Valobaser Golpo ---ধীরে ধীরে রিয়ার ফানটা যেন বেড়েই চলেছে

Image result for Valobashar Golpo,
গল্পটা শুধু একটি গল্পই নয়, বাস্তবিক একটি জীবণ।আমার কাছে গল্পটা খুবই হৃদয় বৃদায়ক মনে হয়েছে।
গল্পটা পাল্টে দিয়েছে একটি জীবণ...........
....
.
একটা কোম্পানীতে রনি আর নীল চাকরী করত।চাকুরীর ক্ষেত্রে নীল ছিল রনির সিনিয়র তবে তাদের দুজনের সম্পর্ক ছিল ভাইয়ের মত। একই বাসায় এমনকি একই রুমে থাকত নীল আর রনি।
একদিন তাদের অফিসে নতুন মেয়ে স্টাফ জয়েন করে।নাম ছিল রিয়া।খুবই চঞ্চল আর মিশুক স্বভাবের মেয়ে ছিল এই রিয়া।দারুন তার কথা বলার ভঙ্গিমা আর চেহারাটাও মায়াবী।যেদিন মেয়েটি জয়েন করে সেদিন ছিল রনি ছুটিতে ,সেই সুবাদে বেচারা রনির আর নতুন ম্যাডামকে দেখার সুযোগ হয়নি ঐ দিন।
.
পরদিন অফিসে গিয়ে রনি তো অবাক,এত সুন্দর মেয়ে।কি মায়াবি চোখ!!!!!!
মুখের চাহনি দেখলে মনে হয় যুগ যুগ চেয়ে থাকি ঐ মুখের দিকে।যেন চোখের পলক না পড়ে। একটু তাকিয়ে যেন গলা ছেড়ে গাই, "তোমায় দেখলে মনে হয় হাজার বছর তোমার সাথে ছিল পরিচয় ''.......
একজন স্টাফ নতুন ম্যাডামকে রনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।রনি ছিল ঐ অফিসের দ্বিতীয় পদের লোক।সেই সুবাদে সম্পর্কটা বেশ ভালোই জমে ম্যাডামের সাথে এভাবেই দিন যায় কাজে কর্মে আড্ডা হাসি আর ফান করে।
.
রিয়ার বড় বোন রিমা ছিল একই কোম্পানীর স্টাফ এবং রনির খুব পরিচিত। রনি রিমাকে আপু বলেই ডাকত। চাকরি জয়েন করার আগে রিয়া রিমার মুখে রনির কথা অনেক শুনেছে......
তখন থেকেই রনির প্রতি একটা আকর্শন জন্মে রিয়ার........
.
ধীরে ধীরে রিয়ার ফানটা যেন বেড়েই চলেছে।সে রনির খুব কাছের হয়ে গেছে এবং বেশি ফান করে।একদিন রনি রিয়ার ফেসবুক আইডি পায় এবং রিয়াকে রিকুয়েস্ট পাঠায়।দুদিন পরে রিকুয়েস্ট এস্কেপ্ট ও করে রিয়া।আর এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের ফেসবুকে কথা বলা।প্রতিদিন অফিস শেষে বাসায় গিয়ে রিয়া রনিকে ফোন করত।ম্যাসেঞ্জার
ে ভিডিও ফোনও দিতত।এভাবেই সম্পর্কটা গাড়ো হয়ে যায়।
.
এরকম একদিন রিয়া রনিকে ভিডিও ফোন করে,কিছুক্ষণ কথা বলার পর রনিকে প্রপোজ করে।
.
একটা মেয়ে রনিকে প্রপোজ করেছে এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত..............
কিন্তু না এটা রিয়ার কাছে শুনে,রনি যেন আকাশ থেকে পড়ল।যদিও রিয়া ছিল যথেষ্ঠ স্মার্ট সুন্দরি এবং শিক্ষিত মেয়ে,কিন্তু প্রধান সমস্যাটা হলো রিয়া ছিল অন্য ধর্মের।হয়তোবা এই সম্পর্ক পরিবার থেকে মেনে নেবেনা। সম্পর্কটার কোন ভবিষ্যত থাকবেনা আর এসব ভেবেই রনি কখনো রিয়ার দিকে ঐ নজরে দেখত না.........
