খবর পাতায় এবং টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদে পরকীয়ার সম্পর্কে প্রায় সময় বিভিন্ন খবর শুনে থাকি। পরকিয়ার জেরে খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে পরকীয়া কি এবং নারী পুরুষ পরকিয়ায় কিভাবে জড়িয়ে পরে? আর এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?উত্তরঃ পরকিয়া হচ্ছে একটি ব্যধি। এটি একটি পরিবারের সাজানো সংসার ধ্বংস করে দেয় এবং ভয়ঙ্কর অপরাধের জন্ম দেয়। পারিবারিক জীবনে অশান্তি তৈরি করে। বিবাহের পরে ভিন্ন স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া ও তাঁর সাথে প্রেম করা ও অসামাজিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়াকেই পরকিয়া বলে।
পরকিয়া সম্পর্ক কয়েকটি কারনে হয়ে থাকে। তাঁর মধ্যে নিচের কারণ গুলো উল্লেখ্য হতে পারেঃ-
স্বামী স্ত্রীর চাহিদাকে গুরুত্ব না দেওয়া। যেমন সময়, ভালো আচরণ ও শারীরিক সম্পর্কে প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া।স্ত্রী স্বামী’র চাওয়া পাওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। তাঁর মধ্যে হতে পারে স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার না করা, শারীরিক সম্পর্কে অস্বীকৃতি সহ স্বামীর যৌন কার্যে সাড়া না দেওয়া।এসব কারণ বিবাহিত নারী পরপুরুষ ও বিবাহিত পুরুষ পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কেননা, একজন নারী কিংবা পুরুষ তাঁর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দিয়ে তাঁর প্রত্যাশা বা মনের চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে তাঁর বিপরীত কাউকে খুঁজে নেয়।
যেমন, জামাল মিয়া বিয়ে করেছেন কয়েক বছর আগে। কর্ম ব্যস্ততা কিংবা স্ত্রী থেকে দূরে থাকার কারনে তিনি স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী সময় দিতে পারেন না বলে তাঁর স্ত্রী একাকিত্ব বোধ করেন। ফলে তিনি গল্প গুজব করতে পারেন না। মনের কথা বা চিন্তা-ভাবনা স্বামীর সাথে শেয়ার করতে পারেন না। সুবিধাবাদী কিংবা ফাও খাওয়া পুরুষেরা এসুযোগটাকে কাজে লাগায়। তাঁরা এরূপ নারীদেরকে টার্গেট প্রথম নানান কলা-কৌশলে তাঁদের মনে জায়গা করে নেয়। একটি সময় এটি প্রেমে পরিণত হয় এবং এটি যৌন সম্পর্কে দিকেও গড়ায়।
এমনটি লক্ষ্য করা যায় বিবাহিত পুরুষদের মধ্যেও। তারাও স্ত্রীর অবহেলার স্বীকার হয়ে পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। কিংবা একটি নারী তাঁর সাথে উত্তম আচরণ করেছে, তাঁর কাজে উৎসাহিত ও উদ্দীপনা যোগিয়েছে, এতে করে ঐ পুরুষ ঐ নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে যায় যায়। এরপরে চলতে থাকে প্রেম, এমন কি যৌন সম্পর্কের দিকেও তা গড়াতে পারে। এসব বিষয় গুলো নারী পুরুষদের মনে নেশার মতো কাজ করে। তাঁরা কি করছে সেসব দিকে খেয়াল থাকে না। এসব থেকে তাঁরা সহজে বের হতে পারে না। অপর দিকে নিজেদেরকে একান্ত করে কাছে পাবার প্রবল আশঙ্কা মনে জাগে। তাঁদের মনের প্রবল আকঙ্খার পূরণের বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর ব্যক্তি বর্গকে হত্যাও করে ফেলে।
