চামচ তো নিত্যদিনের সঙ্গী

চামচ তো নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রয়োজনের খাতিরে তো বটেই, শৌখিনতার প্রকাশেও কখনো কখনো ব্যবহৃত হয় এটি। নানান উপাদানের তৈরি চামচ আমরা ব্যবহার করছি নিত্যদিন। এসব চামচের উপাদানের ভিত্তিতে প্রতিটির যত্নও আলাদা ধরনের হয়ে থাকে।
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া জান্নাত জানালেন চামচের যত্ন নেওয়ার নানান উপায়—
স্টেইনলেস স্টিলের চামচরান্না, পরিবেশন কিংবা খাবার কাজে সহজেই ব্যবহার করা যায় এ ধরনের চামচ। ব্যবহারের পর সাবান, সোডা, ডিটারজেন্ট, এমনকি ছাই দিয়ে পরিষ্কার করা হলেও এসব চামচ ভালো থাকে। এগুলোতে মরিচা পড়ার ভয় নেই।
কারুকার্যময় স্টেইনলেস স্টিলের চামচ সাধারণত অতিথি আপ্যায়নের সময় ব্যবহার করা হয়। কারুকাজের ফাঁকে ফাঁকে সহজেই তেল, চর্বি ও অন্যান্য ময়লা জমে যায়। ফলে শখের জিনিসটি সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে সহজেই। তাই শখের জিনিসের সৌন্দর্য হারিয়ে যাওয়ার আগেই এর যত্ন নেওয়া ভালো। ব্যবহারের পর সাবান বা ডিটারজেন্ট যা দিয়েই পরিষ্কার করুন না কেন, অবশ্যই ব্রাশ দিয়ে কারুকার্যময় অংশটি পরিষ্কার করে নিন। এখন ময়লা হয়নি বা এবার খারাপ দেখাচ্ছে না, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। অল্প অল্প করে ময়লা জমতে থাকলে একসময় এমন অবস্থা হবে, যখন কোনো কিছুর সাহায্যেই আর পরিষ্কার করা যায় না। তাই প্রতিবার ব্যবহারের পর ব্রাশ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
কাঠের চামচ
কাঠের চামচ যেকোনো তাপমাত্রায় ব্যবহার করা যায়। ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল বা রাইসকুকারেও ব্যবহার করতে পারেন কাঠের চামচ। ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
রুপার চামচ
তাসমিয়া জান্নাত বলেন, ‘অতি শৌখিনতার নিদর্শন রুপার চামচ সংরক্ষণে সতর্কতাও চাই একটু বেশি। অনেকে খাবার পরিবেশন বা খাবার সময় ব্যবহার ছাড়াও এ ধরনের চামচ সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তবে জেনে রাখা ভালো, বিভিন্ন খাবারের সংস্পর্শে এলে যেমন রুপার তৈজসপত্র সৌন্দর্য হারাতে পারে, তেমনি বাতাসে বা তাপেও এগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
রুপার চামচ সংরক্ষণে তাঁর পরামর্শ—
*রুপার চামচ পরিষ্কার করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
*টুথপেস্টের পরিবর্তে টক ফলের রস (যেমন লেবুর রস) ব্যবহার করতে পারেন।
*পরিষ্কার করার পর সম্ভব হলে খানিকটা ভ্যাসলিন দিয়ে মুছে নিন। এ ছাড়া ভ্যাসলিন ব্যবহার না করলে শুকনো চামচে ট্যালকম পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন।
*সবশেষে পরিষ্কার, নরম কাপড় বা তুলা পেঁচিয়ে বাক্সে উঠিয়ে রাখা ভালো।
মেলামিন বা প্লাস্টিকের চামচ
*রান্নার সময় এবং গরম খাবার পরিবেশনের সময় এ ধরনের চামচ ব্যবহার করা উচিত নয়। খাবার পরিবেশনে এবং বাচ্চাদের খাওয়াতে এগুলো ব্যবহার করা ভালো।
*অনেক সময় ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল বা রাইসকুকারের সঙ্গে এ ধরনের চামচ থাকে। তবে এই পাত্রগুলোতে এসব চামচ ব্যবহার না করাই ভালো।
লোহার খুন্তি
লোহার সামগ্রীতে মরিচা পড়ার প্রবণতা বেশি। সাবান, সোডা বা ছাই দিয়ে পরিষ্কার করার পর ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে খানিকটা খাবার তেল লাগিয়ে মুছে নিন। এরপর এয়ারটাইট বাক্সে (অর্থাৎ, যে বাক্সে বাতাস ঢুকতে পারে না) রাখুন।
পিতল, কাঁসা বা ব্রোঞ্জের চামচ
টকজাতীয় খাবারে এসব চামচ ব্যবহার না করাই ভালো। এ ছাড়া অনেকে এসব সামগ্রী শুধু সাজিয়েই রাখেন। লোহার চামচ বা খুন্তি যেভাবে পরিষ্কার করা হয়, এগুলোও সেভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে এসব চামচে সহজেই সবুজ ভাব চলে আসতে পারে। তাই টকজাতীয় ফলের রস দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। পরিষ্কার করার পর শুকনো করে নিয়ে একটু তেল লাগিয়ে আবার উঠিয়ে রাখুন।
আরও কিছু কথা
ধাতব চামচ কখনোই ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিলে ব্যবহার করা ঠিক নয়।
চামচ রাখার পাত্রটিতে পানি যেন না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। পানি জমে থাকার ফলে পাত্রে রাখা চামচগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই যেকোনো কাজের শেষে চামচ উঠিয়ে রাখার সময় এদিকে খেয়াল রাখতে ভুলবেন না।
নবীনতর পূর্বতন