আইন পেশায় শিক্ষানবিশরা এতো অবহেলিত কেন ?

lawyer-couple-7896624.jpg
আইন পেশা একটি রাজকীয় এবং সুনামধন্য পেশা, এই পেশাকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই, এছাড়া এই পেশার রয়েছে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্হা, রয়েছে নিজস্ব সংগঠন, রয়েছে নিজস্ব ফান্ড, অথচ অনেকেই জানেন না এই পেশার শিক্ষানবিশরা কতোটা অবহেলিত, উপেক্ষিত, আইনজীবি হতে গেলে The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order – 1972 এর ২৭ অনুচ্ছেদের ১ উপঅনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনাকে অর্জন করতে হবে আইনের উপর স্নাতক ডিগ্রী, অথবা বাংলাদেশের বাহিরে বার কাউন্সিল স্বীকৃত যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইনের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রী এবং অতিক্রান্ত করতে হবে একজন আইনজীবীর কাছে ৬ মাস শিক্ষানবিশ কাল, এরপর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের শর্ত অনুযায়ী এনরোলমেন্ট ফরম পূরন করে অংশ নিতে হবে এমসিকিউ পরীক্ষায়, এমসিকিউতে পাশ করলে মিলবে লিখিত পরীক্ষার টিকিট, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ভাইভাতে, ভাইভা পাশ করলে আপনি বাংলাদেশের যেকোন আদালতে আইনপেশা পরিচালনা করতে পারবেন, কিন্তু এই পরীক্ষাচিত্র যে কতো ভয়াবহ আসুন তা দেখা যাক,
২০১২ সালের আগে পরীক্ষা ব্যবস্হা ছিল ৬ মাস পর পর, আর সেখানে ছিল লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা, যা পাশ করতে পারলে আইনজীবী হয়ে যাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্হায় এসেছে অনেক রদবদল, প্রথমে এমসিকিউ, অতপর লিখিত এবং ভাইভা, কেউ যদি এমসিকিউ পরীক্ষা পাশ করে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় তবে তাকে আবার এমসিকিউ থেকে শুরু করতে হবে, প্রতি একবছর পর পর পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে ১৮ মাস পর, এইবার আসি শিক্ষানবিশ কালে, সিনিয়র আইনজীবীরা একজন শিক্ষানবিসকে দিয়ে মুহুরী পিয়ন থেকে শুরু করে চা আনার বয় পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেন, সকাল ৯টা থেকে শুরু করে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত চেম্বারে বিরতিহীন ভাবে কাজ করতে হয় শিক্ষানবিসদের, কিন্তু দিনশেষে কখনো ১০০ টাকা, কখনো ২০০ টাকার বেশি সম্মানী ভাতা পাননা শিক্ষানবিসরা, কোন কোন সিনিয়র আইনজীবীতো টাকাই দেন না জুনিয়রদের ॥ যদি প্রতিদিন ১৫০ টাকাকে গড়ে ধরে ২০ দিয়ে গুন করা হয় তবে শিক্ষানবিসের উপার্জন মাসে ৩০০০ টাকা, যেখানে রয়েছে দুপুরের খাবারের খরচ, যাতায়ত ভাড়া ॥
তাহলে একজন শিক্ষানবিসের অন্যান্য খরচ আসবে কোথায় থেকে ? বাসা ভাড়া, পড়ালেখার খরচ কে দিবে, খাবার এবং আনুষাঙ্গিক খরচ আসবে কোথায় থেকে ? পরিবারের বোঝা হয়ে কতোদিন থাকতে হবে শিক্ষানবিসদের ? যেখানে নিজের খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে পরিবারের খরচ চালানোর চিন্তা করাতো সেই শিক্ষানবিসের কাছে আকাশের চাদঁ হাতে পাওয়ার মতন, সমমানের ডিগ্রী অর্জন করে এবং মাত্র ৬ মাস শিক্ষানবিস কাল পার করে ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হয়ে যাওয়া যায়, অথচ ৬মাস শিক্ষানবিস কাল পার করে আইনজীবী হওয়া অসম্ভব, কারন শিক্ষানবিস ৬মাস পার করার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সেখানে পাশ করে তারপর আইনজীবী, আর সেই পরীক্ষাও হয় দীর্ঘ মাসের পর মাস অতিক্রম হওয়ার পর, অর্থাত্ শিক্ষানবিস কাল কারো কারো ২থেকে ৩ বছরও লেগে যায়, এই ভাবে চলতে থাকলে এই পেশায় একটা সময় কেউ আর আসতে চাইবে না, আর এই পেশাও অনেক মেধাবীদের হারাবে,
যেহেতু বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিজস্ব ফান্ড রয়েছে, সেই ফান্ড থেকে শিক্ষানবিসদের জন্য প্রতি মাসে একটি নূনতম সম্মানী ভাতা প্রদান করার ব্যবস্হা না করলে এবং সিনিয়র আইনজীবীরা এই বিষয়ে উদ্যোগ না নিলে কঠিন থেকে আরো কঠিন মানবেতর জীবন যাপন করবে শিক্ষানবিসরা, যার ফলে একটা সময় এসে অনেক শিক্ষানবিস সমাজের অনেক অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়বে, শিক্ষানবিসদের মানবেতর জীবনের কথা বিবেচনা করে সিনিয়র আইনজীবীদের অতি দ্রুত এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা ঊচিত, নয়তো একটা সময় এসে, ”আদালতই থাকবে, আইনজীবী থাকবে না”
ফ্রম-বাংলাদেশের আইন কানুন পেজ
أحدث أقدم