ঝেড়ে-মুছে সব ঝকঝকে। ঘরের কোথাও কোনো ধুলা নেই। কোনো দাগও নেই। শহুরে জীবনে চাইলেও বাসাবাড়ি এমন পরিষ্কার রাখা যায় না। বাড়িতে সহায়তাকারী না থাকলে অফিস শেষে প্রতিদিন সবকিছু হয়তো গুছিয়ে রাখাও সম্ভব না। বাড়ি পরিষ্কার রাখার ছোটখাটো কিছু পদ্ধতি আছে। ঘরবাড়ি প্রতিদিন নিয়ম করে পরিচ্ছন্ন রাখা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে কিছু সহজ উপায় জানা থাকলে ঝটপট এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন, সেটিই যদি অপরিষ্কার থাকে তাহলে কীভাবে হবে? সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরদোর। এ নিয়ে কথা হলো রাজধানীর সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরস বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া জান্নাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ মারভিন ম্যান্ডেলার মতে, শিল্প-বিপ্লবের পর থেকেই যেহেতু প্রতিনিয়ত আমাদের ঘরে-বাইরে কাজ করতে হয়। তাই সবকিছু সামলে নিয়ে পরিপাটি থাকতে হলে আমাদের প্রাত্যহিক কাজে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
ঘর পরিচ্ছন্ন রাখার সহজ টিপস
* দরজা-জানালা কিংবা শোকেসসহ সব ধরনের কাচ ও থাই গ্লাস পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে লাগবে পানিতে ভেজা এক টুকরো স্পঞ্জ বা ফোম। পানির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ভিনেগার বা অ্যামোনিয়া মিশিয়ে নিতে পারেন। এবার পুরোনো পত্রিকার পাতা ভিনেগার আর পানির মিশ্রণে ভিজিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন—কাচের চকচকে ভাব ফিরে আসবে। তবে সুতি কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে হিতে বিপরীত অবস্থা হতে পারে। কাপড়ের সূক্ষ্ম সুতা কাচের গায়ে লেপটে যায়। জানালার কাচে উজ্জ্বলতা আনতে সাদা ভিনেগার ব্যবহার করুন। প্রতি এক গ্যালন পানিতে দুই টেবিল চামচ ভিনেগারই যথেষ্ট। স্প্রে বোতলে নিয়ে স্প্রে করে পেপার বা সূক্ষ্ম সুতার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
* স্টেইনলেস স্টিল ও প্লাস্টিকের আসবাব ধোয়ার ক্ষেত্রে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিই যথেষ্ট।
* কাঠ, বাঁশ, বেত, হার্ডবোর্ড কিংবা পারটেক্সের তৈরি আসবাব পরিষ্কারে কখনোই পানি ব্যবহার করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে ধুলাবালু দূর করতে শুকনো কাপড় বা মপই যথেষ্ট। মপ মানে, হাতলের মাথায় থাকা গুচ্ছাকার সূক্ষ্ম সুতার দড়িসমেত ঝাড়ু বিশেষ। প্রয়োজনে প্রতি কক্ষে আলাদা আলাদা মপ রাখতে পারেন—খাটের নিচে, দরজার আড়ালে কিংবা বারান্দায়।
* সোফা, খাট, চেয়ার ইত্যাদি আসবাবের পরিষ্কারের জন্য আছে ‘ফার্নিচার ডাস্টার’। দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। কাঠে পানি পড়লে তা শুকিয়ে নিতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
* মোজাইক বা টাইলস করা পাথুরে মেঝে পরিষ্কার করতে ফ্লোর মপ বা ফ্লোর ব্রাশ ব্যবহার করুন। সে ক্ষেত্রে মেঝে পরিষ্কারক বিশেষ ধরনের সাবান (কঠিন বা তরল-জাতীয়) ব্যবহার করুন, কিন্তু কখনোই ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করা ঠিক না।
* কার্পেট পরিষ্কার করা খুব কঠিন বিষয়ই বটে। এতে সামান্য বাই-কার্বোনেট সোডা ছিটিয়ে একটু ঘষে রেখে দিন ১৫ মিনিট। এরপর এভাপোরেট টুল দিয়ে বা ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দিন। ব্যবহার করতে পারেন বিশেষ ‘ড্রাই শ্যাম্পু’ও।
* যেকোনো আসবাবের আঁচড়ের দাগ দূর করতে আলু কেটে ঘষুন, বেশ কার্যকর।
* কাঠের তৈরি আসবাব যেমন টেবিল বা বেঞ্চে মার্কার পেনের কালি লেগে গেল, তুলবেন কীভাবে? দাঁত মাজার টুথপেস্ট ব্যবহার করুন, উঠে যাবে।
* বাচ্চার আঁকিবুঁকিতে ঘরের দেয়ালের যাচ্ছেতাই অবস্থা? ভেজা স্পঞ্জ বা কাপড়ে বেকিং সোডা নিয়ে মুছে ফেলুন দেয়ালের যত দাগ।
