মা জলদি নাস্তা দাও আজকে অফিসে তাড়াতাড়ি যেতে হবে নতুন এম.ডি জয়েন করছে।
মা:তুই টেবিলে বস আমি নাস্তা নিয়ে আসছি....
আমি:আচ্ছা।
এর মধ্যেই আমার পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমি নুসরাত জাহান মাহি, সবাই আমাকে মাহি বলেই ডাকে।আর আমি খুব সুন্দর আর শান্ত স্বভাবের মেয়ে সবাই তাই বলে
। আমার ছোটো একটা পরিবার। সেখানে আমি আর আমার মা থাকি। আমার বাবা আমাদের সাথে থাকেননা। আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন বাবা মা কে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন। ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল তারা দুজন।কিন্তু সম্পর্ক টা টিকেনি। সেই থেকেই মা আমাকে নিয়ে একা থাকেন।অনেক বিলাসিতাই বড় করেছেন আমাকে। কখনও কষ্ট কি জিনিস আমাকে বুঝতে দেননি।কারণ মায়ের পাশে আমার নানু বাড়ির সাপোর্ট ছিল।
থাক অনেক কিছু বলে ফেললাম, আমাকে এখন খাবার টা তো খেতে হবে।
মা: নে ধর পুরোটা খাবি কিন্তু। প্রতিদিন তো হাফ খেয়ে চলে যাস।
আমি: উমম.. মা আজকে তো আরো জলদি যেতে হবে। নতুন এম.ডি আসবে আর আমি তার পি.এ। তাড়াতাড়ি না গেলে হয়?? (খেতে খেতে)
মা: তাই বলে কি না খেয়ে যেতে হবে নাকি? আর দিন দিন যা ফিগার বানাচ্ছিস কিছুদিন পর তো তোকে চোখেও দেখা যাবেন।
আমি: আহা,মা স্লিম না থাকলে আমি কাজ করবো কিভাবে। আর মোটা হয়ে গেলে ছেলেরা যদি আমার দিকে না তাকাই??
আচ্ছা আমার খাওয়া শেষ, আমি আসি। তুমি খেয়ে নিও।
মা: আচ্ছা সাবধানে যাস।
আমি: উফফ তাও অনেকটা লেট হয়ে গেলো। না জানি নতুন এম.ডি কেমন হবে। ভাবতে ভাবতে অফিসে পৌঁছে গেলাম।
-good morning, mam
-good morning everyone.
মি.আসিফ: আরে মাহি, তুমি এতো লেট কেনো? এম.ডি সাহেব অলরেডি চলে এসেছেন। তাড়াতাড়ি এসো welcome করতে হবে।
আমি: হ্যা চলো। আসলে জ্যামে আটকে গেছিলাম। তাই এতো লেট হলো।
মি.আসিফ: দেখে দেখে আজকেই তোমাকে জ্যামে পড়তে হলো? শুনেছি নতুন এম.ডি নাকি খুব কড়া মেজাজের লোক।
আমি: ওহ্ তাই নাকি!! এই ওয়েট ওয়েট ওনার নাম টাই তো জানা হয়নি। নামটা কি?
মি.আসিফ: হা হা হা এখন পর্যন্ত নাম টাই জানোনা!!
.......................
মি.আশফি চৌধুরী: Hello everybody. আমি আশফি চৌধুরী আপনাদের নতুন এম.ডি।
- welcome sir ( অফিস স্টাফ)
আমি: welcome sir. আমি আপনার....... (কথা শেষ করার আগেই মি.আশফি কথা বলা শুরু করলেন)
মি.আশফি: আমি যেহেতু এখানে নতুন তাই আমি আপনাদের সকলের সাহায্য কামনা করবো। ম্যানেজার সাহেব আপনি আমার চেম্বারে আসুন।
ম্যানেজার: ok sir.
