ্টা করলাম লালমোহনবাবুকে ফেলুদা কী কী শিখিয়েছিল। আমার ক্যাসিনোর ধারণা হিিন্দ সিনেমা আর লালমোহনবাবু। নানা বয়সীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলা ছাড়াও রয়েছে মনোরঞ্জনের জন্য হিিন্দ সিনেমার অনুকরণে নাচ গান। সেগুলি রুচিপূর্ণ কি না তা অবশ্য তর্কসাপেক্ষ। আনেন্দর বিষয়, খেলে আমরা কিছু জিতলামও। ক্যাসিনোতে খেললে খানাপিনা ফাউ!
নেপাল যাব আর পোখরা যাব না তাই হয়? কিন্তু তাই হল। পোখরা যাবার পথ নাকি এখন মাওবাদী অধ্যুষিত। তাই নিরাপদ নয়। একই কারণে যাওয়া হল না চিতওয়ান জাতীয় উদ্যান। কিছুটা হতাশ হয়েই ঠিক করলাম ধুলিখেল যাব। কাঠমাণ্ডু থেকে ২০ মাইল। পাহাড়ি রাস্তা বড়ই সুন্দর। ধাপ চাষের ফলে চারদিক হয়ে আছে শস্যসবুজ। ধুলিখেল যাবার উেদ্দশ্যও ছিল হিমালয় দর্শন। আর কাছ থেকে প্রকৃতিকে অনুভব করা। কোথাও বেড়াতে গেলে অন্তত কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গ বেশ আরাম দেয়। মনে হয় শহরের রোজকার দৌড়ঝাপ, অফিসের ক্লািন্ত কিছুক্ষণের জন্য দূরে চলে যায়। শরীর মন যেন তরতাজা হয়ে ওঠে। সেই উেদ্দশ্যে ধুলিখেল আদর্শ হলেও, কী দুঃখ, হিমালয় যে দর্শন দিল না। নাঃ, এ যাত্রায় আর হল না। মনের দুঃখ মনে নিয়ে কাঠমাণ্ডু ফিরলাম।
নেপালের পশুপতি মন্দির চত্ত্বর
নেপাল প্রায় মিন্দরময় দেশ। কাঠমাণ্ডুর কাছেপিঠে ছড়িয়ে আছে শয়েশয়ে মিন্দর ও তীর্থস্থান। আমরা আবার চললাম দেবদর্শনে— এবার কাঠমাণ্ডুর ২৮ কিমি অদূরে দক্ষিণকালী। িস্নগ্ধ, শান্ত এক পরিবেশে মনোরম মিন্দর। মিন্দর? না, দেবস্থান বলি। কারণ মিন্দর বললে মনে আসে কোন স্থাপত্য। এখানে রুপোর দক্ষিণকালীর বিগ্রহ কিন্তু খোলা আকাশের নীচে রয়েছে, মাথায় শুধু লাল চাদোয়া দিয়ে আবৃত। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার জন্য বাধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম পুকুর। শুধু পাখির ডাক, ঝরনার কুলকুল জলের শব্দ আর ঘন্টার আওয়াজ— সব মিলিয়ে এক নৈস্বর্গিক পরিবেশ। বেশ কিছুটা সময় কাটাতে ভালই লাগল।
নেপাল গিয়ে হিমালয় দর্শন তো হলই না, রাজদর্শন হতে হতেও ফসকে গেল। রাজা নয় রাজকুমার গেল সামনে দিয়ে, বিশাল কনভয় নিয়ে। কিন্তু হায়! কালো কাচ দেওয়া গাড়িতে। দুর, বুঝতেও পারলাম না কে কোথায় ছিল! ভারী আফসোস হল। রাজার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ল, কাঠমাণ্ডুতে ছোটখাটো বেশ কিছু দেখবার জায়গা আছে। যেমন শহরের মাঝখানে ‘রানিপোখরি’- রানিদের স্নান করার পুকুর। বিশেষ কিছু নয়, একটা বাধানো পুকুর, মাঝে ঘরের মতো ঢাকা একটা জায়গা। আসতে যেতে চোখে পড়বে সবুজ খোলা ময়দান, টুডিখেল। ঘুরতে