একটি স্বপ্নের জন্মদিন


Related image
বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় শিশিরভেজা ঘাস মাড়িয়ে হাঁটছে সুমন আর তার স্বপ্নকন্যা অর্নিকা। দুজনেই নিরব। কথা বলার বা দরকার কি যেখানে নিরবতায় অনেক কিছু বলে দেয়। কিন্তু তাদের নিরবতায় প্রকৃতি নিরব না থেকে শুরু হয় পাহাড়ীবৃষ্টি। হঠাৎ বৃষ্টি আসায় ভয় পেয়ে অর্নিকা জড়িয়ে ধরে সুমনকে। সুমনও জড়িয়ে ধরে আমি তোমাকে ভালবাসি, কোন ভয় নাই।
হঠাৎ করে কে যেন সুমনকে থাপ্পড় মেরে মেরে বলতেছে.. “গাধার মত দুপুর পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিস, কি ফাজিল পুলারে পানি ঢেলে দেওয়ার পরেও বালিশ জড়িয়ে ধরে দিব্যি ঘুমাচ্ছিস, আর বিড় বিড় বিড় করে এসব কি বলতেছস…? ওঠ, বাজারে যেতে হবে।
এতক্ষণ যা হচ্ছিল পুরোটাই সুমনের কল্পনার নিদ্রাকালীনরুপ। মায়ের থাপ্পড় খেয়েই সে বাস্তবজীবেনে ফিরে আসে।
নিজের বোকামির জন্য লজ্জ্বা আর আফসোস নিয়ে কোন মতে বিছানা থেকে উঠেই প্রতিদিনের অভ্যাসমত মোবাইলটা হাতে নিতেই স্কীনে দেখে অর্নিকার অনেকগুলো মিসডকল। কল ব্যাক করতেই রিসিভ করে অর্নিকা………
— আসসালামুআলাইকুম…
— ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো..
— আপনি কে..
— মানে! তুমি অর্নিকা না..
— হ্যাঁ.. তো..
— তো মানে…তুমি আপনি আপনি করে দূরে রাখতেছ কেন..
— সেলিব্রেটিরা দূরেরই হয়..
— সেলিব্রেটি কই পেলে..
— যাকে এতবার মেসেজ করে এবং ফোন করে পাওয়া যায়না সে নিশ্চয় সেলেব্রিটি।
— সরি ভুল হয়ে গেছে..
— আরে আরে সরি বলছেন কেন। বরঞ্চ আমিই সরি যে আপনার মত বিজি মানুষকে বিরক্ত করলাম বলে..
— বললাম তো সরি। আর হবেনা, আমি ঘুম ছিলাম..
— না না আপনি ভুল করছেন..
— এই তুমি এসব বন্ধ করবা নাকি ফোন রেখে দিব..
— আপনার ইচ্ছা ভাইয়া..
— এ জগতে হায় কে ভাইয়া হতে চায়..
থাক তুমি ভাইয়া ভাইয়া করে, রাখি।
অর্নিকার এমন ব্যবহারে খুববেশী অবাক হয়নি সুমন। কারণ প্রায় মেয়েটা এমন পাগলামী করে। ফোনটা টেবিলে রাখতে গিয়েই সুমনের চোখে পড়ে তার নীল মলাটের ডায়রীটা। আগে ডায়রী লেখার অভ্যাস ছিলনা তার, কিন্তু অর্নিকার সাথে রিলেশনের পর থেকে ওর সাথে কাটানো সময়কে বাঁধতে না পারলেও সময়ের স্মৃতিটা নীল কালিতে গেঁথে রেখেছ এ ডায়রীতে। হাতে নিয়ে মলাট উল্টাতেই প্রথম পৃষ্ঠায় লিখাটা চোখে পড়ে সুমনের। তাতে লেখা…..
