১৮৩৭ সালে যখন তিনি ভারতবর্ষের সিংহাসনে বসেছিলেন তার অনেক আগে থেকেই ভারতবর্ষ ইংরেজদের আয়ত্তে। তারপরও কাগজে কলমে স¤হিসেবে দিল্লির সিংহাসনের অধিপতি ছিলেন তিনি।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে বাহাদুর শাহ্ জাফরকে ইয়াঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায় বৃটিশরা। সেই সাথে চূড়ান্ত পতন হয় মোঘল সম্রাটদের। ইয়াঙ্গুনে একেবারে দিনহীন পরিবেশে স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে জীবনের শেষ সময়গুলো বন্দি অবস্থায় কাটান ভারতের শেষ সম্রাট সে সময় তার অন্যতম অবলম্বন ছিল কবিতা।
‘বন্ধু ছিল, সবকিছু ছিল জমজমাট
আমি ছিলাম, উপলক্ষ ছিল, কিন্তু এখন আমি নেই।’
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হয়ে ইয়াঙ্গুনে এসে এমন অনেক কবিতা রচনা করেছিলেন ভারতের শেষ মুঘল সম্রাট আবুল মুজাফফ্র সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ্ জাফর। ইয়াঙ্গুন ও দিল্লির লাল কেল্লা থেকে পাওয়া বাহাদুর সাহ’র রচিত কবিতায় সীমাহীন কষ্ট ও মনবেদনার কষ্ট ফুটে উঠে।
দিল্লির নিজামুদ্দিন আওলিয়ার ভক্ত বাহাদুর শাহ ইয়াঙ্গুনে সুফি সাধক হিসেবে পরিচিতি পান। মুত্যুর পর ভারতবর্ষের শেষ স¤্রাটের কবরকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখে ইংরেজরা। কিন্তু স্ত্রী জিনাত মহলের মৃত্যুর পর জিনাতকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে তা লোকমহলে জানায় ইংরেজরা। তখন ধারণা করা হয় জিনাতের পাশেই হয়ত বাহাদুর শাহ’র কবর।
১৯৯১ সালে মাজার কমফ্লেক্স নতুন করে তৈরি করার সময় কিছুটা দুরে মাটির নিচে দিল্লির শেষ সম্রাটের কবর খুঁজে পাওয়া যায়। এখন ইয়াঙ্গুনের মুসলমানসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরাও সুফি সাধক বাহাদুর শাহ্ জাফরের কবর জিয়ারত করতে আসেন।
- বিশ্ব রাজনীতি থেকে অনেকটা একঘরে থাকায় এতোদিন এই নিদর্শনগুলো ছিলো লোকচক্ষুর অন্তরালে। তবে সম্প্রতি মিয়ানমার বিশ্ব দরবারে নিজেকে উন্মুক্ত করে মেলে ধরেছে। সেই সাথে মুঘল আমলের এই নিদর্শনগুলো বহুদিন পর উন্মুক্ত হওয়ায় পর্যটকরা তা দেখার জন্য আকৃষ্ট হচ্ছেন। ইতিহাস আর পর্যটনের মেলবন্ধনের সূচনা হয়েছে মিয়ানমারে।