মেয়েরা অাসলেই কি ভালোবাসতে জানে??? না জানে না......যদি জানতো তাহলে অামার মতো অবলা, সুফল ছেলে কি অার শখে সিংগেল থাকে রে ভাই???এতোদিনে অামার উপর কোন মেয়েই ক্রাশিত ছিল না....সবাই ভায়া, ভাইয়া,ভাইয়ু বলে কান দুইটা ফালা ফালা করে ফেলত। কেন যে ক্রাশিত ছিল না সেটা জানি না.... তবে সবাই বলে অামি নাকি ফাজিল্লা!!!এইতো ধরেন দুই একটা বৈশিষ্ঠ্য....রুমির বফ রে মারলো কে??? এই মেয়ে ওই মেয়েরে " বউদি লাগাও " বললো কে??? সুমির বফের টাকা, মোবাইল মার দিল কে???...ইত্যাদি ইত্যাদি..সব জায়গায় নামটা অামার......!!!
এগুলো ধরেন বছর দুয়েক অাগের কথা।বর্তমানে ভালো বেতনে সরকারী একটা চাকরি করি।
অাজকাল প্রতিবেশী অাত্নীয়রা বিরক্ত হওয়ার বদলে অামার বাবা মা চাচাকে ভালোই বিরক্তি পোহাতে হয়। কারণটা অামি।সরকারী চাকরির বদৌলতে মেয়েরাই এখন অামাকে টিজ করে.......মানে ইফটিজিং করে।এই যন্ত্রনায় মা বাবা চাচা অথিষ্ট হয়ে শেষে সিদ্ধান্ত নিল অামারে নাকি বিয়া না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই.....!!!জীবনে দেখেছি ছেলে পেলের ভয়ে মেয়েদের বিয়া দেয়....অাহারে অাজকে অাইসা নিজেকে "মেয়ে " মনে হচ্ছে।
সমস্যা ছিল, অাছে।সবাই তো বিয়া করতে চায়....... এইতো ধরেন সেইদিনই লামিরার অাব্বা অাইসা কইলো যে তিনি নাকি ৪ লক্ষ দিবেন??অারো নাম না জানা দুই একজন তো অাসে প্রতিদিনই।কিন্তু খারাপ হইলেও যৌতুক নিয়ে বিয়া করার ইচ্চা কিন্তু অামাদের কারোর নেই। এর মধ্যে একজন অাছে যিনি অামার বিয়া নিয়া খুব এক্সাইটেড। তিনি হলেন রহমত অালী।
রহমত অালীর মেয়েটা দেখতে শ্যামা,চেহারা মোটামুটি সুন্দরী বলা যায়। মা বলে , "অামার সাথে নাকি ওর মানাবে ভালো।"এর চেয়েও অাসল কথা হলো সে অামাকে অাগে কোনদিন ভাইয়া বলে ডাকেনি। শান্ত,ভদ্র মেয়ে বলে অামিও তার সাথে একদিনও কথা বলছি কিনা মনে নাই।দুনিয়ার এতো মেয়েকে এটা,ওটা, সেটা বলতাম তখন এই মেয়েটাকে এগুলা বলতে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করত।ছোটতে যখন একসাথে পড়তাম তখন অামার দিকে একটু তাকায় থাকত.... এখনও মনে পড়ে।
তবে সমস্যা কিন্তু অাছে এক জায়গায়।মেয়েটার নাম সালেয়া।অারে ভাই.....অাপডেট যুগে মেয়েদের নাম হবে প্রিয়াঙ্কা, দিপিকা,অালিয়া,ক্যাটরিনা,সানি, সেলেনা গোমেজ,অান্জেলিনা জোলি ইত্যাদি ইত্যাদি উফফ কি যে লাগবে নাহ!!।এইটা কি নাম????.....কোন ফ্রেন্ড যদি বলে," দোস্ত তোর ইয়ের নাম কি রে??? যখন বলল, " সালেয়া!!" বন্ধুরা বলবে," অারে ব্যাটা তোর শ্বাশুরির নাম জিঙ্গেস করছি... তোর বউয়ের নাম বল??"
কি লজ্জার ব্যাপার...কি লজ্জার ব্যাপার??? অাপসুস.....অাচ্ছা নামটা ভালো হইলেই তো ঠিক হইতো.....তাইনা!!
২ দিন পর মায়ের কথা মতো সালেয়ার সাথে দেখা করতে গেলাম।বালিকা তো অাপন মনে টিভিতে নাটক দেখতেছে......স্টার জলশা নয় বাংলাভিশনে বাংলা নাটক দেখতেছে। রহমত অালীর বউকে অান্টি হিসেবে সালাম টালাম দিয়ে সালেয়ার সাথে অাকান্তে টুকটাক অালাপ করতে অাসলাম......
-কেমন অাছো????(অামি)
- এইতো ভালো.......তুমি???(সালেয়া)
- বাইচ্চা অাছি.......!!!
- মরার ইচ্ছা নাকি খুব???
- না না......মেয়েদের অত্যাচারে মরতে পারি.....বল!!!
- তুমি মনে হয় ধোঁয়া তুলসিগাছ.......তুমিও তো অাগে এমনই ছিলা....হুমম!!!!
এহেন কথা শুইনা অামার গলা গেল শুকাইয়া।তারপর বালিকারে কহিলাম, " পানি.... পানি!!!" বালিকা এক দৌড়ে পানি নিয়া অাইসা নিজ হাতেই অামাকে খাইয়ে দিল।তখন মনে হলো যেন পানি নয় শরবত খাচ্ছি।কিন্তু নামডার কথা মনে হইলেই শরবত অাবার নোনতা পানি হইয়া যায়।খাওয়া শেষ হলে বললাম.....
