আধুনিক সমাজব্যবস্থায় বিয়ের মতো বিষয়টিও বিশেষজ্ঞদের দুশ্চিন্তার উদ্রেক করছে। কারণটি হলো বিচ্ছেদ। ডিভোর্সের হার যেভাবে বেড়েছে, তাতে করে বিয়ে ব্যবস্থা কতটা সফলতা পেয়েছে তা গবেষণার বিষয়। আমেরিকার এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ৪০-৫০ শতাংশ দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে।
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশার প্রেম-ভালোবাসার নানা দিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তিনি বিয়ের স্থায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কের যোগসূত্র বের করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বিয়ের আগে যদি ২ বছর সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়া যায় তবে সুখী ও দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের নিশ্চয়তা মিলতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা কথা উল্লেখ করে ফিশার বলেন, বহু মানুষ আছেন যারা প্রেম করছেন এবং এক সঙ্গে থাকছেন। তারা এখনো বিয়ে করেননি। কিন্তু এদের ৬৭ শতাংশ বিয়ের পর ডিভোর্সের ভয়ে অস্থির থাকেন। এ ভয় কেবল অর্থনৈতিক বা আইনগত বিষয় নিয়ে নয়, ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার ভয়ও কাজ করে।
মজার বিষয় হলো, বিচ্ছেদের এই ভয় পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর বিয়ের পথ খুঁজে দেয়। বিয়ের আগে দুজন দুজনকে যত বেশি জানবেন, দাম্পত্য জীবন তত বেশি সুখকর হবে।
কারো প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কের যে অংশটি সিদ্ধান্তগ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নের যৌক্তিক বিষয় নিয়ে কাজ করে, তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ভালোবাসার প্রাথমিক স্তরে মস্তিষ্কের পুরনো অংশগুলো কার্যকর হয়ে ওঠে। আকাঙ্ক্ষা, আবেশ এবং উদ্দীপনা চরমে পৌঁছে। এ সময়টাতে প্রিয়জন সম্পর্কে অনুভূতিগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যা করা যায় না। ফলে তার মাঝে অসঙ্গতি থাকলেও তা চোখে পড়ে না। তাই বিয়ের আগে সম্পর্কটা যদি বেশ কিছু দিন চালিয়ে নেওয়া যায়, তবে সিদ্ধান্তগ্রহণ ও যুক্তিবোধ কাজে লাগানোর সুযোগ মেলে। তখন মানুষটি সঠিক সঙ্গী-সঙ্গিনী কিনা তা বুঝতে অনেক বেশি সুবিধা হয়।
বাস্তবিক জীবনে সঙ্গী-সঙ্গিনীর সম্পর্কে ভালো ধারণা সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট সময় ব্যয় করা উচিত। এর জন্যে ফিশার সবাইকে অন্তত ২ বছর অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন। এই সময়ের মধ্যে একে অপর সম্পর্কে যুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে নিজেকে সামলে নেওয়ার প্রক্রিয়াটিও রপ্ত হয়ে উঠবে।
ফিশার বলেন, সম্পর্কের যেকোনো স্তরে মনে হতে পারে, সঠিক মানুষটি খুঁজে পাওয়া গেছে। এই মানুষটিকে বিয়ে করা যেতে পারে। কিন্তু অন্তত ২ বছর সময় দেওয়ার পর একই উপলব্ধি পেলে নিশ্চিন্তে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারেন। সামান্য সময় খরচের মাধ্যমে দুজনের জীবন সামলে ওঠা আরো সহজ ও সুখকর হয়ে উঠবে।