কবির
ভাষায় কবরী, আর আমাদের সরল ভাষায় খোঁপা। একসময় শাড়ির সঙ্গে এলোকেশগুলোকে
উঁচু করে বেঁধে নেওয়াই ছিল ফ্যাশন। হাল আমলে কেশ সাজানোর আছে নানা ধরন।
তারপরও শাড়ির সঙ্গে খোঁপা বাঁধা যেন হারিয়ে যাওয়ার নয়। খোঁপায় নকশাদার
কাঁটা গুঁজে দেওয়ার চলটাও বহু পুরোনো। কাঁটার নকশায় ভিন্নতা এসেছে কিন্তু
বিদায় নেয়নি ফ্যাশন থেকে। চুলের খোঁপার সৌন্দর্য যেন বহুগুণে বেড়ে যায়
বিভিন্ন কেশ কাঁটার ব্যবহারে।
কেশ কাঁটার আদি কথাধারণা করা হয়, এশিয়া মহাদেশেই খোঁপার কাঁটার সূত্রপাত। মোটেই নয়! বরং কাঁটার প্রচলন শুরু প্রাচীন মিসরে। সেই হাজার হাজার বছর আগে মিসরীয় রানিরা চুলে সোনার কাঁটা ব্যবহার করতেন। গ্রিক ও রোমান মেয়েদের মধ্যেও সোনা বা রুপার কাঁটার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় ছিল। সোনা-রুপা ছাড়াও কাঠের কাঁটা চলত বেশ। তামার কাঁটাও ব্যবহার করা হতো সেই সময়ে।
আছে নানান ধরনমা কিংবা নানি-দাদির আমলে একহারা গড়নের হাতখোঁপায় দেখা যেত রুপার কাঁটা। সেই যুগ পেরিয়ে কবরীর কাঁটায় স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন উপকরণ। কাঠ থেকে শুরু করে প্লাস্টিক, মাটি, ধাতব—এমনকি হাতির দাঁত কিংবা উটের হাড়ের তৈরি কাঁটাও পাওয়া যায়। এ ছাড়া কড়ি, ছোট আকৃতির শঙ্খ, অর্জুন বীজ, বিভিন্ন রঙের পাথর, পুঁতির নানা নকশার কাঁটাও রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পাওয়া যাবে বিভিন্ন রঙের মিশেল এবং নানা আকৃতি। কোনো কাঁটার পেছনে একটা ঝুনঝুনি, কোনোটার পেছনে পাতা, কলকার মতো আকৃতি দেওয়া। আবার কোনো কাঁটার পেছনটা জুড়ে রয়েছে ময়ূরের বর্ণিল পাখা। কিছু খোঁপার কাঁটা আবার কানের দুলের সঙ্গে টানাও থাকে।
এ তো গেল নিত্যদিনের কাঁটার কথা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরার জন্য রয়েছে ভিন্ন ধাঁচের কাঁটা। যেমন ভারিক্কি আমলের রুপার কাঁটা। কাঠ কিংবা ধাতব কাঁটার তুলনায় এতে রয়েছে একটু ভারী নকশা। সঙ্গে বিভিন্ন রঙের মিনার কাজটাও চোখে পড়ার মতো। রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া কাঁটাও কিন্তু বাদ যায় না। বিয়ের কনের খোঁপায় খুব মানিয়ে যায় এ ধরনের কাঁটা। স্বাভাবিকভাবেই এতে থাকে জাঁকজমকপূর্ণ ফুলেল নকশা।
বিভিন্ন স্টাইলের সঙ্গে খোঁপার কাঁটা
সিঁথি করে মাঝখানে একহারা গড়নের সেই খোঁপার প্রচলন কমে এসেছে এখন। বরং একটু স্টাইলিশ খোঁপার বাঁধন চোখে পড়ে। এ বিষয়ে বানথাই বারবার অ্যান্ড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পোশাকের ধরন, মুখের আদল, চুলের কাট কিংবা ঘনত্বের সঙ্গে মিলিয়ে বাছাই করে নিতে পারেন খোঁপার ধরন। আর সেই খোঁপা ধরে বেছে নিন আপনার কেশ কাঁটা। শুধু খোঁপায়ই নয়, বেণির সঙ্গেও এ ধরনের কাঁটা ব্যবহার করতে পারেন।’
চুলে একটা লম্বা বেণি করে তার গোড়ার এটি গেঁথে নিলে সাজটা বৃথা যাওয়ার নয়। কাজী কামরুল প্রথমেই বললেন আটপৌরে শাড়ির প্রসঙ্গে। কথায় আটপৌরে হলেও তেমনটি কিন্তু আর নেই। এই সময়ের নারীরা শাড়িকে বেছে নেন ফ্যাশনের অংশ হিসেবে। সে ক্ষেত্রে অফিসে বা বাইরে বের হওয়ার সময় সুতির শাড়িটা বেছে নেওয়া যায়। সঙ্গে একটু উঁচু করে খোঁপা। চাইলে এক পাশে সাইড নট বেঁধে নিতে পারেন। আর খোঁপায় গুঁজে নিতে পারেন হালকা নকশা করা কাঠের কিংবা ধাতব কাঁটা। আবার জমকালো যেমন শিফন কিংবা নেটের শাড়ির সঙ্গে রুপার কাজ করা, হাতির দাঁতের কিংবা পুঁতি বসানো কাঁটা ব্যবহার করতে পারেন। চলতে পারে ধাতব কাঁটাও। এ ক্ষেত্রে সাইড নটের সঙ্গে মেসি বান করে নিলেও সুন্দর দেখায়। ধাতব ও কাঠের কাঁটা আপনি চাইলে ফতুয়া, কামিজ, কুর্তা ও স্কার্টের সঙ্গে পরতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ চুলের খোঁপা না করে ওপরের অংশের কিছু চুল নিয়ে খোঁপা করলে ভালো দেখায়। সঙ্গে কপালে না হয় পরে নিলেন একটি টিপ।
তবে পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে এ ধরনের কাঁটা একটু বেমানান হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে খোঁপাটা এক পাশে একটু উঁচু করে নিয়ে এতে প্লাস্টিক, পাথর বসানো কিংবা হালকা রঙের পুঁতির কাঁটা ব্যবহার করা যায়।
খোঁপার সঙ্গে মানিয়ে কাঁটা, নাকি কাঁটার সঙ্গে মানিয়ে খোঁপা? হেয়ারোবিক্স ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন বলেন, খোঁপার ধরন অনুযায়ী যেমন কাঁটা বেছে নেওয়া হয়, তেমনি কাঁটার ধরন হিসেবেও খোঁপা করা হয়। কেননা, কাঁটার যে অংশটুকু খোঁপার বাইরে থাকে, তার নকশার ভিত্তিতে খোঁপার স্টাইল করা হয়।
খোঁপার সঙ্গে পোশাক নির্বাচনও একটা বিশেষ দক্ষতা। শুধু শাড়ি বা কামিজ নয়, পাশ্চাত্য ঢঙের পোশাকের সঙ্গেও খোঁপা বা খোঁপার কাঁটা ভালো দেখায়। তানজিমা শারমীন জানান, পুরোনো দিনের সেই হাতখোঁপার সঙ্গে মেসি বান, ফ্রেঞ্চ বান বা খোঁপার প্রচলন এসেছে আজকাল। তবে পোশাকের সঙ্গে চেহারার গড়ন, চুলের ধরন কিংবা দৈর্ঘ্যও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেরই চুল ছোট থাকে। সে ক্ষেত্রে নকল চুল দিয়ে খোঁপা করা যেতে পারে। কপাল বড় হলে সামনে থেকে কিছু চুল ব্যাংগস করে নিয়ে এক পাশে খোঁপা করলেও মানিয়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়েই একটা পরিপূর্ণ স্টাইল তৈরি হবে।
দরদাম
কাঠ, পুঁতি, ধাতব ও প্লাস্টিকের কাঁটা যেকোনো বাজারেই পেয়ে যাবেন। তবে ধাতব কাঁটা নেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন, পরে যাতে রং নষ্ট না হয়ে যায়। গাউছিয়া, নিউমার্কেটের বেশ কিছু দোকানে দেখতে পারেন। এগুলোর দাম পড়বে ৩৫ থেকে ৪০০ টাকা। আর কাঠের একটু ভারী কাঁটা পাবেন ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। আড়ং, বিবিয়ানা, পিরান, মাদলে পাওয়া যাবে হাতির দাঁত, মহিষের হাড় এবং উটের হাড়ের কেশ কাঁটা।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরার জন্য রুপার কাজ করা কাঁটা পাবেন ১১০০ টাকায়। যেহেতু রুপার ভরি ৯২০ টাকা, তাই এ ধরনের কাঁটার দামও একটু বেশি। আর সোনার প্রলেপ দেওয়া কাঁটাও পেয়ে যাবেন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।