একারণেই ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি অত্যান্ত কঠিন। ইসলামে হত্যার পরেই ব্যভিচারের শাস্তির অবস্থান। ইসলামে অবিবাহিত নারী পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তি বেত্রাঘাত হলেও যদি কোন বিবাহিত নারী কিংবা পুরুষ বিবাহ করা পরেও অবৈধ প্রণয় বা সম্পর্ক গড়ে তুলে তাহলে তাঁর শাস্তি হচ্ছে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া।
পরকীয়া থেকে কিভাবে স্বামীকে স্ত্রীকে বাঁচাবে এবং স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে বিষাক্ত পরকীয়া থেকে বা পরনারী আসক্ত থেকে রক্ষা করবে সে রকম কিছু আর্টিকেলের তালিকা নিচে দেওয়া হলো। পড়ে নিন।
০১। স্ত্রীকে পরকিয়া ভালোবাসা থেকে দূরে রাখার উপায়
স্ত্রীকে কিভাবে পরকীয়া প্রেম বা পরপুরুষের আসক্ত থেকে রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে জানুন। স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেম থেকে বাচাতে স্টেপ বাই স্টেপ উপায় গুলো শিখুন এবং প্রয়োগ করুণ। বিস্তারিত পড়ুন>>
০২। স্বামীকে পরকিয়া প্রেম থেকে দূরে রাখার উপায়
বিষাক্ত পরকীয়া প্রেম থেকে বা পরনারী আসক্তি থেকে আপনার স্বামীকে রক্ষা করুণ। জেনে নিন স্বামীকে পরনারীর আসক্তি থেকে বাঁচানোর উপায় ও কলা-কৌশল। স্বামীকে পরকীয়া প্রেমের আসক্তি থেকে বাচাতে জেনে নিন স্টেপ বাই স্টেপ পদ্ধতি।
স্বামীকে পরকীয়া থেকে বাঁচানোর কৌশল নারীদের শিক্ষা দেয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি হয় বিভন্ন পত্র পত্রিকায় । কিন্তু স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচানোর কৌশল পুরুষদের জানা দরকার সে বিষয়ে কেউ কথায় বলে না । যেন এই কৌশল সেখার কোন দরকারই নেই পুরুষদের !
স্ত্রী যাতে পরকীয়ায় আসক্ত না থাকে এবং সে যেন আবার পবিত্র দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসে শুধু আপনি ছাড়া আর কারও সংস্পর্শে না যায় দৈহিক ও মানসিক চাহিদার তাগিদে তা খেয়াল করুন এবং এমন স্ত্রীকে এই দশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করুন । চলুন দেখি স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচানোর কৌশল গুলো কি কি?
১) স্ত্রীকে সময় দিনঃ অধিকাংশ পুরুষ নিজের চাকুরী, ক্যারিয়ার বা ব্যবসা নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পরে যে স্ত্রীকে একটু সময় দেয়ার মতো সময় তার হাতে নেই । সারাদিন বাসার বাইরে থাকার পর রাতে একটু বাসায় ফেরার পর দেখা যায় স্ত্রী- সন্তানকে সময় দেয়া কি স্ত্রী সন্তান একটু কাছে ঘেঁষে একটু সময় একটু ভালোবাসা সুলভ আচরণ প্রত্যাশা করলে সেটাকে বাড়াবাড়ি ভেবে বসেন । স্ত্রীর আঁচলের নিচে সময় কাটানোর সময় তার হাতে নেই । এমনটাও অনেকে সদর্পে বলে থাকেন । অকারনে স্ত্রীর সতীত্ব নিয়ে সন্দেহ করবেন না ।