“আজ ২৮-১২-২০১২। আজ থেকেই আমার নতুন জীবনের নতুনত্বে পথ চলা, যে পথের সঙ্গী আমার স্বপ্নকন্যা অর্নিকা।”
জীবনের এত স্পেশাল একটাদিন ওর মনে নায় কেমনে ভেবে নিজেই অবাক হয়। অর্নিকার এতগুলো মিসডকলের রহস্য বুঝতে পারলো এতক্ষণে। আবার মোবাইল হাতে নিয়ে ইনবক্স ওপেন করে দেখে অর্নিকার অনেকগুলো উইশিংমেসেজ। সাথে সাথে অর্নিকাকে ফোন দেয়, কিন্তু তার মোবাইল সুইচডঅফ। মেয়েটা সুমনের সাথে রাগ করলেই এ কাজটিই এটাই সমস্যা।
অবশেষে অনেক চেষ্টার পর অর্নিকার কাজিন নুপুরের মাধ্যমে যোগাযোগ করা গেল…….
— কি ব্যাপার। ফোন সুইচডঅফ কেন…
— তাতে তোমার কি…
— অনেক কিছু…
— কি..
— ভালবাসা। শোন মিথিলাকে একটা প্যাকেট দিছি, ওটা নাও আর বিকেলের নদীর পাড়ে আসবা। আমিই অপেক্ষায় থাকবো..
— পারবোনা। আমাকে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করবানা।
বলেই ফোন কেটে দেয় অর্নিকা। নীল পেপারে মোড়ানো প্যাকটা খুলতেই নীল শাড়িটা আর কিছু নীল চুড়ি বের হয়ে আসে। শাড়ির ভাজের নীচে একটা নীল খাম। পাগল একটা নীলছাড়া কিছুই চিনেনা, আনমনে বলে সে। খাম খুলে দেখে চার লাইনে লেখা……
“ক্ষমা করে নিজগুণে
আসিও নদী পাড়ের কাশবনে,
অপেক্ষায় রবো আমি
কতটা ভালবাসি জেনে যাও তুমি…!”
সন্ধ্যায় অর্নিকা নদীর পাড়ে এসেই চমকে যায়। একটা ছোট্ট নৌকা ২৮করে মোম, বেলুন গোলাাপ দিয়ে সাজানো। আর ফুল দিয়ে নৌকার নাম লেখা স্বপ্নতরী। এসব দেখেই অর্নিকার অজান্তেই সুখের জল নেমে এলো তার চোখে। কিন্তু সুমন কই..? পাগলটাকে তো দেখা যাচ্ছেনা। সুমনকে খুঁজতে পিছন ফিরতেই দেখে সুমন তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সুমন হাটু গেড়ে বসে ২৮নীল গোলাপের বান্ডেল অর্নিকার সামনের এগিয়ে ধরে আবৃত্তি করে………
“নীল নীলাম্বরী তুমি,
নীলিমার নীলে মিশে যাও বারবার
নীল নীলাম্বরী তুমি,
ভালবেসে হাত ধরেছো আমার
নীল নীলাম্বরী তোমার,
নীলাভ মুখখানি অন্তর্ধান করোনা কভূ
নীল নীলাম্বরী তোমার,
আমার মিলন যেন দেয় প্রভূ…।”
অর্নিকা গোলাপগুচ্ছটা হাতে নিয়ে love U বলে সুমনকে জড়িয়ে ধরে দেখে সুমনের পিছনে কিছু দূরে একটা ছোট্ট কেক। রিলেশনের বার্থডেটা এত সারপ্রাইজ হবে অর্নিকা ভাবতেই পারেনি। সে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুমনকে…….
— এত ভালবাস আমাকে…
— না
— না..?
— হ্যাঁ, আমার ভালবাসা আকাশের চাইতেও বিশাল।
— তবে এত কষ্ঠ দাও কেন..
— কষ্টের পরেই তো সুখ।
— হুম..
একফালি চাঁদ আর জোনাকির মৃদু আলোয় পুরো জগৎটাই আজ আলোকিত। আর সেই আলোকিত অন্ধকারে নৌকায় বসে আছে সুমন তার স্বপ্নকন্যা অর্নিকাকে নিয়ে। মোমের আলো অন্ধকারে অর্নিকার গলা ভেসে আসছে…….
তুমি তাই তাইগো; আমারো পরাণে যাহা চাই..।
أحدث أقدم