মিস নিলা: wow আমাদের আশফি স্যার তো পুরাই হিরো। এত্তো young, smart r dasshing . আমি তো পুরো প্রেমে পড়ে গেলাম।(অফিস স্টাফ)
আমি: হুম। সেটা তো ঠিক আছে। কিন্তু বিহেভিয়ার টা এমন কেনো? আমি welcome করলাম আর আমাকে কিভাবে avoid করলো!!
মি.আসিফ: আগেই বলেছিলাম উনি একটু কড়া মেজাজের মানুষ।
আমি:হুম... একটু না অনেকটাই।
মি.আশফি: আচ্ছা ম্যানেজার সাহেব আপনি এখন আসতে পারেন।
ম্যানেজার : ok sir.
মি. আশফি: আমার চেম্বারর আসুন।( টেলিফোন পি.এ কে)
আমি: May I come in sir??
মি. আশফি: yeah come in. বসুন।
আমি: thank u sir.
মি.আশফি:welcome. আপনি এখানে কত বছর হলো কাজ করছেন?
আমি: 2 years sir.
মি. আশফি: এই ২ বছরে আপনি ঠিক কত বার লেট করে এসেছেন?
আমি: স্যার আমি always right time এ অফিসে আসি।actually আজকে জ্যামে আটকে গেছিলাম তাই আর কি...........( কথা থামিয়ে)
মি. আশফি: shut up. আমি এই excuse জিনিসটা একদম অপছন্দ করি। next time আমি আপনাকে regular right time এ অফিসে দেখতে চাই। Is that clear???
আমি: ok sir
মি আশফি: এখন আসতে পারেন। আর হ্যা আপনার নাম টা তো জানা হলোনা। নামটা কি?
আমি: নুসরাত জাহান মাহি।
মি. আশফি: হুম। তো মিস মাহি এই ফাইলগুলো রাখুন কালকের মধ্যে কাজ শেষ করে এগুলো আমাকে জমা দিবেন।
আমি: স্যার কালকের মধ্যেই দিতে হবে এতগুলো ফাইল?
মি. আশফি: yes...... কালকেই।
আমি: ok sir
মি. আশফি: আর হ্যা শুনুন। প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে at first আমার চেম্বারে আসবেন। এসে আমাকে good morning জানাবেন। তারপর নিজের চেম্বারে যাবেন।Ok....??
আমি: ok sir.......
মি. আশফি: হুম। এখন আসুন। ( আড়ালে মুচকি হেসে)
আমি: হাই খোদা..... এ কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত রুলস ওনার। মুড টা একদম পুরা নষ্ট করে দিল।
আগের এম.ডি স্যার এর কাছে কখনও এমন বকা খাইনি। আর ইনি একদিন আসতে না আসতেই সবাইকে মেজাজের ওপর রাখছেন। বদমেজাজি লোক একটা।
মি.আসিফ: কি ব্যাপার মাহি তোমাকে এমন বিষন্ন লাগছে কেনো?
আমি: আর বোলোনা পুরা মেজাজ টাই বিগড়ে দিল। তারপর আসিফকে সবকিছু বললাম।
আসিফ: হা হা হা। তাহলে এই punishment দিল তোমাকে । যাই হোক অনেক সাবধানে কাজ কোরো। Best of luck
আমি: হুম। Thanks .
আজকে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। এতো কাজ দিয়েছে যে অফিসের কাজ বাসায় আনতে হলো। একদিনে এতো কাজ কি করে শেষ করবো আল্লাহ্ পাক'ই জানে।
মা: কিরে আজকে আসতে এতো দেরি করলি যে?
আমি: ওহ্ মা পরে বলছি আগে খেতে দাও প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে।
মা: কেনোরে আজকে দুপুরে খাসনি?? তোর তো এতো তাড়াতাড়ি কখনো খিদে পাইনা।
আমি: আর খাওয়া...... নতুন এম.ডি স্যার এতো কাজ দিয়েছে যে খাওয়ার কথা ভুলেই গেছি। আর এতো বদমেজাজি জানোনো মা...