- অামার সাথে তোমার বিয়ের কথা হচ্ছে..... তুমি কি জান???
- হুমম......!!!(নিচু হয়ে বলল)
- অামি তো বদ ছেলে.....অনেক মেয়েকে এটা,ওটা, সেটা বলছি...... তারপরেও তুমি অামার সাথে বিয়েতে রাজি হইলা ক্যান??
- তুমি মেয়েদের সাথে তো শুধু ফাজলামো,বাদরামোই করছ...... অন্যকিছু তো করোনাই।তার চেয়ে বড় কথা হলো তুমি এখন ওইসব করোনা।তাছাড়া তুৃমি স্বনির্ভর।
-অাচ্ছা অারেকটা কথা....তোমার অাব্বা কি দেখে অামার সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি হলো???
-কি অাবার......তুমি সরকারী চাকুরীজীবী!!!
ওহহ......তখন মনে মনে কহিলাম
ডিয়ার হবু শ্বশুর মাশাই,
মেয়ের জন্য সরকারী চাকুরীজীবী পাত্র না খুঁজে মেয়েকে একটা সরকারী চাকরী পাইয়ে দিন তখন দেখবেন কত ধানে কত চাল!!! .... যদি পায় তাহলে অামার পিছনে অার ঘোরন লাগবো নাহ।
এরপর বুকফাটা কষ্ট নিয়ে প্রশ্ন করলাম," তাইলে তোমার অাব্বা অামার ব্যাক্তিত্বকে তোমার সাথে বিয়া দিতে চায়..... অামার নিজের সাথে না???
- অারে একটু অাস্তে কথা বলো.......!!!
- কেন???
- তোমার ব্যাক্তিত্বের সাথে বিয়া হইলেই তো তোমার সাথেই বিয়া হবে!!!
অামি অন্যদিকে মুখ করে বল্লাম," সবাই তো অামার ব্যাক্তিত্বকে ভালোবাসে কিন্তু অামাকে কয়জন ভালোবাসে???
তিনি উত্তর দিলেন, " একজন।"
- অাচ্ছা..... তোমার সাথে ছোটতে যখন অামি পড়তাম তখন তুমি অামার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতা ক্যান??? তারপর এখানে ওখানে দেখা হতো সেখানেও ওই একই ঘটনা???
- অাচ্ছা.....সবাইকেই তো এটা -ওটা, কার চুল সুন্দর, কার ফিগার জোশ,কার হাইট কতো এগুলো তো খুব বলো.....কিন্তু অামাকে তো কোনদিন কিচ্ছু বলনাই!!!
-অারে তুমি তো ডিফরেন্ট.... বুঝোনাই।
- ক্যান অামি কি দেখতে ততোটা খারাপ???
- অারে না...... সে মিথ্যা কথা কি অাামি বলতে পারি???
-তাহলে.......???
-অাচ্ছা তুমি কি অামাকে ভালোবাসতে.....???
এতোক্ষন নিচু হয়ে কথাগুলো বললেও ভালোবাসার কথা বলতে সে অামার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইল। চলে গেল অামার সামনে থেকে। অাবার অাসলো একটা মোবাইল ফোন নিয়ে।মোবাইলটা অামার হাতে ধরে দিল।ওয়ালপেপারের ছবিটা দেখে মনের ভিতর টুং করে উঠল...এটা অামি....অামার ৩ বছর অাগেকার ছবি।বিষ্ময়ে তার দিকে তাকালাম।সে গ্যালারীতে যেতে বলল.........দেখলাম সেখানের অামার নামেই একটা ফোলডার।মোট ১৬৭ টা ছবি...... সবগুলোই অামার।অামার ফোনেও তো এতগুলো ছবি নেই। দেখলাম অামার চার বছর অাগেকার ছবিও অাছে সেগুলোও অামার ফোনে নেই!!! অানবিলিভেবল...... দেখালাম " কাহোনা পেয়ার হে " গানে অামার অার ওর ছবি লাগিয়ে দিয়ে মাঝখানে লাভ চিহ্ন..... অার গানের মাঝখানে লেখা ওঠে তুমি কি অামার হবে প্লিজ???
অার কতো ছবি অামি অার সে, সে অার অামি, অামি অার সে...ওহহহ।
নিজের চোখকে নিয়েই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এত্তো ভালোবাসে....তাই তার নিখুঁত.ভালোবাসা নিয়ে অার কিছু বললাম না। শুধুই ভাবলাম যে মেয়ে অামাকে নীরবে নীরবে এত্তো ভালোবাসে তাকে অামি কেমনে ফেলতে পারি??? তার নাম সকিনা, জরিনা, মর্জিনা,সালেয়া,কাউয়া, বাঘ, বিলাই যাইহোক না ক্যান বিয়া অামি তাকেই করব!!!নির্ধিদ্বায় বিয়া করা যায়!!!
কিছুক্ষন ভাবাভাবির পর অামি তার দিকে একটু হেসে বললাম," তোমার অাব্বা অাসলে বিকেলে অামাদের বাড়িতে একটু অারজেন্ট যেতে বলবা....অাচ্ছা।"
তিনি মানে অামার ভবিষ্যত অর্ধাঙ্গিনী স্বউত্তরে একটু হেসে বলল," অবশ্যই যেতে বলব!!"