* মাত্র কিনে আনা বাক্স থেকে খোলা নতুনের মতো রাখতে চান স্নিকার জুতা? টুথপেস্ট দিয়ে ঘষুন।
* সবজি কাটার বোর্ডে লেগে থাকা সবজি আর তা থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধ দূর করতে চান? লেবু কেটে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। লেবুর সঙ্গে লবণ ও বেকিং সোডাও মিশিয়ে নিতে পারেন।
* ঘর পরিষ্কারের পরপরই ঘর মোছার কাপড় ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে।
* একটু সুযোগ পেলেই ঘরের কোনায় বা ওপরের দিকে মাকড়সা বাসা বাঁধে। ঝুলজাতীয় কালিও লেগে থাকে তাতে। এসব সহজে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন সিলিং ব্রাশ। বেশ লম্বা হাতলওয়ালা ঝাড়ুগুলোয় নারকেলের শলাকা বা প্লাস্টিকের নরম আঁশ ব্যবহৃত হয়। আবার চাইলেই এর হাতল ইচ্ছামতো ছোট-বড় করা যায় পাবেন এমন সিলিং ব্রাশ। পাবেন ১৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
* সারা দিনের রান্নায় লাগে এমন মসলা পিষে আগে থেকেই ঢাকা অবস্থায় ফ্রিজে রাখতে হবে। এতে গন্ধ ছড়াবে না এবং অন্যান্য খাবারও থাকবে ফ্রেশ।
* নিয়মিতভাবে সাবধানতার সঙ্গে ফ্রিজ পরিষ্কার করা যায়। প্রথমেই ফ্রিজের সুইচ অফ করে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এবার ভিনেগার বা বাসনকোসন ধোয়ার ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি দিয়ে ফ্রিজের ভেতরের অংশ ধুয়ে নিন। তবে কখনোই ফ্রিজের গায়ে সেঁটে থাকা বরফ ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে তুলতে যাবেন না, এতে ফ্রিজের ক্ষতি হতে পারে।
* অনেক সময় পানির কল বা টেপ বিকল হয়ে পড়ে—টেপ খুলতে বা বন্ধ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ ক্ষেত্রে একটি কাপড় উত্তপ্ত ভিনেগারে ডুবিয়ে পানির কলে জড়িয়ে দিন, সুফল পাবেন।
* সাধারণ ডিটারজেন্ট বা হারপিক দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করতে পারেন। ব্যবহৃত টিস্যু, সাবান কিংবা শ্যাম্পুর মোড়ক ইত্যাদি ফেলার জন্য বাথরুমেই একটি নির্দিষ্ট ময়লার ঝুড়ি রাখতে পারেন।
* ওভেনে খাবার গরম করার সময় অবশ্যই ঢাকনাসহ বাটি ব্যবহার করতে হবে। না হলে ওভেনের ভেতরটা তৈলাক্ত হয়ে যাবে।
* রান্নাঘরে তরিতরকারি কিংবা খাবারের ময়লা নির্দিষ্ট ঝুড়িতে রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভেজা ও শুকনো ময়লা ফেলার জন্য পৃথক দুটি ময়লার ঝুড়ি রাখুন। ঝুড়ির অভ্যন্তর ভাগ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিন—ময়লা নেওয়ার সময় যাতে সেই পলিথিনসহ নিয়ে যায়। নিয়মিত ময়লার ঝুড়ি পরিষ্কার করে ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
* বেসিনের পাশে সব সময় থাকুক হাত ধোয়ার সাবান ও মোছার জন্য পরিষ্কার তোয়ালে।
* থালাবাসন ধোয়ার পর শুকনো পরিষ্কার ন্যাপকিন অথবা নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে রাখতে হবে যেন দাগ না বসে যায়।
* রান্নাঘরের সিঙ্কটিকে ঝকঝকে করতে হলে অর্ধেক আঙুর, সামান্য লবণ মিশিয়ে একটি স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে নিন।
অন্দরের গাছপালায়ও তো ধুলা জমে। পরিষ্কার করবেন কীভাবে? এ ব্যাপারে পরামর্শ দেন ঢাকার আগারগাঁওয়ের গ্রিন সেভারস নার্সারির প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি। তিনি জানান,
* প্রথমে গাছের মরা পাতা ও ডালপালা থাকলে ছেঁটে ফেলতে হবে।
* ধুলাবালু পড়ে পাতা মলিন দেখাতে পারে। পানি স্প্রে করুন, পাতার ধুলো দূর হবে।
* পরে টিস্যু বা সুতি কাপড়ে নারিকেল তেল নিয়ে পাতা মুছে চকচকে আকর্ষণীয় ভাব ফিরিয়ে আনুন।
* বাজারে লিফ সাইনার নামে একধরনের বোতলজাত তরল পদার্থ পাওয়া যায়। স্প্রে করুন, পাতার চকচকে ভাব ফিরে আসবে। তাতে আবার উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও থাকে। পাবেন পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের বীজ মার্কেটে।