২) স্ত্রীকে বেশী বেশী ভালবাসুনঃ স্ত্রীকে অনেক অনেক বেশী ভালবাসুন । শুধু মনে মনে এমনভাবে ভালোবেসে যাবেন না যে স্ত্রী বুঝেই না যে আপনি তাকে ভালোবাসেন । আপনার আচরণ, কথা সব কিছুতেই যেন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে । কারণ অনেক স্বামী এমন আছে যে মুখে বলে ভালোবাসে স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসে; কিন্তু কাজের সময় দেকাহ যায় যে স্ত্রীকে ধুমকি-ধামকির মধ্যে রাখে, বিনা কারণে তাকে বকা-ঝকা করে, তার কথার কোন মূল্যায়ন করে না । আবার অনেক স্বামী এমন আছে যে স্ত্রীকে শুধু মনে মনে বোকার মতোই ভালোবেসে গেল । এতোটাই লাজুক ও অন্তর্মুখী স্বভাবের যে স্ত্রী বুঝেই না তরা স্বামী আদৌ তাকে ভালোবাসে কি না? কাজেই স্ত্রীকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসুন এবং সেটা স্ত্রীকে বুঝার সুযোগ করে দিন ।
৩) তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুনঃ যদি আপনি বুঝতে পারেন কোন ছেলে হোক সেটা আপনার বন্ধু বা প্রতিবেশী আপানর স্ত্রী প্রতি দুর্বল বা আপনার স্ত্রী তার প্রতি দুর্বল তাহলে এটা চেপে না রেখে স্ত্রীর সাথে খোলামেলা কথা বলুন । এবং বাজে কিছু যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে তাকে সাবধান করে দিন । বা যদি স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে যায়ও এ নিয়ে তার সাথে খোলামেলা কথা বলুন । তাকে দ্রুত ফেরান । হোক সেটা মৃদু শাসন বা ভালোবাসার মাধ্যমে ।
৪) স্ত্রীর চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়ন করুনঃ প্রেমিকা হিসাবে একটা মেয়ে একজন প্রেমিকের কাছে যেমন মূল্যায়ন পায় । স্ত্রী হিসাবে কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে অধিকাংশ স্ত্রী সেরকম মূল্যায়ন এবং মর্যাদা পায় না । এমনকি বিয়ের আগে যে পুরুষ প্রেমিক ছিল তার সাথে বিয়ের পর সেই পুরুষও কিন্তু স্বামী হিসাবে পূর্বের প্রেমিকা যে এখন স্ত্রী তাকে সেভাবে মূল্যায়ন বা মর্যাদা করে না । তাই তো প্রমের বিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সেভাবে টিকে না । হয়তো পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতা বা বিয়ের পরে বদলে যাওয়া আচরণের কারণে । তাই স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচাতেই শুধু না সুন্দর, সুষ্ঠু দাম্পত্য জীবন এবং শান্তিপূর্ণ সংসার পেতে স্ত্রীর চাহিদার মূল্যায়ন করুন ।
৫) স্ত্রীর গতিবিধির উপর খেয়াল রাখুনঃ স্ত্রীর গতিবিধির উপর খেয়াল রাখবেন মানে এমন না যে সারাক্ষণ তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করবেন । তার সব কিছুতে সন্দেহের দৃষ্টি ছুঁড়বেন , বরং তা না করে স্ত্রী কোথায় যায়? কার সাথে মেশে? আপনার বাসায় কে আসে? এসব বিষয়ে কৌশলে খবর রাখুন তাহলে দেখবেন স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ানোর আগেই তাকে সে জঘন্য বিষয় থেকে ফেরাতে পারবেন ।
