এটাই ভালোবাসা

রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তী।
অন্যপাশে সেই ছেলেটি।
যার কথা অবন্তী ভেবেই যাচ্ছে অনেক দিন ধরে।
এই ছেলেটিকে দেখার জন্যে সে রোজ সকালে দাঁড়ায় রাস্তার পাশে।
অবন্তী ভাবে ছেলেটাকে কিছু বলবে, কথা বলবে তার সাথে কিন্তু তার আর সুযোগ হয়ে উঠেনা।
প্রত্যেকদিন একটি বাস এসে নিয়ে যায় ছেলেটাকে যেন বাসটি ক্ষুদার্ত গাংচিল আর ছেলেটি দীঘীর জলে পদ্মপাতার উপর ভেসে উঠা ছোট মাছ।
ডুব মেরে গিলে ফেলে বাসটি তাকে।
নিয়ে যায় চোখের আড়ালে।
বাস নামক গাংচিলটিকে অনেক দূরে দেখেই বুক ধুকধুক করে কেঁপে উঠে অবন্তীর।
এই বুঝি তার চোখের পলকে মনের ভেতর থেকে নিয়ে যাবে ছেলেটিকে।
অবন্তীর আজ কান্না আসছে।
এতোদিন হলো, কয়েকটা মাসও চলে গেল।
শুধু রাস্তার ওপার থেকে দাঁড়িয়ে দেখেই যায়।
আজও বলতে পারেনা ছেলেটাকে কিছু না বলা কথা।
হয়নি তার সাথে কোন পরিচয়।
আজ আবার গাংচিলটা এসে যাবে।
স্বপ্নের মতো নিয়ে চলে যাবে।
এর পূর্বেই কথা বলতে হবে ছেলেটির সাথে।
রাস্তার এপার থেকে ওপারে আসলো অবন্তী।
ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলো ভালো আছে কিনা?
ছেলেটি কিছু বলেনা শুধু অপলক দৃষ্টিতে তার মায়াবী চোখে চেয়ে দেখছে অবন্তীকে।
ব্যাগের ভেতর থেকে একটা খাতা বের করে ছেলেটি লিখল- ভালো আছি। আপনি? অবন্তী বুঝতে পারছেনা সে খাতায় লিখে বলছে কেন।
নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলে না।
অবন্তী বলল- ভালো আছি, আমি কি আপনার নামটা জানতে পারি?
ছেলেটি তার খাতায় লিখল – অনিক হাসান।
অবন্তী নিজের পরিচয় দিল- আমি অবন্তী, বাড়ি রাস্তার ঐ পাশের দালানটা।
হটাত করে আসলো সেই ক্ষুদার্ত গাংচিল। ডুব করে গিলে ফেলল অনিক কে।
মুহুর্তে সবকিছু বিচিত্র মনে হলো অবন্তীর। মনে হলো যেন স্বপ্ন।
অবন্তীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে, অবন্তী চলে যাবে ঠিক ঐমুহুর্তে ছেলেটি বলল-
-আপনি কি অনিক কে চেনেন? জিজ্ঞাসা করলাম তার সাথে তো কেউ কথা বলেনা তাই।
অবন্তী খুলে বলল সবকিছু। আর ছেলেটির কাছ থেকে জানতে পারল অনিক বোবা।
কখনো কথা বলতে পারেনা।
কিছু না বলেই কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরল অবন্তী।
সে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ল। তার বাবা মা কি কখনো এমন বোবা ছেলে মেনে নিবেন?
পড়ালেখায়ও সে মন দিতে পারেনা। সিলেট থেকে পাটিয়ে দেয়া হলো মামার বাড়ি হবিগঞ্জে।
অবন্তী চলে গেল কিন্তু তার মন অনিকের কথা ভাবত সারাক্ষণ।
তিন বছর পর অবন্তী আসলো সিলেট।
বাড়িতে বসে সময় কাটেনা অবন্তীর।
তার ছোট্ট বোন রিন্তী কিছু বই এনে দিয়েছে পড়ার জন্যে। বই পড়তেও ভালো লাগছেনা।
তার পরও অবন্তী একটা বই হাতে নিল। লেখকের নামটাও বেশ পরিচিত। বইটি অপলক দৃষ্টিতে সে পড়ছে।
বইটির নাম ”অবন্তী” লেখক যাকে উত্সর্গ করেছে তার নামও অবন্তী।
পুরো বইয়ের লেখা মিলে যাচ্ছে পাঠক অবন্তীর সাথে। অবন্তীর রাস্তার পাশে দাঁড়ানো থেকে কলেজে যাওয়া ইত্যাদি। অবন্তীর ভালোবাসার কথাও খুব লিখেছে লেখক।
মানসিক ভাবে ভেঙেপরা আর মামার বাড়িতে পাটিয়ে দেয়া সবকিছুর এক অপূর্ব মিল।
অবন্তী কাঁদতে লাগলো খুব। নিরিবিলি কেঁদে বালিশ ভেজায়। তিন বছর পূর্বের সবকিছু আবার নতুন করে জেগে উঠে।
রিন্তী দেখে ফেলে অবন্তীর কান্না। মায়ের কাছে বলে। অবন্তীর বিয়ে ঠিক করা হয় কোন এক বড় লেখকের সাথে।
মা বাবা বলেছে, অবন্তী যা চায় তাই হবে। অবন্তী বিয়েতে রাজি হয়।
খুব ধুমধাম করে বিয়ে হয় অবন্তীর সাথে লেখকের।
বাসর রাতে লেখক অবন্তীকে তার নিজের ভাষায় বলে- তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে গেলে অবন্তী ?
অবন্তী তার মুখ খুলে বলে- আমি বিয়ে করেছি সেই ব্যক্তিকে, যে তিন বছর পূর্বে দাঁড়িয়ে থাকতো বাসের জন্যে। আর আমি দূর থেকে অপেক্ষায় থাকতাম সে আসবে কবে। আমি কোন লেখক কে বিয়ে করিনি,
যাকে চেয়েছিলাম, বিয়ে করেছি তাকে।
লেখক আবার তার ভাষায় বলে- কে সে? নাম কি তার?
অবন্তী লজ্জা পায়, লেখকের বুকে মাথা গুজে বলে- Rasel.
أحدث أقدم