একটু থমকে এসব ভাবতেই রনি লক্ষ করলো রিয়ার চোখে পানি।মেয়েটা যেন কোন বিশেষ কিছু হারিয়ে কাদছে।
.
এভাবে কিছুক্ষন চলছে,রনি বোঝাতে চাইল তুমি তো আমার ব্যপারে কিছু জানোনা মাত্র কদিন দেখেছো তখনি রিয়া বলে আমি সব জানি আপুর মুখে আপনার অনেক কথা শুনেছি। আমি আপনাকে ভালবাসি আপনার জন্য সব করতে পারি।
.
তারা দুজন দুই ধর্মের তাই এই সম্পর্ক সম্ভব না কিন্তু মেয়েটা তার ধর্ম পরিবর্তনেও রাজি ।এরপর আর কোনো বাধা থাকেনা তাই রনিও রাজি হয়ে গেল।রনি রিয়ার নামটা পরিবর্তন করে রাখল জান্নাত,কারণ ছোট থেকেই এই নামটার প্রতি কেমন একটা মায়া ছিল রনির,এভাবেই শুরু হলো রনি আর জান্নাতে জীবনে নতুন প্রেম।একদিন রনি আর জান্নাত ঘুরতে গেল।দুজনেই দুজনার পূর্বের জীবনী বলল দুজনকে,সেদিন থেকে রনি জান্নাতের ওপর বেশি দূর্বল হয়ে পড়ে।মেয়েটার পূর্বে কিশোর নামের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল।কিন্তু কিশোর মেয়েটাকে অবহেলা করত,তার জীবনের কষ্টের কাহিনি শুনে রনি নিজেই ইমোশনাল হয়ে যায় এবং চোখ বেয়ে পানি চলে আসে,রনির ভেতরে জন্মে রিয়া তথা জান্নাতে জন্য অগাধ ভালোবাসা।
.
দুজন দুজনার পরিবারে সম্পর্কটা জানায় রনির পরিবার মেয়েটির ধর্ম পরিবর্তনের কথা শুনে মেনে নেয় এবং রিয়ার পরিবারও তার বড় বোন রিমার সাপোর্টে খুব সহজেই সম্পর্কটা মেনে নেয় যা সচরাচর সবার জীবণে হয়না।রিয়া আর রনির সম্পর্ক অফিসের কেউ জানতোনা খুব সুন্দরভাবেই অফিসে তারা কলিগ আর বাইরে সম্পর্কে প্রেমিক যুগল।কিন্তু তাদের এই প্রেম ভালোবাসায় খুব সহজেই ফাটল ধরে...........
.
দুজনের জীবনের মাঝে চলে আসে নীল নামের সেই ভাইটি,এর জন্য নীল নয় রিয়াই দায়ী ছিল। ঠিক যেইভাবে রিয়া রনিকে প্রপোজ করেছিলো একইভাবে নীলকেও প্রপোজ করে।আর নীলও কদিন বাদে রাজি হয়ে যায়।নীল, রনি আর রিয়ার ব্যাপারটা জানতনা।
রনি নীলকে বলতে সে জান্নাত নামের একটা মেয়েকে ভালবাসে এবং জান্নাত তাকে তার চেয়েও বেশি ভালবাসে কিন্তু কখনোই নীলকে বলেনি সেই রিয়ায় জান্নাত।
যাইহোক নীল আর রিয়ার সম্পর্কটা রনি একসময় জানতে পারে।কিন্তু রিয়া তা অস্বীকার করে।বলে যে নীলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই জাস্ট সিনিয়র বস তাই কথা বলে। এভাবে বেশ কয়েকবার রনির চোখে তাদের সম্পর্কের আভাস ধরা পড়ে। রিয়া রনিকে অনেকটা অবহেলা করতে থাকে আগের চেয়ে। আগের মত কথা বলে না খোজ নেয়না। যে সময় নীলের ফোন ওয়েটিং থাকতো ঐ সময়ই রিয়ার ফোনও ওয়েটিং পেত রনি। আবার দুজনেরটাই একসাথে ওয়েটিং থেমে যেত । নীল আর রনি একই রুমে থাকত।রনি প্রায়ই দেখত গভীর রাতেও নীল রিয়ার সাথে কথা বলছে।একদিন রনি এসব কথা রিয়াকে যথেষ্ঠ প্রমাণসহ বলে এবং সেদিন রিয়া সব স্বীকার করে নেয়। রিয়া সরাসরি বলে আমি তোমাকে নয় নীলকে ভালবাসি আজ থেকে আমাকে আর বিরক্ত করবা না।
.
