ভালবাসার গল্প ভয়ে আমার কপাল ঘামছে, নাক ঘামছে।

Related image
আজ আমার বাসর। ভয়ে আমার কপাল ঘামছে, নাক ঘামছে। মেক-আপ উঠে যাচ্ছে কিনা আল্লাহ ই জানেন। ভয়ের কারন আজ আমার পিরিয়ড চলছে। যে লোকটার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তাকে আমার একদম ই পছন্দ হয়নি, আমার চেয়ে গুনে গুনে বিশ বছরের বড়। ভুড়িওয়ালা, দাত ফাকওয়ালা এই লোকটাকেই আমার মেনে নিতে হবে। বাবা, মায়ের পছন্দ বলে কথা, না মানলে কতটা মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হত সেটা সদ্য বিয়ের কথা চলা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ে ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা। অনার্স প্রথম বর্ষে পা রাখার সাথে সাথেই বিয়ের পিড়িতে বসত হল আমাকে। ছেলে প্রবাসী, প্রচুর টাকা পয়সার মালিক।
আনিস ঘরে ঢুকেই আমার উপর জোর জবরদস্তি শুরু করে দিল। সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে ক্লান্ত ছিলাম। ক্লান্তি আর শারীরিক অক্ষমতার কারনে আমি তার সাথে পেরে উঠলাম না। মনে হচ্ছিল একটা হিংস্র পশু আমাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। নিজের উপর নিজের ই ঘৃণা হচ্ছিল,ইচ্ছে হচ্ছিল নিজের মুখে নিজেই থু দি। সকালবেলা বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না, সারা গায়ে প্রচন্ড ব্যথা ছিল। নতুন বউ আর কতক্ষন শুয়ে থাকবে এমন কর্কশ কন্ঠে আমি তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে ঘর ঝাড়ু দিলাম, খাবার বেড়ে সবাইকে খাইয়ে দিলাম। কোন রকম খাবার গিলে এসে মরার মত পড়ে ঘুমালাম। ঘুম ভাঙল কারো শক্ত হাতের লোভাতুর স্পর্শে। আবারো আনিস অত্যাচার শুরু করল। আমি তো এমন কাউকে চাইনি! আমি তো চেয়েছিলাম - কেউ একজন আমার হাত ধরে চুমু খেয়ে বলুক শরীর খারাপ মায়া? আমি তো চেয়েছিলাম কেউ মাঝ রাতে ঘুম থেকে টেনে তুলে বলুক - আর ঘুমানো লাগবেনা, চল জ্যোৎস্না দেখি গিয়ে। দুনিয়ার এক নিষ্ঠুর নিয়ম যারা ভালবাসার কাঙাল তাদের কপালে ভালবাসা জোটেনা।
সবাই টেবিলে খাচ্ছে, বেলকনিতে বসে নিরবে কাঁদছি, এ এক অপমানের কান্না, এ এক স্বপ্ন ভঙ্গের কান্না। কোন ছেলে যদি একটা মেয়ের স্বপ্নগুলোকে ভালবাসতে জানে তাহলে মেয়েটা নিজেকে ঐ ছেলের পায়ের পাপশ হতেও দুবার ভাবেনা সেটা ছেলেরা কোনদিন জানতে পারেনা,সেই জন্যই চারিদিকে ভালবাসা নেই ভালবাসা নেই বলে মানুষ বুক চাপড়ে মরে। একটাবারের জন্য কেউ আমাকে খেতে ডাকেনি, মাকে ফোন দিব কি দিব না এটা ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা হয়ে আসল। আর মাকে ফোন দিলেই বা কী হবে! সে তো তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ছেলের কাছে নিজের মেয়েকে তুলে দিয়েছে, যারা অনেক টাকা, বিত্তশালী। বিরাট অট্টালিকা, মা চেয়েছিল মেয়ে সুখে থাকুক তাই তারা মেয়েকে তার দ্বিগুণ বয়সী ছেলের হাতে তুলে দিয়েছে ছেলের আর্থিক অবস্থা দেখে। বাবা মা মেয়ের সুখ খুঁজে মরে রাতদিন অথচ তারা অনেক সময় জানতেও পারেনা মেয়ের সুখটা কোথায়, এ দেশের বাবা মায়েরা সন্তানের দিকে কোমল ভাবে তাকিয়ে বলেনা - তোমার স্বপ্ন কী? তারা জিজ্ঞেস করেনা- তুমি কেমন সঙ্গী চাও। আর গোলযোগ বাধে ঠিক ঐ একটা কারনেই।
সন্ধ্যা বাড়ছে সাথে আমার ভয়ও বাড়ছে। রাতে কোন রকম খেয়ে শুয়ে পড়লাম। না আনিস সেই রাতে আর বাসায় ফেরেনি, কি যেন এক কাজে আটকে গেছে। মানুষ যে খুশিতে কাঁদতে পারে সেটা সেদিন ই প্রথম বুঝেছিলাম আমি। এভাবে দিন যেতে লাগল, আমি আনিসেরর ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এখন। শাশুড়ি, জা সবাই একটা দূরত্ব নিয়ে থাকে সবসময়। আমি মেশার আপ্রান চেষ্টা করেও মিশতে পারিনা। ঘরের প্রায় সব কাজ আমার ই করতে হয়, সারাদিন কাজ শেষে রাতে আনিসের পাশবিক পশুত্বের কাছে নিজেকে সপে দিতে হয়। আমি চেয়েছিলাম আমার বরটা প্রতি রাতে বাসায় ফেরার পর আমাকে বলবে - মায়া চোখ বোজ তো, আমি চোখ বুজে হাত পাতলেই সে চকলেট তুলে দিবে, কখনো একটা বাসি গোলাপ কিংবা বকুলের মালা। আর আমার সাথে হলটা কী!।