মা: তাই নাকি? তাহলে সাবধানে কাজ করিস। আর তুই কখনো মাথা গরম করবিনা,বুঝলি? যা ফ্রেশ হয়ে আই আমি তোকে খাবার দিচ্ছি।
আমি: হুম যাচ্ছি। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসলাম। কাজ করতে করতে রাত ১১:৩০ টা বেজে গেলো। হঠাৎ unknown নাম্বার থেকে একটা message আসলো।messeage এ লেখা ছিল Beshi raat jege kaj kora valona. taratari ghumiye poro. আমি সাথে সাথে সেই নাম্বারে ফোন করলাম। কিন্তু ফোন রিসিভ হলোনা। তারপর কাজ শেষ করতে করতে রাত ১২:৩০ টা বেজে গেলো। কাজ শেষ করে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। খুব সকাল সকাম ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে। উঠে জলদি নাস্তা করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। অফিসে ঢুকেই শুনি সবার মুখে একই টপিক.... স্যার কতো সুন্দর, কতো লম্বা, কি সুন্দর চোখ। চোখ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ঠোট টা কত লাল,গায়ের রঙ টা কতো ফরসা। আর হেয়ার স্টাইল টা তো বলার প্রয়োজন ই নেই।
সবার ভেতর আমি বলে উঠলাম..... একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা??
নিলা: মাহি বিশ্বাস করো আমি বাস্তবে এতো সুন্দর ছেলে কখনো দেখিনি।
আমি: হ্যা তো এখন দেখো। আচ্ছা ছেলে মানুষ যদি মেয়েদের থেকে এতো সুন্দর হয় তাহলে মেয়ে মানুষের সুন্দর হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে???
-ম্যাম আশফি স্যার আপনাকে ডাকছেন।
আমি: হ্যা যাও আসছি। আসতে না আসতেই ডাক পড়ে গেছে... অসহ্য।
আসবো স্যার???
আশফি: আসুন। আপনাকে কাল আমি কি বলেছিলাম ( রাগী মুডে)
আমি: কাল আমাকে কি বলেছিলেন স্যার??
.......................... ও হ্যা মনে পড়েছে। Good morning sir....sorry sir.
একদম ভুলে গেছিলাম। আমি কাজ গুলো ও শেস করেছি। এইযে স্যার।
আশফি : আপনার সাহস হয় কি করে আমার কথা অমান্য করার। আপনার কথা ছিল অফিসে এসে সবার আগে আমাকে morning জানোনো। সেটা না করে আপনি স্টাফদের সাথে গল্প করতে দাঁড়িয়ে গেছেন???
আমি: আর হবেনা স্যার। আমার সত্যিই অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
আশফি : আপনি আমার চোখের সামনে থেকে সরে যান। যান বলছি। ( ধমকের সুরে)
আমি: মন খারপ করে বাইরে চলে আসলাম।নিজের চেম্বারে চলে গেলাম। সকাল থেকেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো। বসতে না বসতেই ফোন আসলো।
হ্যালো নুসরাত মাহি বলছি।
Ok sir. আশফি স্যার ফোন করেছেন চেম্বারে যেতে বলছেন। Oh God....এইতো আসলাম এখনি আবার ডাক পড়লো?