এরপর থেকে শুরু হয় রনির রাত জাগা, না খেয়ে থাকা এবং প্রতিদিন ঘুমের ঔষুধ খাওয়া । বড়ভাই হিসেবে নীল অনেক বোঝাতো রনিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করত কিন্তু রনি কখনোই নীলকে তার কষ্টের কথা বলত না। নীলকে ব্রেকআপের কথা বলেছে কিন্তু সেই ব্রেকআপের কারণ যে নীল নিজেই তা কখনো বলে নি। নিজেই নিজের ভিতরে গুমড়ে কেদেছে আর কষ্ট পেয়েছে রনি।
.
একদিন নীল রিয়ার মোবাইলে রনি আর রিয়ার একত্রে কিছু ছবি দেখে বুঝতে পারে তাদের সম্পর্কের গভীরতা, বুঝতে পারে রিয়ায় রনির সেই জান্নাত। আগে না জেনে রিয়ার প্রেমে পড়েছে আর এখন যখন সবটা জানে তখন ছোট ভাইএর মত রনিকে কি করে ঠকাবে নীল???? তাই নীলও রিয়ার জীবন থেকে সরে যায়। ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায় নীল কাউকে কিছু না বলে।
পরদিন রিয়া রনিকে ফোন করে প্রথমত রনিকে দোষারোপ করে পরে রনি নীলকে ফিরিয়ে আনার ওয়াদা করে রিয়ার কাছে।
রনি অনেক বুঝিয়ে সুজুয়ে নীলকে ফিরিয়ে আনে।
রনি বুঝতে পারে নীল সত্যিই রিয়াকে ভালোবাসে এবং রিয়াও তাকে না নীলকে ভালোবাসে।তাই ভালোবাসার মানুষটিকে সুখী দেখার জন্য রনি নিজের ভালোবাসাকে উৎসর্গ করে দেয় নীলের কাছে।
শীঘ্রই রনি ঐ অফিস থেকে ট্রান্সফার নিয়ে চলে যায় দূরে কোথাও।হয়ত নীল আর রিয়া এখন সুখেই আছে, সুখে থাকারই কথা...................
আর দূরে থেকে রনি তাদের সুখী দেখেই সুখী।
তবে রাতের আকাশে প্রতিদিন সুক তারা ফোটে কিন্তু রনির জীবনে সুকতারা আর ফোটেনা। বর্ষার বাদলের মত রনির চোখের পানি আজো ঝরে নিজের অজান্তেই। এতটা গভীরভাবে যে মেয়েটা ভালবাসত তার এমন পরিবর্তন রনি মন থেকে আজো মেনে নিতে পারে নি। রিয়াকে হারিয়ে রনি সুখে নেই তাইতো গল্পটা বলার সময় চোখ ছলছল করছিল। মুখ লুকিয়ে মাঝে মাঝে মুচছিল চোখের পানি । শেষে জানিনা কেন আমার চোখের কোণেও পানি এসে গেছিল রনি ভাই এর গল্প শুনে। স্যালুট ইউ বস প্রকৃত ভালবাসার প্রতিদান দেখানোর জন্য..........সমাপ্ত
নবীনতর পূর্বতন