মাহিন ইউনিভার্সিটি তে পড়ছে। ইউনিভার্সিটিতে মাহিন এর দাপট আছে।মাহিন ছাত্র ভাল।আর কারো কোন প্রয়োজন হলে মাহিন এর কাছে আসে।
একদিন মাহিন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।এমন সময় পিছন থেকে একটা মেয়ে ডাকদিল
-মাহিন ভাইয়া।
-জি বলুন(মেয়েটির দিলে তাকিয়ে)
-আমি নতুন ভর্তি হয়েছি। আমি আমার এসাইনমেন্ট নিয়ে সমস্যায় পরেছি।
-ও।
-শুনেছি আপনি অনেককে এসাইনমেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করেন। আমি যেহেতু নতুন সেহেতু যদি আপনি আমাকে সাহায্য করতেন।
-আচ্ছা। বেপার না আমার সাথে কালকে যোগাযোগ করবেন।
-যদি আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিতেন।
-ও। আচ্ছা ০১৭২৩৬৮****
-আমি দরকার হলে যে কোন সময় ফোন করবো কিন্তু।
-আচ্ছা।
.
মাহিন রাতে কম্পিউটার এ কিছু কাজ করছিল। এমন সময়ে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এল। মাহিন ফোন ধরে বলল
-হ্যালো।
-হ্যালো মাহিন ভাইয়া বলছেন?
-হ্যা। আপনি কে?
-আমি রিয়া।
-কোন রিয়া?
-আজ ক্যাম্পাস থেকে নাম্বার নিলাম।
-ও আপনি সে।
-আপনি আমাকে আপনি বলছেন কেন?আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।
-ও। আপনিও তাহলে তুমি বলতে পারেন।
-আচ্ছা বলবো। কি করছিলে?
-কিছু না। কম্পিউটার এ কাজ করছিলাম। তুমি?
-আমি উপন্যাস পড়ছিলাম।
-কার উপন্যাস?
-হুমায়ন আহমেদ এর।
-তুমি হুমায়ন আহমেদ এর ভক্ত?
-হ্যা। কিছুটা। আমরা বন্ধু হতে পারি?
-মেয়েটির চেহারা ভাল। কথাও বলে ভাল। এমন মেয়ে বন্ধুত্ত করতে চাচ্ছে। তাহলে মিস করা যাবে না(মনে মনে)
-কি হল?
-হ্যা হতে পারি।
-বায় পরে কথা হবে।
এভাবেই তাদের বন্ধুত্ত শুরু। তারপরে মাহিন রিয়াকে সব সময় সাহায্য করে। তারপরে বন্ধুত্ত থেকে প্রেম। তবে মাহিন তাকে জানাতে পারছিল না। অবশেষে জানাল রিয়াকে।
রিয়া শুনে হাসলো। তাহলে তো রাজি। তারপরে তাদের প্রেম চলতে থাকলো।
একজন অন্যজনের সব খবর রাখতো।তারা তাদের কথা একে অপরকে না জানিয়ে থাকতেই পারতো না। একদিন মাহিন দেখলো রিয়ার সাথে একটা ছেলে। রিয়া মাহিন কে পরিচয় করয়ে দিল। হঠাত মাহিন রিয়ার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করলো। একদিন মাহিন রিয়াকে ফোন করলো কয়েকবার। কিন্তু ফোন ধরলো না।
হঠাত রাস্তা দিয়ে হাটছিল। এমন সময়ে দেখলো রিয়ার বন্ধু রাতুল এর সাথে রিয়া ঘুরছে। পরে রাতে ফোন করলো রিয়াকে। রিয়া ফোন ধরে বলল
-হ্যালো।
-তোমাকে দিনে কয়েকবার ফোন করেছিলাম। ফোন ধরলে না কেন?
-আসলে ফোনটা সাইলেন্ট ছিল। আর তখন আমি ইউনিভার্সিটি তে ক্লাস করছিলাম।
-সত্যি ক্লাস করছিলে?
-কেন আমার কথা বিশ্বাস হয় না?(রেগে গিয়ে)
-তুমি আজকে তোমার ওই বন্ধুর সাথে ঘুরছিলে কেন?
