আলো আঁধারিতে...

ল্যাম্পশেড পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিত মডেল: অরিন, ছবি: খালেদ সরকার
অন্দরে আলো-আঁধারির মায়াময় খেলায় কার না মন জুড়ায়! অন্দরের আলো-আঁধারিতে বাতির ঢাকনা বা ল্যাম্পশেডের ব্যবহার আজ সুপরিচিত। তবে অতীত বলে অন্দরে নয়; বরং ল্যাম্পশেড প্রথমে ব্যবহার করা হতো পথের ধারের আলো সঠিকভাবে পথ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে।
 রানি ভিক্টোরিয়ার সময় থেকে ল্যাম্পশেডের ব্যবহারে আসে অনন্য মাত্রা। বিডস, ঝালর আর লেসের মতো সামগ্রী যোগ হয় ল্যাম্পশেডে। ল্যাম্পশেড অন্দরে আনে আভিজাত্যের ছোঁয়া। এই সময়ে দাঁড়িয়েও ল্যাম্পশেডের আলো-আঁধারি ঘরে আনে আলো-আঁধারির স্নিগ্ধতা।
অন্দরে ল্যাম্পশেড ব্যবহারের নানা দিক সম্পর্কে জানালেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলসান নাসরীন চৌধুরী৷ বললেন, কোন ধরনের ল্যাম্পশেড অন্দরে মানানসই হবে, তা নির্ভর করে ঘরের আসবাবপত্রের ওপর। বসার ঘরে সোফা, শোকেসসহ অন্যান্য আসবাব অ্যান্টিক ধাঁচের হলে সেখানে মানাবে রাজকীয় নকশায় তৈরি করা আভিজাত্যপূর্ণ ঝাড়বাতি। আবার কিছুটা পুরোনো ধাঁচের আসবাবে যদি হালকা কারুকাজ থাকে, তাহলে একটু হালকা নকশার ঝাড়বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি বেশ মানানসই।
বসার ঘরে কাঠ, বেত বা বাঁশের তৈরি দেশীয় ধাঁচের আসবাব থাকলে স্ট্যান্ডিং ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। ঘরের এক কোণে তিনটি ভিন্ন উচ্চতার ল্যাম্পশেড রাখা যেতে পারে। হয়তো ৩ ফুট উচ্চতার একটি লাল ল্যাম্পশেড রাখলেন, ৪ ফুট উচ্চতার অন্য একটি ল্যাম্পশেডে হতে পারে সবুজ, গোলাপি বা কমলা রঙের। এর সঙ্গে ৫ ফুট উচ্চতার ল্যাম্পশেডটি হতে পারে হলুদ বা আকাশি রঙের। এ ক্ষেত্রে বাটিক, মোম বাটিক, ব্লক বা গ্রামীণচেকের কাপড়ে তৈরি ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা যায়। রঙিন কাপড়ের ল্যাম্পশেড যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি বাঁশ বা বেতের তৈরি ল্যাম্পশেডও সুন্দর দেখাবে। ল্যাম্পশেডের সঙ্গে তিনটি আলাদা আকৃতি বা আকারের মাটির পাত্রে গাছ বা ফুল রাখতে পারেন।
ল্যাম্পশেডের রঙের সঙ্গে মেলাতে পারেন পর্দা বা কুশন কভারের রং। বসার ঘরে গোলাপি রঙের ল্যাম্পশেড রাখলে অফহোয়াইট রঙের সোফায় গোলাপি রঙের কুশন কভার বেশ মানাবে। ল্যাম্পশেডের রঙের সঙ্গে অন্দরের কোনো না কোনো অনুষঙ্গের মিল থাকলে দারুণ দেখাবে।
 খাবার ঘরে সবজির আকারের ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। আজকাল বাজারে বিশেষ ধরনের ল্যাম্পশেড পাওয়া যায়, যেগুলো ছাদ থেকে ঝোলানো হয় এবং ইচ্ছে করলে টেনে কাছে আনা যায়। খাবার ঘরে এ ধরনের ল্যাম্পশেড রাখলে ঘুমানোর সময় তা নিচে টেনে আনতে পারবেন, এতে চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়বে না। বেত, চট, বাঁশ বা ক্রিস্টালের তৈরি ল্যাম্পশেড খাবার ঘরের জন্য মানানসই।
শোবার ঘরে বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট টেবিলে রাখতে পারেন টেবিল ল্যাম্প। বিছানায় শুয়ে বই পড়ার অভ্যাস থাকলে এটি কাজে লাগবে। বিছানা থেকে অল্প একটু উঁচুতে টেবিল ল্যাম্পের শেড থাকলে আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে না। এতে আপনি টেবিল ল্যাম্পের আলোতে বই পড়তে পারবেন; আবার অন্য পাশে যিনি শুয়ে আছেন, তাঁর চোখে আলো পড়বে না।
শোবার ঘরে এক কোণের মেঝেতে তিনটি ভিন্ন উচ্চতার ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। ছোট থেকে বড়, এভাবে সাজিয়ে রাখুন ল্যাম্পশেডগুলোকে। পুরোটাই কাগজে প্যাঁচিয়ে তৈরি, এমন ল্যাম্পশেডও মিলবে বাজারে। এগুলোর জন্য আলাদা রঙের আলো বা একই রঙের আলোর জন্য আলাদা আকারের ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা যায়। ঘরের এক কোণে সাজানোর জন্য এমন ল্যাম্পশেডও বেছে নিতে পারেন।
 চাইলেই টেনে নামানো যায় এমন তিনটি ভিন্ন মাপের ল্যাম্পশেডও রাখতে পারেন শোবার ঘরে। বৃত্তাকারে সাজিয়ে রাখতে পারেন এ ল্যাম্পশেডগুলো। আকারে ১০, ১৪ আর ১৮ ইঞ্চির মতো হতে পারে এসব ল্যাম্পশেড। ঘরে আলো-আঁধারির মায়াময় পরিবেশ চাইলে তিনটি ল্যাম্পশেডই নিচু রাখতে পারেন।
শিশুর ঘরের জন্য ল্যাম্পশেড বাছাইয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে, রাতে যেন শিশু ভয় না পায়। শিশুর ঘরের ল্যাম্পশেডে থাকতে পারে মজার কোনো কার্টুন চরিত্র। শিশুর পড়ার টেবিলেও ল্যাম্পশেড দিতে পারেন। এর ফলে একটি শিশুর পড়ালেখার সময় ঘরে তার ভাই বা বোন ঘুমিয়ে থাকলে ওর চোখে আলো লাগবে না।
নবীনতর পূর্বতন