দফ বাজানো জায়েজ?

Image result for দফ বাজানো
প্রশ্ন
নামঃ সাবেত বিন মুক্তার
দেশঃ বাংলাদেশ
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। এক ভাই “যে সমস্ত গান শ্রবণ করা জায়েয” শিরোনামে নিম্নোক্ত হাদিস ২টি পেশ করেন। এই হাদিসের ব্যাখ্যা দয়া করে জানাবেন।
ঈদের গান শ্রবণ করা: এ হাদীসটি আয়েশা রা. হতে বর্ণিত:একদা রাসূল সা. তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রা. তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল সা. বললেন: তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন। (বুখারী)
দফ বাজিয়ে বিয়ে প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা। দলিল: রাসূল সা. বলেছেন:হারাম ও হলালের মধ্যে পার্থক্য হল দফের বাজনা। এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (আহমাদ)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحمن
বুখারীতে বর্ণিত হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে যারা বাজাচ্ছিল তারা নাবালেগ বালিকা ছিল। সেই সাথে আম্মাজান আয়শা রাঃ বলে দিয়েছেন, তারা কোন গায়িকা ছিল না। এমনিতেই বাজাচ্ছিল।
সুতরাং এটি দিয়ে কিভাবে বালেগ ব্যক্তিদের গান বাজনা ও দফের বাদ্যের অনুমোদন হতে পারে?
বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের অভিমত হল, উপরোক্ত বিধান হল পূর্বের। প্রথমত জাহেলী যুগের প্রথা হিসেবে দফ বাজানো হতো। এর অনুমোদনও প্রথম প্রথম দেয়া হয়েছিল। যেমন মদের অনুমোদন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সর্বপ্রকার বাদ্য বাজনা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এমন কি দফের বাজনাও।
নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দফ নিষিদ্ধ হওয়া পরিস্কার প্রমাণিত হয়!
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: «الدُّفُّ حَرَامٌ، وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ، وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ
হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। [সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০]
حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ قَالَ: ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ قَالَ: ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعِيدٍ الْجَوْهَرِيُّ قَالَ: ثنا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ حَسَّانَ بْنِ أَبِي سِنَانٍ قَالَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُمْسَخُ قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي فِي آخِرِ الزَّمَانِ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ»، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَيَشْهَدُونَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّكَ رَسُولُ اللهِ، وَيَصُومُونَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قِيلَ: فَمَا بَالُهُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «يَتَّخِذُونَ الْمَعَازِفَ وَالْقَيْنَاتِ وَالدُّفُوفَ، وَيَشْرَبُونَ الْأَشْرِبَةَ، فَبَاتُوا عَلَى شُرْبِهِمْ وَلَهْوِهِمْ، فَأَصْبَحُوا قَدْ مُسِخُوا قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শেষ জমানায় আমার উম্মত বানর ও শুকরে রূপান্তরিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা সাক্ষি দিবে যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল এবং রোযা রাখার পরও?
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, হ্যাঁ।
বলা হল, তাদের অপরাধ কি?
বললেন, তারা বাদ্য, গায়িকা এবং দফের বাজনা গ্রহণ করবে। মদ খাবে, রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘুমাবে। আর সকালে দেখবে তারা বানর ও শুকরে পরিণত হয়ে গেছে। [হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/১১৯]
এসব বর্ণনা প্রমাণ করে দফ বাজানো সম্পূর্ণ হারাম। বাচ্চাদের দফ বাজানো সম্পর্কিত বর্ণনা পেশ করে এ হারাম বিষয় হালাল করার চেষ্টা করা ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
أحدث أقدم