-আমি কার সাথে ঘুরবো সেটা আমার পার্সোনাল বেপার।
-তাই বলে আমার ফোন ধরবে না?
-আমি তো বললাম আমি ক্লাস এ ছিলাম।
-তুমি ক্লাস এ ছিলে না। তুমি তখন ওই ছেলেটার সাথে ঘুরছিলে।
-কে বলেছে?
-আমি দেখেছি।
-দেখেছ তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?
-ছেলেটা কি শুধুই তোমার বন্ধু?
-কেন আমার বয়ফ্রেন্ড মনে হয়?
-যেদিন থেকে ছেলেটিকে দেখেছি। তারপর থেকেই তোমার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। সত্যি করে বলতো ছেলেটা তোমার বন্ধু নাকি বয়ফ্রেন্ড?
-হ্য। বয়ফ্রেন্ড। তুমি আর আমাকে ফোন দিবে না।
রাগ করে কয়েকদিন মাহিন ও রিয়ার সাথে কথা বলে না। কিন্তু রিয়ার সাথে কথা না বলে মাহিন থাকতে পারে না।তাই মাহিন নিজে থেকেই রিয়ার সাথে আবার কথা বলতে থাকে। তার বন্ধুর বেপারটাও মাহিন কিছু বলল না।
.
হঠাত বাড়ি থেকে মাহিন এর বিয়ের কথা বলল। তাই মাহিন রিয়াকে বিয়ের জন্য বলল। কিন্তু কিছুতেই রিয়া বিয়েতে রাজি হলো না।
কয়েকদিন ভালই কাটছিলো।
একদিন মাহিন থেকে বাসায় ফেরার সময়ে দেখলো রিয়া রাতুল এর সাথে পার্কে বসে আছে। রাতুল রিয়ার কাধের উপরে হাত দিয়ে বসে আছে। মাহিন গাড়ি থামিয়ে কাছে গিয়ে কথা বলতেই দুজন চমকে উঠলো।
মাহিন বলল
-এই কি তোমার বন্ধু?
-হ্যা।
-বন্ধুর সাথে কেউ এভাবে বসে থাকে?
-থাকবো তাতে তোমার কি?
-আমার কি মানে? সত্যি করে বলো এটা তোমার বন্ধু নাকি প্রেমিক?
-হ্যা।এটা আমার প্রেমিক। আর আমি একেই ভালবাসি।
-তাহলে আমি?
-তুমি কি। তুমি নিজে থেকেই আমার পিছনে ঘুরেছো।
-তাই আচ্ছা ভাল থেকো।
বলে বাসায় চলে এল। বাসায় এসে দেখলো তার মা অসুস্থ। মাহিন পাগলের মত হয়ে গেল। মাহিন তার মা কে অনেক ভালবাসে।
মাহিন ডাক্তার কে ফোন করলো। ডাক্তার এসে মাহিনের মা কে দেখলো। দেখে মাহিন কে বলল
-দেখুন এই সময়ে আপনার মায়ের যত্ন নেয়া জরুরি।
-তাহলে কি করতে হবে?
-সব সময় আপনার মায়ের কাছে একজন কে থাকতে হবে।আর যত্ন নিতে হবে।তাহলে আপনার মা ভাল হয়ে যাবে।
-আচ্ছা।
মাহিম ভাবতে থাকলো কে মাকে দেখাশোনা করবে? মাহিন মায়ের কাছে বসে চিন্তা করছিল
মাহিন এর মা বলল
-কি হয়েছে? কি চিন্তা করছিস?
-ডাক্তার বললো তোমাকে যত্ন করার জন্য একজন লোক দরকার। কিন্তু আমি সারাদিন অফিসে থাকি। তাহলে তোমার যত্ন করবে কে?
-একটা বিয়ে কর।আমি ভাল হয়ে যাবো।
.