দরজা নক করতেই ভেতরে আসতে বললেন।ভেতরে ঢুকলাম।
আশফি: মিস মাহি আমার জন্য এক কাপ চা আনুন।
আমি: What?? আমি চা আনবো??? চা আনার জন্য তো......( কথা থামিয়ে দিয়ে)
আশফি: Oh just shut up. You are my personal asistant.So আমি অফিসে থাকাকালীন আমার সবরকম ব্যক্তিগত বিষয় আপনাকেই দেখতে হবে। আর যদি সেটা না পারেন তাহলে রেজিগলেশন লেটার দিতে পারেন।
আমি: No sir. আমি এক্ষনি বানিয়ে দিচ্ছি। স্যারকে চা বানিয়ে দিয়ে আমি চলে আসলাম আমার চেম্বারে। মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো। তারপর অনেক কষ্টে কাজে মন দিলাম। কাজ করার সময় চুল গুলো বার বার সামনে আসছিলো তাই চুল গুলো যখন বাধতে গেলাম তখন খেয়াল করলাম স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি দেখার সাথে সাথেই উনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন।
চলবে।
আমি: স্যার আর আমার চেম্বার টা একদম সামনা সামনি। মানে স্যার আমাকে দেখতে পান আর আমিও স্যার কে দেখতে পাই। কিন্তু এই দুই দিনেই আমার কাজের মুড টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র ওনার বিহেভিয়ার এর জন্য।এতো খিটখিটে মেজাজের মানুষ কিভাবে হতে পারে? যাই হোক আমাকে আমার কাজে যেভাবেই হোক মনোযোগী হতে হবে। না হলে আমার চাকরি টা যাবে। আর এই বাজারে ভালো সেলারির চাকরি পাওয়া so tough. তাই আমাকে খুব ধৈর্য রাখতে হবে।
আশফি : ও কি কোনোভাবে বুঝতে পারলো নাকি কিছু? নাহ্ কিছুই বুঝতে পারেনি। বুঝলে Reaction টা অন্যরকম হতো।যাইহোক এতো তাড়াতাড়ি বুঝতে দিলে চলবেনা। মহারাণীর
ঠোঁটের নিচের তিলটা আগের থেকে আরও বেশি কালো হয়ে গেছে। যার জন্য ওর সৌন্দর্য টা আরও বেশি বেড়ে গেছে। আর ফেসটা সেই আগের মতো পিচ্চি পিচ্চিই আছে। হুম, মহারাণী এখন পুরোপুরি কাজে ধ্যান দিয়েছেন এরজন্য কোনোদিকে তাকাতাকি নেই। তাই তিনি দেখতেও পাচ্ছেননা কেউ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভালো...... যত পারো কাজে মনোযোগী হও। কিন্তু এরপর থেকে যে এর থেকে বেশি মনোযোগ আমাকে দিতে হবে বাবু.... ।
আসিফ: কি মাহি!!! আজকের খবর কি?? এরকম একজন হিরো স্যার এর পি.এ হয়ে সময় কেমন যাচ্ছে??
আমি: তোমার কি গল্প শোনার ইচ্ছে হয়েছে?
আসিফ: হুম Dear খুব।
আমি: তাহলে গল্পের শিরোনাম টাই শুনো। পার্সোনাল এসিসট্যান্ট থেকে পার্সোনাল চাকরানি। । কি সুন্দর না????
আসিফ: হাহাহাহাহা। উফফ তুমিওনা...... যাই হোক শিরোনাম টা joss ছিল।
আমি: হ্যা খুব। ভাবছি আজকেই এফবি তে পোস্ট দিব।
-হাহাহাহাহাহা
দুজনের হাসাহাসি তে মাহি একবার ও খেয়াল করলোনা কেউ তার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেটা আর কেউ না মি. আশফি চৌধুরী।
আশফি: আমার চেম্বারে আসুন। ( রাগী মুডে পি.এ কে ফোন)। এতো হাসি ? এতো হাসি আসে কোথা থেকে তোমার আজকে আমি সেটাই
দেখবো। আমার সামনে ছাড়া যাতে তুমি অন্য কোনো ছেলের সামনে না হাসতে পারো তার ব্যবস্থাই করবো।
আমি: দেখেছো কতটুকু সময় হয়েছে ওনার চেম্বার থেকে আসলাম সাথে সাথে আবার ফোন।
আসিফ: যাও যাও দেখো এবার কি করতে বলে।
আমি: এই লোকটার সামনে গেলে আমার Heartbeat ১৪ গুণ বেড়ে যায়। এতো ভয় পেলে কিভাবে কাজ করবো ওনার সাথে বুঝতে পারছিনা। ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম ওনার চেম্বারে।
জি স্যার বলুন।
আশফি: হ্যা বসুন। এই ফাইল গুলো ধরুন। এগুলোতে কিছু Fault আছে যে গুলো এক্ষনি correction করে দিতে হবে আমাকে।
আমি: স্যার এক্ষনি এতোগুলো ফাইল কিভাবে correction করে দিবো?
