থাইল্যান্ডের পাতায়া
হাতির খেলা, বাঘের নাচ!ছোট্ট মাঠ। ওপরে টিনের ছাউনি। দুই দিকে দর্শকদের বসার আসন, কোনোটি খালি নেই। মাঠের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো হাতির দল। ওপরে বসা মাহুত। বাজনা শুরু হতেই মাহুতের ইশারায় দর্শকদের জানাল সালাম। এবার দুটি দলে ভাগ হয়ে গেল হাতি। ঘোষণা এল—এখন চলবে ফুটবল খেলা। দুটি বল নিয়ে শুরু হলো হাতির দলের খেলা।
শুধুই কি ফুটবল, তিন চাকার সাইকেল চালানো, বেলুন ফাটানো, ছবি
আঁকাসহ কত কিছুই না দেখাল হাতির দল। ৪০ মিনিটের এই প্রদর্শনী মুগ্ধ হয়ে
দেখলেন হাজার খানেক পর্যটক। এতক্ষণ বলছিলাম থাইল্যান্ডের পাতায়া শহরের
নোংনুচ বোটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণের শুরুর কথা। দিনব্যাপী এই ভ্রমণের পরতে
পরতে যেন চমক।
পাতায়ার কথা এলেই রাতে ‘ওয়ার্কিং স্ট্রিট’ আর দিনে প্রবালদ্বীপ ভ্রমণের কথাই সবার আগে আসে। এ দুটি স্থানই দেখার মতো। তবে এর বাইরেও আছে অনেক কিছু।
চট্টগ্রাম থেকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে নামার পর ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলাম পাতায়া। দুই ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। হোটেলকক্ষে ব্যাগ রেখেই পরদিনের পরিকল্পনা করে নিলাম। হোটেল থেকে টু্যর কোম্পানির সঙ্গে কথা বলিয়ে দিল।
পরদিন সকাল আটটায় গাড়ি হাজির। গন্তব্য নোংনুচ বোটানিক্যাল গার্ডেন। হোটেল থেকে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই পেঁৗছে গেলাম। শুরুতেই থাইল্যান্ডের রাজার কাহিনি নিয়ে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর এই হাতির কসরত। লেখার শুরুতে হাতির খেলার বর্ণনা দিয়েছি। হাতির কসরত শেষে পর্যটকবাহী বাসে এক চক্কর আড়াই কিলোমিটারের উদ্যানে। নানা জাতের গাছ নজর কেড়েছে। বনসাই ও ক্যাকটাসের ভিন্নতা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। অর্কিডের দেশ থাইল্যান্ড, আর এই উদ্যানে অর্কিড থাকবে না, তা কী করে হয়। অসংখ্য অর্কিডের সমাহার। বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড দিয়ে ঝুলন্ত বিভিন্ন ডিজাইন করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে লতাপাতার সাহায্যে ময়ূরের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে। লতাপাতা–জাতীয় গুল্ম ছেঁটে বানানো ময়ূর দূর থেকে দেখতে জীবন্তই মনে হয়।
উদ্যানের এক দিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত, অন্য দিকে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগানের ফাঁকে ছোট ছোট মন্দির আকৃতির স্থাপনা নজরকাড়া। পোড়া মাটি দিয়ে করা ক্যাকটাসসহ নানা গাছের ভাস্কর্য চোখে পড়বে। এ ছাড়া পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি সিংহ, বাঘ, হাতি, হরিণের ম্যুরালও রয়েছে। চমৎকার এসব আয়োজনে কখন যে সময় পার হয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না।
এর মধ্যে গড়িয়ে গেছে দুপুর। বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে এবার পথ ধরলাম ‘শ্রিরাচা টাইগার জু’। এ তো আরেক মজা। আশপাশে বাঘ দেখ যাবে, কিন্তু শান্ত! পোষ মানানো বাঘগুলো দেখে বেশ ভালোই লাগবে। বাঘের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে এসবের জন্য গুনতে হবে বাথ (থাইল্যান্ডের মুদ্রা)। এই চিড়িয়াখানায় দেখলাম বাঘের কসরত। প্রায় আধঘণ্টার এই প্রদর্শনীতে ‘দোর্দণ্ড প্রতাপশালী’ বাঘের নাচ থেকে শুরু করে আগুনখেলা—সবই ছিল।
বাঘের খাঁচা থেকে বের হয়ে এবার কুমিরের পেটে! কুমিরের বিশাল খামার রয়েছে এই চিড়িয়াখানার পাশেই। এ যেন আরেক চমক। কুমিরও যে পোষ মানে তা প্রথম দেখলাম। কুমিরকে যখন যা করতে বলা হচ্ছে, সে তখন তা করে দেখাচ্ছে।
হাতি, বাঘ আর কুমিরের খেলা দেখতে দেখতে দিনের আলো ফুরিয়ে গেল। পথ ধরলাম পাতায়ার মূল শহরের দিকে। ফেরার পথে গাইড বললেন, ‘এখন আলকেজার শো দেখাতে নিয়ে যাব।’ দেড় ঘণ্টার শোতে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরেন একদল থাই তরুণী। দেড় ঘণ্টার এই শো চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
