শত শত বছর আগে থেকে রান্নার কাজে আমরা
হলুদ ব্যবহার করি। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে এখন মানুষ বাটা হলুদের
পরিবর্তে বাজারে পাওয়া যায় এমন প্যাকেট জাত গুঁড়া হলুদ রান্নার কাজে
ব্যবহার করছে। এই মশলার উপকরণটি আমাদের দক্ষিন এশিয়ার সংস্কৃতি, ধারা,
অনুষ্ঠান-পর্বের সাথে আত্মিক ভাবে জড়িত। আমাদের বিবাহিক অনুষ্ঠান “গায়ে
হলুদ “ শুরু হয় বর-কনের গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর মধ্য দিয়ে। হলুদ বলতে গেলে একটি
ন্যাচারাল কস্মেটিক্স। এটি গায়ের রঙ যেমন উজ্জ্বল করে, তার সাথে বিভিন্ন
চর্ম রোগের সমস্যা যেমন অ্যালার্জি, ব্রণ, র্যাশ দূর করে। তাছাড়া বয়সগত
রোগ আলজেইমার, ডায়বেটিস, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি রোগ থেকে উপশম পেতে সাহায্য
করে। এটি যেহেতু দক্ষিন এশিয়া তে সর্বাধিক পাওয়া যায় তাই একে “ইন্ডিয়ান
জাফরান” বলা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের (Skin) যত্নে হলুদের ব্যবহার।
ত্বকের যত্নে হলুদের ব্যবহার
১। ব্রণ দূর করতেঃ
হলুদের মধ্যে এন্টিসেপ্টিক এবং
এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে যেটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি শুধু
ব্রণই দূর করে না, তার সাথে ব্রণের দাগ এবং লোমকূপ থেকে তেল বের হওয়ার
পরিমাণও কমিয়ে দেয়। কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন গুঁড়া, লেবুর রস মিশিয়ে একটি
মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে
মুখ ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া ব্রণের উপর কাঁচা হলুদ বাটা এবং পানি মিশিয়ে দিয়ে
১৫ মিনিটের জন্য রাখুন। ব্রণ তাড়াতাড়ি চলে যাবে।
২। তৈলাক্ত ত্বকের জন্যঃ
হলুদ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অনেক ভালো। আগেই
বলেছি লোমকূপের তেল কমাতে হলুদ অনেক ভালো কাজ করে। তাছাড়া চন্দন গুঁড়া
এস্ট্রিঞ্জেন্ট এর কাজ করে এবং কমলার রস ত্বকের দাগ দূর করে, ত্বক কে
পরিষ্কার রাখে। ৩/৪ চিমটি হলুদের গুঁড়া, ১ চামচ চন্দন গুঁড়া এবং ৪/৫ চামচ
কমলার রস(Orange juice) মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে মুখে লাগান। তৈলাক্ত ত্বকের
যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
৩। শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ
যদি আপনার ত্বক শুষ্ক থাকে, ত্বক কে
উজ্জ্বল এবং লাবণ্যময়ী করতে চান, তাহলে কাঁচা হলুদ বাটা সামান্য, ১ টেবিল
চামচ অলিভ অয়েল, ২/৩ ফোঁটা লেবুর রস, একটা ডিমের সাদা অংশ, গোলাপ জল মিশিয়ে
প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। নিজেই লক্ষ্য করবেন ত্বকের পজিটিভ পরিবর্তন।
তাছাড়া শরীরে যেসব জায়গা শুষ্ক সেসব জায়গায়ও লাগাতে পারেন।
৪। বলিরেখা দূর করতেঃ
হলুদ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য
করে। ২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া, টমেটো রস(Tomato juice), কাঁচা
দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর কুসুম
গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফাইন লাইন্স এবং ঝুলে পড়া ত্বক
কে স্বাভাবিক করতে, ত্বক কে ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
৫। চোখের নীচে কালো দাগ দূর করতেঃ
২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়ার সাথে মাখন মিশিয়ে
চোখের নীচে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
এটি চোখের নীচে বলিরেখা সহ কালো দাগও দূর করবে।