ইদানীং আনিসকে কে যেন ফোন দেয়, ফোন আসার সাথে সাথে সে পাগলের মত ছুটে ছাদে চলে যায়, আমি একদিন জিজ্ঞেস করাতে অনেক নীতিকথা শুনিয়েছল সে, অথচ আমি ফেসবুকে যেতে পারতাম না। সে আমাকে প্রচণ্ড সন্দেহ করত, আসলে এই পৃথিবীতে যার ভিতরে পাপ বেশি সেই সকলকে তার মত পাপী ভাবে, মোবাইলে অনেক মেয়ের ছবি দেখতাম, জিজ্ঞেস করলে বলত ফ্রেন্ডের ওয়াইফের ছবি, খালাতো বোন হ্যান ত্যান। চুপচাপ মেনে নিয়েছিলাম। একদিন তাকে পাঠানো কিছু মেয়ের মেসেজ দেখে ফেলি সে কান্নাকাটি করে মাফ চায়, আসলে বয়স কম হওয়ায় ইমোশনটা বেশি কাজ করত, তাই তাকে মাফ করে দিতাম বার বার।এর মাঝে আমি প্রেগন্যান্ট হলাম, আনিসও বিদেশ চলে গেল।
ভেবেছিলাম বিদেশ চলে যাবার পর সে আমাকে ফিল করতে পারবে, আমাকে ভালবাসবে। অথচ সে যেমন তেমন ই ছিল। এর মাঝে আমার সাথে সামান্যতে তার মা, বোন দুর্বব্যবহার করত, টুকটাক হাত খরচের টাকা থাকত না আমার কাছে। সে ফোন দিয়েই বলত রুমের দরজা লক কর আমি ভিডিও কল দিচ্ছি, বাধ্য হয়েই আমাকে তাই করতে হত। অথচ আমার একটা সমস্যার কথা,আমার কষ্টের কথা সে শুনত না। অন্যদিকে দুই জাও ছিল প্রেগন্যান্ট, তাদের স্বামীরা তাদের খুব যত্ন নিতে। আমি কাঁদতাম শুধু। কত রাত গিয়েছে কষ্টের কথা কাউকে বলতে না পেরে সারা রাত বালিশ ভিজিয়েছি কেঁদে। মাকে বললে সে বলত- মেয়ে মানুষদের এটুকু সহ্য করে থাকতেই হয়, সব ঠিক হয়ে যাবে। মা সব বুঝত বুঝেও অবুঝ থাকত কেননা তারা তাদের করা ভুলটা স্বীকার করতে চাইত না।
আমার মেয়ে হবার পর সে দেশে এসেছিল, একুশ দিনের মেয়েকে দোলনায় শুয়ে দিয়ে সে আবার তার পুরুষত্ব খাটিয়েছিল আমার উপর। সেদিন পায়ে ধরে বলেছিলাম আমার শরীর ভাল না আনিস আমাকে মাফ কর তারপর সে রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। এর মাঝে দেশের এক মেয়ের সাথে তার অবৈধ সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে যায়, তারপর আর থাকিনি ওর সাথে। গত একটা বছর হল আমরা আলাদা, মাঝে মাঝে আমার মায়ের কাছে ফোন দেয়, অথচ মেয়েটার কোন খোজ খবর নেয়না সে। কোন খরচও দেয়না। বাবা মুখ বুজে সহ্য করছেন কেননা ভুলটা যে তার ই, পাপমোচন করছেন বাবা নিভৃতে।
আমি ঠিক করে রেখেছি মেয়েটার বিয়ে দিব কোন এক গ্রাম্য স্কুল শিক্ষকের সাথে, যার ঘরে খাবারের অভাব থাকবে কিন্তু মূল্যবোধের অভাব থাকবেনা। যে কিনা বাসর রাতে আমার মেয়ের যৌবনের গন্ধে পাগলা কুকুর হবেনা বরং তার কপালে চুমু খেয়ে বলবে ভালবাসি। বিত্তের চেয়ে সুখ বড়, আর সুখ আপেক্ষিক এক বিষয়। ফুটপাথেও সুখ থাকে, বেদেনীর তাবুতেও সুখ থাকে। থালার কোনার শুটকো কাচামরিচেও সুখ থাকে,ভালবাসা থাকে। বিশাল অট্রলিকায়,বিশাল ডাইনিং টেবিলে সবসময় মানুষ বসেনা কিছু পশুতুল্য অমানুষও বসে। জানিনা সেই গ্রাম্য স্কুল শিক্ষক কিংবা ছা-পোষা কর্মাচারী মানুষ হবে কিনা তবে সাদামাটা জীবন পার করা মানুষগুলো খুব একটা খারাপ হয়না। আর মেয়ের ইচ্ছের গাছে প্রতিদিন পানি দিব, ঘন বর্ষায় মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলব - বল মা তোর স্বপ্ন কী? তুই কেমন জীবন সঙ্গিনী চাস? মেয়ে ভুল করতে চাইলে শুধরে দিব কিন্তু জোর করব না, আমি জানি অপরাধবোধ কত ভয়ানক। বাবা আর মাকে দেখে তা প্রতিটা দিনই যে শিখছি।
নবীনতর পূর্বতন