এদিকে প্রবালদ্বীপের কথা না বললে কী চলে। ভ্রমণের তৃতীয় দিনের গন্তব্য ছিল প্রবাল দ্বীপ। সৈকতে সাদা নরম বালু। সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। তাতে রংবেরঙের ছোট ছোট নৌকা। পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড়। একেবারে ছবির মতো, মনোরম। পাতায়া থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে প্রবাল দ্বীপ।
পাতায়া সমুদ্রসৈকত থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ১০ মিনিট চলার পর এসে থামল সাগরের মাঝখানে একটি জেটিতে। যেখান থেকে প্যারাসুটে উড়ে সমুদ্র দেখেন পর্যটকেরা। প্যারাসুটে ওড়ার জন্য সে কী প্রতিযোগিতা সবার। আকাশে উড়ে সমুদ্র দেখার আনন্দই অন্য রকম। এবার আরও কিছু দূর গিয়ে নৌকা থামল ছোটখাটো দোতলা এক লঞ্চের পাশে। এখান থেকে করা যায় স্কুবা ডাইভিং। সাগরতলের জগৎ দেখতে নেমে পড়ছেন অনেকে। পানি ওঠার পর চোখেমুখে যেন সমুদ্রজয়ের তৃপ্তি।
এরপর মূল গন্তব্য প্রবাল দ্বীপ। কিছুক্ষণ পর নৌকা এসে থামল সাদা বালুচরে। নীল পানিতে পা রাখতেই অন্য রকম অনুভূতি। স্বচ্ছ পানি, পরিচ্ছন্ন চারপাশ। কতটুকু হবে এই সৈকত। বড়জোর ৫০০ গজ। অথচ এতেই চলছে হাজার খানেক পর্যটকের দাপাদাপি। কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। কেউ নোনাজলে সাঁতরে বেড়াচ্ছেন। ছোট ছোট ঢেউ বলে খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না। অনেকে বিচ বাইকে চেপে মারছেন এক চক্কর। পাহাড়েও চড়ার ব্যবস্থা আছে।
পাতায়ার কথা অনেক হলো। যাঁরাই পাতায়া যাচ্ছেন ব্যাংকক তো ঘুরে আসবেন, এটা নির্ধারিত। ব্যাংককেও আগে থেকে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। রয়েছে সাফারি ওয়ার্ল্ড, রিভার ক্রুজ, সিলাইফ, মাদামতুসো জাদুঘরসহ কত্ত কী।
যেভাবে যাবেনব্যাংকক যেতে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের। চট্টগ্রাম থেকে দুই ঘণ্টায় বিমানে ব্যাংকক। সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে দুই ঘণ্টায় পাতায়া।
থাকা-খাওয়া: বাংলাদেশের বেসরকারি ট্যুর অপারেটদের নানা ধরনের প্যাকেজ আছে। থাকা, খাওয়া, বেড়ানো—সব সুবিধা আছে এসব প্যাকেজে।
বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্যাকেজ–সুবিধা আছে।
পাতায়ার কথা এলেই রাতে ‘ওয়ার্কিং স্ট্রিট’ আর দিনে প্রবালদ্বীপ ভ্রমণের কথাই সবার আগে আসে। এ দুটি স্থানই দেখার মতো। তবে এর বাইরেও আছে অনেক কিছু।
চট্টগ্রাম থেকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে নামার পর ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলাম পাতায়া। দুই ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। হোটেলকক্ষে ব্যাগ রেখেই পরদিনের পরিকল্পনা করে নিলাম। হোটেল থেকে টু্যর কোম্পানির সঙ্গে কথা বলিয়ে দিল।
পরদিন সকাল আটটায় গাড়ি হাজির। গন্তব্য নোংনুচ বোটানিক্যাল গার্ডেন। হোটেল থেকে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই পেঁৗছে গেলাম। শুরুতেই থাইল্যান্ডের রাজার কাহিনি নিয়ে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর এই হাতির কসরত। লেখার শুরুতে হাতির খেলার বর্ণনা দিয়েছি। হাতির কসরত শেষে পর্যটকবাহী বাসে এক চক্কর আড়াই কিলোমিটারের উদ্যানে। নানা জাতের গাছ নজর কেড়েছে। বনসাই ও ক্যাকটাসের ভিন্নতা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। অর্কিডের দেশ থাইল্যান্ড, আর এই উদ্যানে অর্কিড থাকবে না, তা কী করে হয়। অসংখ্য অর্কিডের সমাহার। বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড দিয়ে ঝুলন্ত বিভিন্ন ডিজাইন করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে লতাপাতার সাহায্যে ময়ূরের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে। লতাপাতা–জাতীয় গুল্ম ছেঁটে বানানো ময়ূর দূর থেকে দেখতে জীবন্তই মনে হয়।
