কি শীত, কি গরম—সারা বছরই নগরবাসীকে মশার কামড় খেতে হয়। শহরের এখানে-ওখানে খানাখন্দ, খোলা ম্যানহোল, পয়োনালা, অর্ধনির্মিত দালান, আবর্জনায় ভরা। এসব জায়গায় মশা বংশ বিস্তার করে চলেছে। এসব মশা থেকেই প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলেছে। এসব রোগে মৃত্যুর হারও কম নয়।
ম্যালেরিয়া
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। তাই বলে ঢাকা বা অন্যান্য শহরেও যে হয় না, তা নয়। তা ছাড়া প্রতিদিনই অনেক পর্যটক বেড়াতে বা কাজে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি এলাকায় যাচ্ছেন। তাই যে কেউ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। অনেক জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, প্লীহা ও যকৃতের আকৃতি বৃদ্ধি ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। কখনো কখনো ম্যালেরিয়া প্রাণনাশী হয়ে উঠতে পারে, মস্তিষ্ককে আক্রমণ করতে পারে, অস্বাভাবিক রক্তপাত, জন্ডিস ইত্যাদিও ঘটাতে পারে।
ডেঙ্গু
জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত এ দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। ডেঙ্গুবাহী মশা অ্যাডিস বদ্ধ পানিতে জন্মায় এবং দিনের বেলায় বেশি কামড়ায়। তাই শহরেই এর আক্রমণ বেশি। জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও চোখব্যথা, গায়ে ফুসকুড়ি বা র্যা শ এই রোগের লক্ষণ। এতে রক্তে অণুচক্রিকা কমে যেতে পারে এবং অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। এমনিতে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর আশঙ্কা তেমন নেই, তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়ে গেলে ব্যাপারটা জটিল রূপ নিতে পারে।
চিকুনগুনিয়া
নতুন করে দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। এটিও মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। এই রোগে জ্বরের পাশাপাশি হাড়ের জোড়া বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। ব্যথা, জ্বর সেরে যাওয়ার পরও অনেক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এনকেফেলাইটিস
এটিও মশাবাহিত ভাইরাস। মস্তিষ্কে প্রদাহ ঘটায়। সাধারণ ফ্লুর মতো উপসর্গ। এশিয়া মহাদেশে এই সমস্যা জাপানিজ এনকেফেলাইটিস নামে পরিচিত। এর প্রভাবে জ্বর, গলাব্যথা থেকে শুরু করে খিঁচুনি, মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
জিকা
বেশ কয়েকটি দেশে জিকা ভাইরাসজনিত যে সমস্যার দেখা মিলেছে, সেটাও মশাবাহিত। বাংলাদেশে ততটা না দেখা
গেলেও মনে রাখতে হবে যে ভাইরাসবাহী মশা বিমানে করে আসতে পারে। গর্ভবতী মা এতে সংক্রমিত হলে গর্ভস্থ শিশু আক্রান্ত হতে পারে।
তাই মশা থেকে সাবধান
মশার কামড় থেকে আত্মরক্ষাই সবচেয়ে বড় সমাধান। বসন্তকাল থেকে শুরু হয় মশাবাহিত অসুখ-বিসুখের প্রকোপ, বর্ষাকালে সবচেয়ে বাড়ে। মশা থেকে বাঁচতে হালকা রঙের কাপড় পরবেন, ফুলস্লিভ হলে ভালো। বাড়িতে নেট ব্যবহার করতে পারেন।
রাতে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করবেন। শিশুরা ঘুমালে দিনেও তাই। পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে অবশ্যই সাবধান থাকবেন, সঙ্গে ফুলহাতা জামা ও মশা তাড়ানোর ওষুধ নেবেন। বাড়িঘরের আশপাশে বদ্ধ পানি নিয়মিত সাফ করবেন। টবের নিচে, এসির নিচে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখবেন। প্রয়োজনে পাড়ার সবাই মিলে নিজেদের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং পানি ও আবর্জনামুক্ত রাখার বিষয়ে একতাবদ্ধ হোন।