৬) তাকে শালীনতার শিক্ষা দিনঃ অনেক স্বামীই আছে দেখা যায় বিয়ের পর নতুন বউকে অকারণে যখন তখন নিজের বন্ধু, কাজিন যেমন মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, নিজের ভাই এদের কাছাকাছি ঠেলে দেয় । স্ত্রীর আপত্তি থাকার সত্ত্বেও যখন তখন নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাসায় আশার পরিবেশ তৈরি করে দেয় । এমনকি নিজের অনুপস্তিতিতেও । প্রথম প্রথম অনেক স্বামী ও তার পরিবার একটু মেশার জন্যই পীড়াপীড়ি করে । ভাবে এটুকু মেশায় কি এমন ক্ষতি । বরং বউ সোশ্যাল হয়ে উঠবে । যেসব শালীন মেয়ে ধর্মীয় বা স্বভাবগত কারণেই স্বামীর এমন বন্ধু ও কাজিনের সাথে মিশতে চায়না তাদেরকে কোন কোন স্বামী বা তার পরিবার আন কালচারড, আন সোশ্যাল বলে আখ্যায়িত করে । স্ত্রীকে নিজের বন্ধু, কাজিন, প্রতিবেশী পুরুষ, তার এক্স বয়ফ্রেন্ড (যদি বিয়ের আগে তার কোন প্রেমিক থেকে থাকে) থেকে দূরে রাখুন । আর তাদের সামনে যদি বিশেষ প্রয়োজনে যেতেও হয় তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই শালীনভাবে উপস্থাপিত হতে সহায়তা করুন । কারণ সাধারণত স্ত্রীদের পরকীয়া দূরের, রাস্তার কারও সাথে হয় না । উপরে উল্লেখিত শ্রেণীর পুরুষদের সাথে হবার সম্ভাবনাই বেশী ।
৭) স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ করুনঃ অনেকেই হয়তো এমন কথায় হেসে উঠবেন স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ করুন । এ আবার কি কথা? নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করার সময়ই তো স্ত্রীর চাহিদাও পূরণ হবার কথা । কিন্তু দিব্য দৃষ্টিতে তাই মনে হলেও বিষয়টার সমাধান কিন্তু এমন সজা-সাপটা কথায় দেয়া সম্ভব না । বাংলাদেশী নারীরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির তাই নিজের চাহিদা মিটে কি না? বা মিটাতে চাইলেও সেটা কিভাবে মেটাবে স্বামী সেটা তারা হয়তো লজ্জায় বলতে চায়না । স্বামী যখন যেচে নিজের চাহিদা মিটাতে স্ত্রীর কাছে আসে তখনই কেবল স্ত্রী চাহিদা মেটানোর আশা রাখে । নিজে থেকে খুব কম স্ত্রী স্বামীর প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায় । আর যেহেতু নারী নিজের চাহিদা সেভাবে দেকাহ্য না তাই স্বামীও সেভাবে কোন সিস্টেম ফলো না করে স্ত্রীর দেহ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের চাহিদা পূরণ করে নেয় । সে সময় স্ত্রীর চাহিদা পূরণে অপূর্ণতা থাকলো কি না? বা স্ত্রীর চাহিদা পূরণ না হলেও তার চাহিদা কিভাবে পূরণ করা সম্ভব এই দিক টা বিবেচনায় নেয় না । কাজেই নিজের যৌন চাহিদা পূরণের সময় স্ত্রীর যৌন চাহিদাও সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করার চেষ্টা করুন । না করতে পারলেও আপনি যে চেষ্টা করছেন আপনি যে তাকে অনেক ভালোবাসেন সেটা স্ত্রীকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিন । দেখবেন দৈহিক চাহিদার অপূর্ণতা থাকলেও আপনার অকৃতিম ভালোবাসার কারণেই পরকীয়ায় আসক্ত হবে না বা আসক্ত হলেও ফিরে আসবে আপনার ভালোবাসা, সন্তান ও সংসারের প্রতি খেয়াল রেখে ।
পরিশেষে বলতে চাই যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক প্রেম-ভালবাসা ও বোঝা পড়ার সম্পর্ক । কাজেই বিয়ের মাধ্যমে বন্ধনে আটকে গেছে বলেই যে এটা কাঁঠালের আঠার মতো আটকে রাখবে ভালোবাসার বন্ধন সারাক্ষণ এমন ভাবা বোকামি । একবার বিয়ে করেই এই সম্পর্ককে শুধু ছেড়ে দিলেই হবে স্রোতের দিকে । বরং একে লালন করতে হবে উভয়কেই ।