উদ্যানের এক দিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত, অন্য দিকে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগানের ফাঁকে ছোট ছোট মন্দির আকৃতির স্থাপনা নজরকাড়া। পোড়া মাটি দিয়ে করা ক্যাকটাসসহ নানা গাছের ভাস্কর্য চোখে পড়বে। এ ছাড়া পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি সিংহ, বাঘ, হাতি, হরিণের ম্যুরালও রয়েছে। চমৎকার এসব আয়োজনে কখন যে সময় পার হয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না।
এর মধ্যে গড়িয়ে গেছে দুপুর। বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে এবার পথ ধরলাম ‘শ্রিরাচা টাইগার জু’। এ তো আরেক মজা। আশপাশে বাঘ দেখ যাবে, কিন্তু শান্ত! পোষ মানানো বাঘগুলো দেখে বেশ ভালোই লাগবে। বাঘের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে এসবের জন্য গুনতে হবে বাথ (থাইল্যান্ডের মুদ্রা)। এই চিড়িয়াখানায় দেখলাম বাঘের কসরত। প্রায় আধঘণ্টার এই প্রদর্শনীতে ‘দোর্দণ্ড প্রতাপশালী’ বাঘের নাচ থেকে শুরু করে আগুনখেলা—সবই ছিল।
বাঘের খাঁচা থেকে বের হয়ে এবার কুমিরের পেটে! কুমিরের বিশাল খামার রয়েছে এই চিড়িয়াখানার পাশেই। এ যেন আরেক চমক। কুমিরও যে পোষ মানে তা প্রথম দেখলাম। কুমিরকে যখন যা করতে বলা হচ্ছে, সে তখন তা করে দেখাচ্ছে।
হাতি, বাঘ আর কুমিরের খেলা দেখতে দেখতে দিনের আলো ফুরিয়ে গেল। পথ ধরলাম পাতায়ার মূল শহরের দিকে। ফেরার পথে গাইড বললেন, ‘এখন আলকেজার শো দেখাতে নিয়ে যাব।’ দেড় ঘণ্টার শোতে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরেন একদল থাই তরুণী। দেড় ঘণ্টার এই শো চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
এদিকে প্রবালদ্বীপের কথা না বললে কী চলে। ভ্রমণের তৃতীয় দিনের গন্তব্য ছিল প্রবাল দ্বীপ। সৈকতে সাদা নরম বালু। সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। তাতে রংবেরঙের ছোট ছোট নৌকা। পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড়। একেবারে ছবির মতো, মনোরম। পাতায়া থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে প্রবাল দ্বীপ।
পাতায়া সমুদ্রসৈকত থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ১০ মিনিট চলার পর এসে থামল সাগরের মাঝখানে একটি জেটিতে। যেখান থেকে প্যারাসুটে উড়ে সমুদ্র দেখেন পর্যটকেরা। প্যারাসুটে ওড়ার জন্য সে কী প্রতিযোগিতা সবার। আকাশে উড়ে সমুদ্র দেখার আনন্দই অন্য রকম। এবার আরও কিছু দূর গিয়ে নৌকা থামল ছোটখাটো দোতলা এক লঞ্চের পাশে। এখান থেকে করা যায় স্কুবা ডাইভিং। সাগরতলের জগৎ দেখতে নেমে পড়ছেন অনেকে। পানি ওঠার পর চোখেমুখে যেন সমুদ্রজয়ের তৃপ্তি।
এরপর মূল গন্তব্য প্রবাল দ্বীপ। কিছুক্ষণ পর নৌকা এসে থামল সাদা বালুচরে। নীল পানিতে পা রাখতেই অন্য রকম অনুভূতি। স্বচ্ছ পানি, পরিচ্ছন্ন চারপাশ। কতটুকু হবে এই সৈকত। বড়জোর ৫০০ গজ। অথচ এতেই চলছে হাজার খানেক পর্যটকের দাপাদাপি। কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। কেউ নোনাজলে সাঁতরে বেড়াচ্ছেন। ছোট ছোট ঢেউ বলে খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না। অনেকে বিচ বাইকে চেপে মারছেন এক চক্কর। পাহাড়েও চড়ার ব্যবস্থা আছে।
পাতায়ার কথা অনেক হলো। যাঁরাই পাতায়া যাচ্ছেন ব্যাংকক তো ঘুরে আসবেন, এটা নির্ধারিত। ব্যাংককেও আগে থেকে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। রয়েছে সাফারি ওয়ার্ল্ড, রিভার ক্রুজ, সিলাইফ, মাদামতুসো জাদুঘরসহ কত্ত কী।
যেভাবে যাবেনব্যাংকক যেতে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের। চট্টগ্রাম থেকে দুই ঘণ্টায় বিমানে ব্যাংকক। সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে দুই ঘণ্টায় পাতায়া।
থাকা-খাওয়া: বাংলাদেশের বেসরকারি ট্যুর অপারেটদের নানা ধরনের প্যাকেজ আছে। থাকা, খাওয়া, বেড়ানো—সব সুবিধা আছে এসব প্যাকেজে।
বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্যাকেজ–সুবিধা আছে।