অনলাইনের যুগে কাগজের বই পড়ার অভ্যাস কি এখনো আছে? বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ, ছবি নামিয়ে দেখা, অনলাইনভিত্তিক খেলা, অনলাইনে টুকটাক লেখা ইত্যাদি বিষয়ে মগ্ন নতুন প্রজন্ম। কিন্তু বই ভালোবাসেন এমন অনেক লোক আছেন। ফেব্রুয়ারি এলে তা বোঝা যায়। নতুন বইয়ের পাতার গন্ধটাই মন ভালো করে দেয়। যাঁরা নিয়মিত বই কেনেন, তাঁদের বাড়িতে নিশ্চয়ই ছোটখাটো লাইব্রেরি আছে।
কোথায় রাখবেন বই
পড়ার সুবিধার জন্য নিজের প্রয়োজন বুঝে বই রাখার জায়গা বাছাইয়ের পরামর্শ অন্দরসজ্জাবিদদের। স্থপতি মো. মাকসুদুর রহমান যেমন বললেন লাইব্রেরি অবসর কিংবা বিশ্রাম নেওয়ার স্থানে করাই বুদ্ধিমানের কাজ। জায়গা বাছাই করতে হবে আপনার প্রয়োজন, স্বচ্ছন্দের কথা বিবেচনা করে। এই যেমন চুলায় রান্না চাপিয়ে দিয়ে এসে দুটো পাতা পড়তে চাইলে বইয়ের তাকটি রান্নাঘরের কাছাকাছি রাখতে পারেন। বাড়ির সবার ব্যবহারের জন্য হলে একটি আলাদা ঘরেই করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস পাওয়া যায়—এমন জায়গা হলে সবচেয়ে ভালো। সবার আসা-যাওয়ার সুবিধার দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। লাইব্রেরির ঘরে ছোট টেবিল, চেয়ারের পাশাপাশি আরামদায়ক সোফার ব্যবস্থা রাখা ভালো। বিছানায় শুয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলে শোয়ার ঘরের এক পাশেই গড়ে তুলতে পারেন বই রাখার জায়গা।
নকশা কেমন হবে
জায়গা কম থাকলে বাড়ি বানানোর সময় দেয়ালের ভেতরেই খোপ খোপ করে তাক বানিয়ে রাখতে পারেন বই। সে ক্ষেত্রে শুধু কাচ লাগিয়েই তৈরি করা যেতে পারে আপনার পছন্দের লাইব্রেরি। এতে খরচ ও জায়গা দুই-ই বাঁচবে। তবে কাঠের তৈরি বইয়ের তাকে সৌন্দর্য যেন বেশি খোলে। কাঠের ওপর থাকতে পারে নানা নকশা। আধুনিক ঘরানার নকশায় শুধু কাঠের ব্যবহারই হয়।
রং কেমন হবে
কাঠের রঙের ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। কেউ হয়তো কাঠের রঙটিই রেখে দিতে চান। আবার অনেকে নতুন রঙে রাঙিয়ে নিতে পছন্দ করেন। বোর্ড কিংবা প্লাইউডেও বানিয়ে নিতে পারেন বই রাখার আসবাব। তবে স্থপতি মাকসুদুরের পরামর্শ, বোর্ডের তৈরি আলমারি অল্পতেই বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কাঠ না পারলেও প্লাইউড ব্যবহারের কথা বলেন তিনি। এতে কাঠের স্বাদও পাওয়া যায়, আবার এটি টেকসইও।
বইয়ের বিন্যাস
যাঁদের বইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি, তাঁদের বই গুছিয়ে রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা প্রয়োজনে দরকারি বইটি খুঁজে না-ও পেতে পারেন। রাজধানীর বাসাবোর রাসেল যেমন ভালোমতো গুছিয়ে রাখার পাশাপাশি কম্পিউটারে বইয়ের ডেটাবেইস তৈরি করছেন। তিনি বলেন,‘আমার বই পাঁচ হাজারের মতো। খুঁজে পাওয়ার সুবিধার জন্যই মাইক্রোসফট এক্সেল ফাইলে বইয়ের নাম ও লেখকের নামের সঙ্গে একটি ইউনিট নম্বরজুড়ে দিয়েছি। এর ফলে সহজেই বইয়ের খোঁজ পেয়ে যাই।’
মনে রাখতে হবে
*বই ধুলোবালুমুক্ত রাখতে হবে। পোকামাকড়ে ধরেছে কি না, সে খেয়ালও রাখা প্রয়োজন।
*বইয়ের নাম লেখা অংশ সামনের দিকে রাখতে হবে।
*প্রয়োজনীয় বই কাছাকাছি জায়গায় রাখুন। নিয়মিত ব্যবহার হয় না—এমন বই আলমারির ওপর কিংবা নিচের দিকে রাখতে পারেন।
*উঁচু স্থান থেকে বই নামানোর জন্য ফোল্ডিং সিঁড়ি রাখুন।
*বইয়ের তাকের মাঝে মাঝে ছোট ফুলদানি কিংবা পছন্দের ফটোফ্রেমও রাখতে পারেন।
*বই ধার দেওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি টুকে রাখার অভ্যাসও তৈরি করে ফেলুন।
*বইয়ের তাকে নিমপাতা রেখে দিন। পোকামাকড় দূরে থাকবে।
সম্ভব হলে ছয় মাস পরপর বইগুলোকে রোদে দিন।