ফিরতে নিউ রোডের আশেপাশে দেখতে পাবেন হনুমান ঢোকা, রাজাদের পুরনো রাজবাড়ি। এছাড়া পাটান দরবারে বিশেষ দেখবার জায়গা । আর যদি উপভোগ করতে চান নেপালের লোকসংস্কৃতি, চলে যেতে পারেন ‘ভাঞ্চাঘর’-এ। ভাঞ্চাঘর কথাটির অর্থ রান্নাঘর। ভাঞ্চাঘর আদপে শহরের একটি রেেস্তারা, কিন্তু এদের বিশেষত্ব হল, রোজ সেন্ধবেলা এখানে পরিবেশিত হয় নেপালের লোকনৃত্য। ওদের লোকসংস্কৃতির ছোট্ট একটা ঝলক। কাঠমাণ্ডুর কাছেপিঠে আরও কিছু পর্যটক আর্কষণ আছে। নাগরকোটের পথে আছে ভক্তপুর মিউজিয়াম। নেপালের পুরনো ঐতিহ্য সংরক্ষিত এখানে। আর যদি সামর্থে পোষায় তা হলে যে কোনও ঘরোয়া বিমানে যেতে পারেন মাউন্ট এভারেস্ট দেখতে। পার্বত্য উড়ানের ব্যবস্থা প্রায় সব সংস্থারই আছে।
ভালয় মন্দয়, তালে গোলে নেপাল সফর শেষ করলাম। তবে হ্যা, আমার বেড়ানোর গল্প শেষ হয় না কোনও জায়গায় গিয়ে সেখানকার প্রচলিত রীতিনীতি ও খাদ্যের কথা না বললে। আগেই বলেছি নেপালিরা স্বভাবত ধর্মভীরু। তাদের জীবনযাত্রাও খুবই সাধারণ। ওদের দিন শুরু হয় প্রায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। ভাত, ডাল, শাক ও কখনও কখনও ‘মাসু’ বা মাংস (এখানে মোষের মাংসরই চল বেশি) সহ প্রাতরাশ সেরে তারা বেরিয়ে পড়ে কাজে। ছেলে মেয়ে সবাই এখানে কর্মঠ। দুপুরে এদের জলখাবার বা ‘খাজা’ হল শুকনো ঁচিড়ে যা ওদের ভাষায় ‘চূড়া’ সঙ্গে ‘ভটমাস’, যা একপ্রকার ‘মকাইদানা’ আর সেই অতি িপ্রয় ‘মাসু’। না বলে পারছি না, পুরো নেপালে একটিও অ-সুসজ্জিতা মেয়ে চোখে পড়েনি। তারা প্রত্যেকে অত্যন্ত অত্যাধুনিক পোশাক পরিহিত এবং প্রসাধন সম্পর্কে সচেতন। আমাদের নব উদীয়মান কলকাতা শহরেও এত খোলামেলা পোশাকের আধুনিকা পাওয়া যাবে না। দিনের শেষে আবার তারা প্রাতঃরাশের মতোই সাধারণ ভোজন করে।
বুড়া নীলকণ্ঠ
নেপালিদের খাদ্য তালিকা বিশেষ আর্কষণীয় না হলেও আমার মতো খাদ্যরসিককে ওখানে গিয়ে কষ্ট পেতে হয়নি। পৃথিবীর প্রায় সবরকম খাবারই সেখানে পাওয়া যায়। নতুন রকম খাবারের পাশাপাশি পেয়েছি পরিচিত খাবারও। কলকাতার বহু পরিচিত মোমো ওখানে গিয়ে পেলাম একটু ভিন্ন স্বাদে। মোমো এখানে মুখ খোলা, ফুলের মতো দেখতে। আর আছে নতুন জিনিস ‘কথে’- আধা ভাজা আধা সেদ্ধ মোমো। উফ্‌! কি ভালো খেতে! রসনার বাসনা তৃপ্ত করার একেবারে উপযোগী। আর দেশীয় আইস ক্রিমের তো তুলনাই নেই। বলতে ইচ্ছে করছে, আহা! কী খাইলাম জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না।
ওহো, শেষ পর্যন্ত আমার হিমালয় না দেখতে পাওয়ার দুঃখ ঘুচেছিল। কাঠমাণ্ডু থেকে বীরগঞ্জ ফেরার পথে বিমানের জানলা থেকে মেঘের ফাকে বরফ ঢাকা পর্বত শ্রেণী চোখে পড়েছিল।
أحدث أقدم