আশফি: কিভাবে করে দিবেন সেটা তো আমার জানার কথা না!! করে দিতে বলেছি করে দিবেন। ব্যাস......
আমি: ঠিক আছে স্যার। আসি
আশফি: আসি মানে? আমি এখানে বসে করতে বলেছি।
আমি: কিন্তু স্যার আমি আমার চেম্বার ছেড়ে এখানে বসে করবো কেনো? আর তা ছাড়া আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আশফি: তাইতো। এটা তো একটু অন্যরকম দেখায়। দেখাক তাতে কি? (মনে মনে)। সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা।আর যত কাজ ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা তাইনা? আমার সামনে বসে তো আর ফাঁকি দিতে পারবেননা।
আমি: স্যার আমি মোটেও.......( বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেলাম ওনার আগুন দৃষ্টি দেখে, মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে) আমি চুপচাপ কাজ করা শুরু করলাম।
আশফি: আমি জানি তুমি ফাঁকিবাজ না। শুধুমাত্র আমার চোখের সামনে তোমাকে রাখার জন্য এই ব্যবস্থা।( মনে মনে)। Already 30 minutes পার হয়ে গেছে মেয়েটা কাজ করেই চলেছে। একটা বার ও চোখটা তুলছেনা। উফফ এতোটা বোরিং কবে থেকে হলো মেয়েটা। । কথা বলার মতো কোনোকিছু খুঁজেও পাচ্ছিনা।(মনে মনে)।....................
Oh God এতোটা careless কি করে হতে পারে ও? কাজ করতে করতে গলার কাছ থেকে ওরনাটা বেশ কিছুটা নিচে পড়ে গেছে। আর তাতে ওর গলার বেশ খানিকটা নিচে আর বুকের বেশ খানিকটা ওপরে মানে মাঝ বরাবর লাল তিলটা দেখা যাচ্ছে। এভাবেই কি মেয়েটা কাজ করে নাকি সবার সামনে? আশ্চর্য!! শুধু ফেসটাই পিচ্চি না ও পুরো মানুষটাই এখনও পিচ্চি হয়ে আছে। এখন ওকে আমি কিভাবে বলবো? হঠাৎ হাতের কাছে পেপারওয়েট টা পেলাম। ওটাই টেবিলের ওপর ঠাস করে ফেললাম। তাতেই ও চমকে গিয়ে কলমটা হাত থেকে পড়ে গেলো। তখন ও আমার দিকে তাকালো আর আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম একবার আর ওর ওরনার দিকে তাকালাম। ও আমার তাকানোর ভাবেই বুঝতে পারলো আমি কি বোঝাতে চেয়েছি। ও খুব দ্রুত ওরনা ঠিক করলো। আর খুব লজ্জা পেয়েছে সেটাও বোঝা গেলো। কাজ করতে করতে lunch এর সময় হয়ে গেছে। তখন ওকে কাজ থামাতে বললাম। মিস মাহি আমার খাবারটা বেড়ে দিন।
আমি: ওনার কথাই আমি শুধু অবাক ই হচ্ছি। কিছু করার নেই, করতেই হবে। কিন্তু আমি এই প্রথম কাউকে খাবার বেড়ে দিব। খুব ভয় করছে যে dangerous man তাতে একটু ভুল হলেই তো কতো বকা দিবে। ভাবতে ভাবতে খাবার বাড়া শুরু করে দিলাম।
আশফি: যেভাবে খাবার বাড়ছেন মহারাণী তাতে মনে হচ্ছে জীবনের প্রথম কাউকে খাবার বেড়ে খাওয়াচ্ছেন। গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে মনে হচ্ছে পানি টুকু আমার গায়েই ফেলবে।
বলতে বলতেই.........ohh shitt .এটা কি করলে........( বলতে গিয়ে চুপ হয়ে হেলাম ওর মুখটা দেখে, ভয়ে একদম চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুটা হাসিই পেয়ে গেলো।)
