মালাকুল মওত আযরাঈল আলাইহিস সালাম কি অন্ধ বধির ও মূক?

Image result for আখেরাত picture
প্রশ্ন
আসসালামুআলাইকুম হুজুর আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন।
আমাদের এলাকার এক লোক বলছে হযরত আজরাইল( আঃ) নাকি কানে শুনেনা চোখে দেখেনা এবং কথাও বলতে পারে না।এ কথা কি সত্য।কোরআন হাদিসে এর কোন ভিিও আছে কি। দলিল সহ জানালে উপকৃত হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নাহ, একথার কোন ভিত্তি নেই। মালাকুল মওত তথা আজরাঈল আঃ কানেও শুনেন, চোখেও দেখেন এবং কথাও বলতে পারেন।
একটি হাদীসের অনুবাদ দেখলেই আপনার কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَة رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسْنَا حوله كَأَن على رؤوسنا الطَّيْرَ وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ بِهِ فِي الْأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: ” إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ من السَّمَاء مَلَائِكَة بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ الله ورضوان ” قَالَ: «فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنَ فِي السِّقَاءِ فَيَأْخُذُهَا [ص:513] فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ» قَالَ: ” فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ – يَعْنِي بِهَا – عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذِه الرّوح الطّيب فَيَقُولُونَ: فلَان بن فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى ينْتَهوا بهَا إِلَى سَمَاء الدُّنْيَا فيستفتحون لَهُ فَيفتح لَهُ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا حَتَّى ينتهى بهَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ – فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ وَمِنْهَا أخرجهم تَارَة أُخْرَى قَالَ: ” فتعاد روحه فيأتيه ملكان فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولُونَ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ الله فَيَقُولُونَ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُول: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاء أَن قد صدق فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ
হযরত বারা বিন আযেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে এক আনসারী লোকের জানাযায় বেরিয়েছি। আমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছলাম। কিন্তু তখনো কবর খোঁড়া হয়নি। তখন রাসূল সাঃ বসে গেলেন এবং আমরা তার চার পাশে এমনভাবে বসে গেলাম যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তখন তাঁর হাতে একটি কাঠের টুকরা ছিল, যা দিয়ে তিনি মাটিতে দাগ কাটছিলেন। এরপর তিনি মাথা তুললেন এবং বললেন, তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও। কথাটি তিনি দু’বার বা তিনবার বললেন। এরপর বললেন, মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে বিদায় দিয়ে আখিরাতের হতে থাকে তখন উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট একদল ফেরেশতা আসমান থেকে তার কাছে আসেন। যাদের চেহারা সূর্যের মতো। তাদের সঙ্গে বেহেশতের কাফনসমূহের একটি কাফন থঅকে। বেহেশতের সুগন্ধিগুলোর একটি তাদের সঙ্গে থাকে। তারা সে ব্যক্তি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব পরিমাণ দূরে অবস্থান করেন। এরপর মৃত্যুর ফিরিশতা [হযরত আজরাঈল আঃ] আসেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এস আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসূল সাঃ বলেন, তখন তার রূহ বের হয়ে আসে যেমনিভাবে মশক থেকে পানি বের হয়ে আসে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করেন এবং এক মুহুর্তের জন্যেও ঐ ফেরেশতাগণ তাকে মৃত্যুর ফেরেশতার হাতে থাকতে দেন না; বরং তারা নিজেরাই তাকে গ্রহণ করেন এবং তাকে ঐ কাফনের কাপড় ও ঐ সুগন্ধির মাঝে রাখেন। ফলে তার তেকে পৃথিবীর বুকে প্রাপ্ত সকল সুগন্ধির চেয়ে উত্তম মেশকের সুগন্ধ বের হতে থাকে।
রাসূল সাঃ বলেন, তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন, আর যখনি তারা ফেরেশতাদের মাঝে কোন ফেরেশতা দলের কাছে পৌছেন তখন তারা জিজ্ঞাসা করেন, এ পবিত্র রূহ কার? তখন মানুষ দুনিয়াতে যেসব উপাধি দ্বারা ভূষিত করতো সেসবের সর্বোত্তমটি দ্বারা ভূষিত করে ফেরেশতাগণ বলেন, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুকের রূহ। এভাবে তারা প্রথম আসমান পর্যন্ত পৌছেন। অতঃপর তারা আসমানের দরজা খুলতে বলেন, অমনি তাদের জন্যে দজরা খুলে দেওয়া হয়। তখন প্রত্যেক আসমানের সম্মানিত ফেরেশতাগণ তার পরবর্তী আসমান পর্যন্ত বিদায় সম্ভাষণ জানান। এভাবে তাকে নিয়ে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌছানো হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দার ঠিকানা তোমরা ইল্লিয়্যীনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা আমি তাদেরকে জমিন থেকে সৃষ্টি করেছি এবং জমিনের দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করবো। তারপর জমিন থেকে তাদেরকে আবার বের করে আনবো। রাসূল সাঃ বলেন, সুতরাং তার রূহ আবার তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তারপর তার কাছে দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রব কে? তখন সে উত্তর করে, আমার রব হচ্ছেন আল্লাহ। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? তখন সে বলে আমার দ্বীন হলো ইসলাম। তারা আবার তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের কাছে যে লোকটি প্রেরিত হয়েছেন তিনি কে? সে উত্তরে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাঃ। তারা তাকে আবারো জিজ্ঞেস করেন, তুমি এসব কিভাবে জানতে পারলে? সে বলে আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তার উপর ঈমান এনেছি এবং তাকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আসমানের দিকে একজন আহবানকারী ডেকে বলবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে, সুতরাং তার জন্য একটি বেহেশতী বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে একটি বেহেশতী পোশাক পরিয়ে দাও, আর তার জন্য বেহেশতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৫৩৪}
এ হাদীস পরিস্কার প্রমাণ করে আজরাঈল আঃ চোখে দেখেন। তিনি কথা বলতে পারে। তিনি কথা শুনতে পান। সুতরাং তিনি চোখে দেখেন না, কথা বলতে পারেন না, কথা শুনতে পারেন না এমন ভ্রান্ত আকিদা পরিহার করতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
أحدث أقدم