৬। বয়স ধরে রাখাঃ
১ দিন পর পর বেসন, কাঁচা হলুদ বাটা, টক দই
মিশিয়ে মুখ সহ সারা শরীরে লাগিয়ে রাখুন শুকানো না পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে
ঘড়ির কাটার উলটো দিকে স্ক্রাব করে মাসাজ করুন। এটি ত্বকের ময়লা পরিষ্কার
করার সাথে সাথে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে ।
৭। স্ট্রেচ মার্ক দূর করতেঃ
ত্বকের মোটা হয়ে যাওয়ার ফাটা দাগ,
প্রেগ্নেন্সির স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে বেসন, কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ঐ নিদিষ্টও
জায়গায় লাগালে ধীরে ধীরে দাগ কমতে শুরু করে।
৮। পোড়া ও কাঁটা জায়গায় হলুদের ব্যবহারঃ
কাঁচা হলুদ একটি এন্টিসেপ্টিক। তাই কাঁটা
এবং পোড়া জায়গায় হলুদ(Yellow) বাটার সাথে এলোভেরা মিশিয়ে দিলে অনেক উপকার
পাওয়া যায় । তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগের উপশম ঘটে।
৯। ত্বকের রোদে পোড়া দূর করতেঃ
সারাদিন বাইরে থাকে যারা, তাদের ত্বকের
পোড়া ভাব এবং পিগ্মেন্টেশন কমাতে হলুদ বাটা, শশার রস, মুলতানি মাটি, লেবুর
রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। ত্বকের
পোড়া ভাব কমে যাবে।
১০। ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতেঃ
প্রতিদিন ময়দা এবং কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে স্ক্রাব করলে, ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম ধীরে ধীরে কমে আসবে।
১১। পায়ের গোড়ালির ফাটা দাগ দূর করতেঃ
গোসলের যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদের সাথে,
নারিকেল তেল(Coconut oil) অথবা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে
পায়ের ফাটা দাগ কমবে, পায়ের ত্বক সুন্দর এবং নরম থাকবে।
১২। চর্ম রোগ থেকে মুক্তিঃ
যেকোনো চর্ম রোগের জন্য হলুদ অনেক উপকারী।
কাঁচা হলুদের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে শরীরে মাখলে একজিমা, অ্যালার্জি,
র্যাশ, চুলকানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৩। ত্বকের মরা কোষ দূর করতে হলুদঃ
২/৩ চিমটি হলুদ, চিনি এবং চালের গুঁড়া
মিশিয়ে মুখ স্ক্রাব করলে মুখের সব মরা কোষ দূর হবে। তাছাড়া শুষ্ক এবং কালো
ঠোঁট এর জন্য হলুদ গুঁড়া এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে স্ক্রাব করলে অনেক ভালো
ফলাফল পাওয়া যাবে। ঠোঁটের মরা কোষ থাকবে না এবং ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হবে।
১৪। ত্বক কে ফর্সা করতেঃ
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে
কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে, ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়। তাছাড়া রক্ত
পরিষ্কার করে, ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে। তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে
কাঁচা হলুদের রস খেলেও সমান উপকারিতা পাওয়া যায়। যারা কাঁচা হলুদ শুধু খেতে
পারবেন না, তারা চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে নিতে পারেন।
(বিঃদ্রঃ ত্বকে কখনও সরাসরি হলুদ দেওয়া
যাবে না। কিছুর সাথে যেমন চন্দন গুঁড়া, চালের গুঁড়া, বেসন ইত্যাদির সাথে
মিশিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেক মানুষের ত্বক ভিন্ন। তাই আগে মুখে না দিয়ে, হাতে
অথবা ঘাড়ে অ্যালার্জি টেস্ট করে নিতে পারেন। এতে বুঝতে পারবেন প্যাকটি
আপনাকে সুট করছে কিনা ) আশা করি পোস্ট টি ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে।