একলা পথে অতৈন্দ্রিলা

নীথিকা,মিষ্টি একটা মেয়ে । এ যুগের
আধুনিকাদের মত না । মা- বাবার আদুরে কন্যা । এক বন্ধুর মাধ্যমে ফেবুতে আইডি খুলল ।
প্রথমে ফেবুর কাছুই বুঝত না, পরে আস্তে আস্তে সব শিখে গেল । আইডি নাম ছিল,
“মেঘ বালিকা”।একদিন রাত 9টার
দিকে ফেবুতে এসে দেখে একটা নিউ
রিকুয়েস্ট । নাম “মেঘের ওপারের রাজপুত্র” । নাম টা তার ভাল লাগল । তার
নামের সাথে মিল আছে বলে, এক্সেপ্ট করল ।

image
কিছুক্ষণ পর ঐ আইডি থেকে মেসেজ এল । ও
রিপ্লাই করল । 10মিনিট চ্যাট
করেই ও ঘুমিয়ে পরল । পরদিন
আবার ও ঐ আইডি থেকে মেসেজ এল ।
এবার কিছুক্ষণ চ্যাট করে জানতে পারল,
ছেলেটার বাসা ওদের পাশের এলাকায় । নাম
রোহান । ভার্সিটি স্টুডেন্ট ।
তখন থেকে প্রায়ই নীথিকার সাথে রোহানের চ্যাট হত । ধীরে ধীরে তা ওদের প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয় । রোহান একদিন ওর কিছু পিক নীথিকা কে দিল । অনেক ফরসা না থাকলেও চেহারা ভালই ছিল । ও
নীথিকার পিক চাইল, কিন্তু নীথিকা দিতে চাইছিলনা । অনেক অনুরোধ করার পর ও
দিল ।
কিছুদিন পর , নীথিকা রিকশায় করে স্কুল
থেকে ফিরছিল । হঠাৎ দেখে পাশের রিকশায়
রোহান । ও চিনেও না চেনার ভান করল ।
বাসায় এসে ফেবুতে এসেই রোহানের মেসেজ পেল । রো-আজ রিকশায় তুমি ছিলা….
-নাহ্
-তুমিই ছিলা ।
চিনতে পারছি ।
-তাই নাকি ?
-হুম ।
ওদের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমপথে অগ্রসর
হচ্ছিল । দুজনি দুজনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিল । উভয় ই সেটা বুঝত । কিন্তু কিছু বলতনা ।
একদিন রোহান ওকে প্রোপোজ করে । ও
না করে দেয় । কিন্তু রোহান মানতে চাইছিল না । কিছুদিন ঘুরানোর পর ও “হ্যাঁ বলে দেয়
। শুরু হয় দুষ্টমিষ্টি প্রেম । রোহান একদিন
দেখা করতে বলে । কিন্তু নীথিকা না করে দেয় । অনেক জোরাজোরির পর ও রাজি হয় । এক বিকেলে দুজন দেখা করে । রিকশায়
করে দুজন পাশাপাশি বসে অনেকটা সময়
কাটিয়ে দেয় ।এভবেই কেটে যায় কয়েক মাস ।
নীথিকা অনেক ভালবাসত ওকে । সারাটা দিন ওর কথাই ভাবত ।
ও এর মাঝে কিছু কথা আছে । রোহান মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ।অনেক টানাপোরণে ওদের সংসার চলে । আর নীথিকা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় সব সময় বাড়তি টাকা থাকে ওর কাছে । রোহানকে প্রায়ই
টাকা দিয়ে সাহায্য করে ও । পরীক্ষার সময় , ঈদের সময় , আর এর মাঝে আরেক বার আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছে ।
কিন্তু এসব নীথিকার কাছে কোন ব্যপার না ।
কারন , ও রোহান কে অনেক ভালবাসে আর বিশ্বাস করে । ও এটাও বিশ্বাস করে, একদিন
ওর কোন অভাব থাকবেনা । অনেক টাকা উপার্জন করবে আর নীথিকা কে হ্যপি রাখবে ।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর,ফেবুতে একরাতে ওরা চ্যাট করছে , ঐ সময়
আরেকটা মেয়ের সাথেও চ্যাট হচ্ছিল নীথিকার । মেয়েটার নাম তরী । এর আগে কোথায় যেন নামটা দেখেছ । ওহ্ ,মনে পরেছে,
রোহানের টাইমলাইনে……।
কমেন্টে,
তরী- কী করছ ?
নীথি- কিছুনা । জাস্ট
চ্যাটিং
– কার সাথে ?
– এই তো ফ্রেন্ডসদের সাথে ।
তুমি?
– আমি রোহানের সাথে।
– কোন রোহান ?
– মেঘের ওপারের রাজপুত্র ।
– ও তোমার কেমন ফ্রেন্ড?
– অনেক ভাল ফ্রেন্ড
– বয় ফ্রেন্ড ?
– সেটা ওকেই জিগ্যেস কর
– কেন, তুমি বলতে পারনা ?
– হুম , ও আমার জান ।
– মানে ?
– মানে আমার বিএফ ।
– তুমি আমার সাথে মজা নিচ্ছ?
– নাহ তো । কেন?
– রোহানের সাথে তো আমার রিলেশন……..
– কিহ!!!
– হুম
ঐ দিন রাতে নীথিকা আর তরী অনেকক্ষণ চ্যাটে দুজন দুজনের কথা বলল । তরী ওর
ফোন নাম্বার নিয়ে রাখল । সব কিছু বুঝেও চুপ করে থাকল , কিছু বল্লনা রোহান কে । সারারাত চোখের পাতা একবার ও
এক করতে পারেনি । কেঁদেই চল্ল সারারাত ।
পরদিন বিকেলে তরী ওকে ফোন দেয়
। সরাসরি কথা বলে দুজন । সব
শুনে নীথিকা কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছিলনা । প্রায় 1ঘন্টা কথা বলে দুজন ।
ওর থেকেও করুণ কাহিনী যেন
মেয়েটার ।
তরীর সাথে রোহানের পরিচয় হয় ফেবুতে । বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসা । সেলফোনে কথা বলার খরচটা ঐ মেয়েটাই দিয়েছে সবসময় (রিলেশনের শুরুতে রোহান দিত)।
এমনকি নীথিকার কাছ থেকে ও যেভাবে আর্থিক সাহায্য নিয়েছে, তরীর কাছ
থেকেও এক ভাবেই নিয়েছে আরো বেশি । আর রিলেশন নিউ, কিছুদিনের ।
এর মাঝেই দুজনের শারীরিক
সম্পর্কও হয় । (নীথাকাকেও শারীরিক
সম্পর্ক করার কথা বলেছিল রোহান, নীথিকা না করে দেয় , ব্রেকআপ করতে চায় । তখন
রোহানই অনেক বুঝিয়ে রিলেশনটা টিকিয়ে রেখেছিল ) নীথিকা রাগ
না করে,মাথা ঠান্ডা রেখে, ভালভাবেই কথা বলে মেয়েটার সাথে । শেষ কথা এরকম, রোহানের কাজই হচ্ছে, মেয়েদের সাথে ভালবাসার অভিনয় করা আর টাকা নেয়া । শুধু নীথিকা- তরীর সাথেই না,
আরো কয়েকটা মেয়ের সাথে এমন করছে ও ।
তো নীথিকা আর তরী ঐ রাতেই গ্রুপচ্যাট করে, রোহান কে এড দিয়ে ।
রোহান ওখানে কাকে কি বলবে বুঝতে পারেনা ।
ও সত্তিটা স্বীকার করে নেয় । নীথিকা তখনই ব্রেকআপ করে ওর সাথে । কিন্তু
তরী ব্রেকআপ করতে পারেনা শারীরিক
সম্পর্কের কারনে।
তারপর আর কখনো নীথিকা ওদের খোঁজ
নেয়নি । তখন থেকেই নীথিকা একা । এর
মাঝে রোহান কয়েকবার ও কে ফোন দিয়েছিল, কিন্তু ও কথা বলেনি । এখন আর
কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা সে ।
কাউকে ভালবাসতে পারেনা ।
স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট আজো ভুলতে পারেনি ।
নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে সবসময়।
কী মনে হচ্ছে এখন ? রোহান তরীর সাথেই রিলেশন রাখবে? নাহ্, রাখবেনা । ঠকাবে ওকে । তার টাকা- শারীরিক চাহিদা মিটে গেলেই
ওকে ছেড়ে অন্য একজনকে নিয়ে শুরু করবে তার এই জঘন্য প্রেমখেলা । নীথিকা আল্লাহ্ এর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ, তরীর মত
অবস্থা তার হয়নি । আগেই সাবধান হতে পেরেছে ।
এ গল্পে ব্যবহৃত নামগুলো কাল্পনিক ।
কারো সাথে মিল থাকলে লেখিকা দায়ি নয় ।
রোহান চরিত্র শুধু ছেলেদের নয়, মেয়েদের মাঝেও এমন আছে, যে টাকার নেশায় সম্পর্ক
করে
أحدث أقدم