তাও রাগী মুডেই বললাম পরিষ্কার করে দাও।
আমি: জ.. জি স্যার( তোতলা ভাবে) শার্টটা পরিষ্কার করার সময় স্যার এর অনেক কাছে চলে আসলাম। আর স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই লোকটা এভাবে তাকিয়ে কি দেখে কে জানে? কাজ করার সময়ও বুঝতে পারছিলাম উনি আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছেন।
আশফি : ও আমার অনেক কাছে চলে এসেছে। অনেক কাছ থেকে দেখছি ওকে। ইচ্ছে করছে......... না থাক এখন ইচ্ছে করলেও কিছু করা যাবেনা।তারপর দুজনে একসাথে lunch শেষ করলমা। ওকে করতে কাধ্য করেছিলাম ।
কাজ করতে করতে ছুটির সময় হয়ে গেছে। ওকে বললাম আমার স্যুটটা পড়িয়ে দিতে। ও আরও একবার অবাক হলো।
আমি: শেষ পর্যন্ত এটাও?? । এখন তো মনে হচ্ছে আমি ওনার Private asistant না private bou... ।
আমিঃআমার তো Doubt হচ্ছে, একজন P.A এর ডিউটির মধ্যে আদৌ কি এমন ধরনের কাজ পড়ে?? । আমি তার কাছে গিয়ে স্যুটটা পড়িয়ে দিলাম।
আশফিঃ তো বাকি যে কাজ গুলো আছে সেগুলো কাল আমাকে complete করে দিবেন।এখন আসতে পারেন।
আমিঃ বেরিয়ে আসলাম। উফফ...সারাটা দিন এই গন্ডার টার সামনে বসে কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত । তারপর অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সামনে গিয়ে ট্যাক্সি/সিএনজি ধরতে হবে তাই হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই মনে হল কেউ আমার পেছন পেছন আসছে।পেছনে ঘুরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলামনা। মনের ভুল ভেবে সামনে একটা ট্যাক্সি পেয়ে উঠে গেলাম। বাসায় পৌঁছানোর পর ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে বিছানায় গিয়ে একটু গা এলিয়ে দিলাম।তারপর মা রুমে এসে আমার ওপর চিৎকার করে উঠলো।
মাঃ কিরে তুই কি দিন দিন নাস্তিক হয়ে যাচ্ছিস? আজ ২ দিন দেখছি ১ ওয়াক্ত নামায-কালাম পরছিস না,ব্যাপারটা কি?
আমি: মা.... সবকিছু হচ্ছে ঐ গন্ডারটার জন্য।এতো পরিমাণ কাজের চাপ দিচ্ছে যে আমি টয়লেটে যাওয়ার সময়টুকু পায়না।
মাঃ চুপ কর পাঁজি মেয়ে
আমি এসব কিছু শুনতে চাইনা।কাজের জায়গায় কাজ আর নামজ-কালামের জায়গায়......????
আমিঃ নামায-কালাম(উত্তর)।ঠিক আছে মা জননী তাই হবে এবার অন্তত একটু রেস্ট নিতে দাও!!
মাঃহুম নে।তুই তো এখন একটু আমাকেও সময় দিসনা। ( মন খারাপ করে চলে গেলো।)
আমিঃ সত্যিই তো.... কাজের চাপে এখন মাকেও ঠিকমত সময় দেওয়া হয়না। বেচারি সারাদিন একা থাকে বাড়িতে। এতো বলি যে একটু পাশের বাসার আন্টির সাথে গিয়ে গল্প করে এসো সেটাও শুনবেনা।মাকে নিয়ে যে কি করি? ভাবছি এই Friday তে মাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো।রেস্ট নিয়ে উঠে এশার নামায পড়লাম। তারপর মা খেতে ডাক দিল। খেতে বসে আমি আর মা কথা বলছি।
মাঃ মাহি কাল একবার আমার সাথে এতিমখানায় যেতে পারবি?