বিয়েতে মাহিনের রাজি হতেই হল।কারন বিয়া না করলে মাকে দেখার কেউ নেই। মায়ের কথামত বিয়েতে রাজি হল।মায়ের পছন্দ করা মেয়ে। মেয়েটির মিতা। মিতা মেয়েটা অনেক ভাল।মায়ের যত্ন করে।বিয়ের পরে মা সুস্থ হয়ে গেল। মিতা মায়ের অনেক যত্ন করে।মাহিন এর ও অনেক খেয়াল রাখে।
কিন্তু মাহিন এখন ও মন থেকে রিয়াকে ভুলতে পারে নি। একদিন মাহিনের রাতুলের সাথে দেখা হল।মাহিন জিজ্ঞেস করলো
-কি বেপার? কেমন আছো রাতুল?
-ভাল না।
-কেন? ভালই তো থাকার কথা। রিয়াকে পেয়েছ।
-আপনার মত আমাকেও রিয়া ধোকা দিয়েছে।সে আমাকে ভালবাসে নি।
-তাহলে কি আমাকেও সে ভালবাসে নি?
-হ্যা।আপনাকে ও ভালবাসে নি।
-কিন্তু কেন?
-জানি না।আচ্ছা আসি।
মাহিন ভাবলো এতদিন সে কার জন্য ভেবেছে। কার জন্য কষ্ট পেয়েছে? যে মাহিন কে কোনদিন ভালবাসে নি। রিয়া মাহিনের ভালবাসা বোঝার চেষ্টা করে নি।
আর যে মেয়েটি মাহিন কে পাগলের মত ভালবাসে। তার ভালবাসা মাহিন বুঝলো না?
মাহিন এর বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে মাহিন দেখলো মিতা ঘুমায় নি।মাহিন এর জন্য অপেক্ষা করছে। মাহিন বাড়ি ফিরে খেতে বসে বলল
-মা খেয়েছে?
-হ্যা।মাকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি।
-তুমি খেয়েছ?
-না। আপনি খেলে খাবো।
-আমার জন্য আপেক্ষা করার কি আছে?
-আপনি না খেলে কি আমি খাই?
-তুমি আমাকে আপনি বলো কেন? আজ থেকে তুমি বলবে।
-আচ্ছা। তুমি আমার সাথেই খেতে বসো।
-খাওয়া হয়ে গেছে?
-খেতে ইচ্ছে করছে না।
-কেন? শরির খারাপ? কি হয়েছে?(গায়ে হাত দিয়ে)
-অত অস্থির হচ্ছ কেন? আমি শুতে যাচ্ছি।তুমি খেয়ে শুতে আসো।
মাহিন খেয়ে চলে গেল।সবকিছু আজকে মিতার কাছে কেমন যেন লাগছে। মাহিন আজ তার সাথে এত সুন্দর ব্যাবহার করছে কেন?
মাহিন ক্লান্ত অবস্থায় শুয়ে পরলো বিছানায়। একটু পরে মিতা এসে চাদর টেনে দিচ্ছিল। এমন সময়ে মাহিন টের পেল। উঠে বলল
-তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো?
-হ্যা।অনেক ভালবাসি।
-আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে?
-তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ?
-তুমি যত ভুল করো তবুও আমি কিছু মনে করবো না।
-আমি তোমার ভালবাসা বুঝতে পারি নি।আজ বুঝছি তুমি আমাকে কত ভালবাসো।
-তুমি আমাকে ভাল না বাসলেও তোমাকে ভালবাসবো।
-আই লাভ ইউ মিতা। আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে?
মিতার আজ অনেক ভাল লাগছে।কারন
মিতা এই দিনের জন্য অনেক অপেক্ষা করেছে। যেদিন মাহিন তাকে অনেক ভালবাসবে। তাকে আপন করে নিবে।মিতা মাহিন কে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকলো।
মাহিন বলল
-আরে কাদছো কেন পাগলি?
-সুখে কাদছি। আজ পৃথিবির কেউ আমার চেয়ে সুখি না।
-সারাজিবন তোমাকে জড়িয়ে থাকবো। কোথাও হারাতে দিব না।
-আমিও তোমাকে হারাতে দিব না। আই লাভ ইউ স্বামি।
-লাভ ইউ বউ।
দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে কাদতে থাকলো। সুখের কান্না। আজ মাহিন মিতার ভালবাসা বুঝতে পেরেছে।মিতার ভালবাসা ছিল মাহিন এর কাছে অবুঝ ভালবাসা।