আমিঃ কিভাবে যাবো মা, কাল তো অফিস আছে নতুন এম.ডি. স্যার তো ছুটি দিবেনা।
মাঃ ওহ...আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি একাই যাবো।
আমিঃ হুম।
আমি যেতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছা করেই না বললাম।কারণ আমি জানি মা কেনো যাবে। প্রতি বছরে ২বার মা এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ায়। আমার জন্মদিনে আর ঐ লোকটার জন্মদিনে। আমি বুঝিনা এতো কিছুর পরও মা ঐ লোকটাকে এখনও কিভাবে এতো ভালোবাসে।আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে ঐ লোকটাকে কখনও বাবা বলে ডাকিনি। কিন্তু তবুও মাকে কখনো আমি বাঁধা দেইনি। কারণ সে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই মা যেভাবে ভালো থাকতে পারে আমি তাকে সেভাবেই ভালো থাকতে দেই।
খাওটা শেষ করে আমি শুতে চলে গেলাম। মায়ের কাছে গেলামনা। কারণ সে এখন একা থাকতে চাইবে। আজকে রাতে খু্ব শান্তির ঘুম দিলাম। তাই খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফযরের নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মায়ের ঘরে গেলাম দেখলাম মা বসে কুর'আন শরীফ পাঠ করছে।আমি বসে শুনছিলাম। পাঠ শেষ হলে মায়ের সাথে বসে কিছুক্ষন গল্প করলাম। তারপর মা নাস্তা রেডি করলো আর আমি নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে আসলাম। আর মা দুপুরে এতিমখানায় যাবে বাচ্চাদের খাওয়াতে।
ভাবছি বুল ডগ টা আজকে আর কি কি করাবে আমাকে দিয়ে। তারপর তার চেম্বারে গেলাম।
Good morning sir...
সে ফোনে কথা বলছিলো, আমার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর বললেন... Morning.
কথা বলে শেষ করে.....
আশফিঃ Whai is this??? দেখতে পাচ্ছিলেন যে ফোনে কথা বলছিলাম। তাহলে কথা বলা শেষ হওয়ার পর আপনার Morning বলা উচিত ছিল?
আমিঃস্যার আপনিইতো বলেছিলেন যে আমি অফিসে এসে আপনার রুমে ঢুকেই আপনাকে যেনো morning বলি
।
আশফিঃ আ.......( রেগে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন)
আযব......যান এখান থেকে।
আমিঃ ওকে স্যার
আশফিঃ দাড়ান।
বসুন, এখানে অফিসের কিছু রুলস রয়েছে যেটা কাল থেকে সবাইকে maintained করতে হবে। আর সেটা দেখার দায়িত্ব আপনার। আজকে সবাইকে জানিয়ে দিন।
আমিঃ ওকে।
স্যার.....???( কাগজটার দিকে তাকিয়ে)
ছেলে-মেয়ে উভয় স্টাফকেই ব্ল্যাক আর হোয়াইট প্যান্ট-শার্ট পরতে হবে??
আশফিঃYes... সবাইকেই। অবশ্য কিছু uncultured থাকতে পারে তাদের জন্য অনেকটা কষ্টকর হতে পারে কিন্তু তাও সবাইকে এগুলোই পরতে হবে।
আমিঃ কথাটা নিশ্চই উনি আমাকে বললেন। উনি কি ভাবেন আমি uncultured ।আমি কতটুকু cultured সেটা আমি ওনাকে দেখাবো । আমি বাইরে চলে এসে সবাইকে জানালাম।
- এটা কি করে সম্ভব? আমরা যারা ২/৩ টা বাচ্চার মা তারা কিভাবে এগুলো পরবো? (স্টাফ)
-ফরেইনার কান্ট্রি থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার জন্যই আরকি এরকম...
আমিঃ হুম। আর তা ছাড়া আমাদেরও তো এগুলো শিখতে হবে। কারণ আমাদের কোম্পানির শাখা এখন বাইরের কান্ট্রিতেও থাকছে। তাদের সাথে ওঠা বসা করার জন্য আমাদের এগুলো শেখা জরুরি। এখন সবাই কাজে যাও কাল থেকে রুলস গুলো সবাই ফলো করবে। আমি আমার চেম্বারে এসে কাজ শুরু করলাম।
আশফিঃ যাক এই সুযোগে মহারাণীকে একটু মডার্ন ড্রেসে দেখতে পারবো।কবে যে এই মহারাণীকে আমার রাণী সাজে দেখতে পারবো
মাহি, আমার চেম্বারে আসুন (ফোনে)।
আমিঃ ৫ মিনিট ও হয়নি বসেছি। অসহ্য
ওনার রুমে ঢুকলাম.yes sir......
আশফিঃ আমার জন্য এক কাপ চা করুন।
আমিঃ শুরু হয়ে গেছে ওনার হুকুম। ইচ্ছে করছে মাথাটা একদম ফাটিয়ে দেই। বকতে বকতে চা টা বানিয়ে ফেললাম।
এই নিন ধরুন।
আশফিঃহুম দিন।উমমম..... এটা কি চা নাকি গ্লুকোজ? এতো মিষ্টি কেনো? ধরুন। আপনি কি মেয়ে মানুষ নাকি অন্যকিছু, এক কাপ চা ও ঠিকমত বানাতে পারেননা.....?
আমিঃ কি? এতো বড়ো কথা এবার আমার নারিত্ব নিয়ে কথা বলেছে তাই আর চুপ করে থাকতে পারলামনা।
আপনার কি কোনো Doubt আছে, থাকলে clear করতে পারেন।
কথাগুলো বলেই জিহ্বা কামড়ে ধরলাম।হাই হাই এটা আমি কি বলে ফেললাম। ছি ছি ছি। স্যার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।লজ্জাতে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আশফিঃ ..মেয়েটা কি বলে গেলো। থাকলে clear করতে পারেন(রিপিট করে)।হাহাহাহা।ও এখনো বাচ্চাই আছে।
আমিঃ ছিছিছি এটা আমি কি বলে ফেললাম। সালার গন্ডারটার জন্য আমার মথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বলতে বলতে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।(অন্যমনস্ক হয়ে)উমম...ছিঃ ওনার খাওয়া চা আমি খাচ্ছি!!! আসলেই তো চা টা একদম শরবত ই মনে হচ্ছে। সব ওনার জন্য। তখন ওনাকে বককে বকতে ৪ চামচ চিনি দিয়ে ফেলেছি। ও খোদা ওনার জন্য আমি পুরো পাগল হয়ে যাবো।
আশফিঃ না চাচ্চু আমি আর ওখানে যেতে চাইনা। ওখানে গেলে যে আমার সেই ভয়ংকর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। ঐ স্মৃতিগুলো মনে পড়লে আমার চারপাশ অন্ধকার লাগে।আমি সহ্য করতে পারিনা। তুমি যাও, গিয়ে সবকিছু দেখেশুনে আসো।
ঠিক আছে রাখছি।
আমিঃ স্যার কে কালকের ফাইলগুলো দেওয়ার জন্য স্যারের রুমে এসেছি।দেখলাম উনি কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। আমার দিকে যখন তাকালো তখন দেখলাম চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। রাগে লাল হয়ে আছে নাকি কান্না করার কারণে লাল হয়ে আছে বুঝতে পারলামনা। কিন্তু চোখ থেকে এখন পর্যন্ত পানি পড়েনি। O my god
আমি তো রুমে ঢোকার সময় নক করে ঢুকিনি। এর জন্য না জানি এখন কি বলে। তবে ওনার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছেনা উনি রেগে আছেন। যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে চোখ দুটো তে অনেক কথা জমে আছে যেটা আমাকে উনি বলতে চাচ্ছে। ধুর.... কি সব ভাবছি আমি
আশফিঃ মাহি, তোমাকে যদি জরিয়ে ধরে অনেকক্ষন কান্না করতে পারতাম তাহলে হয়তো একটু হলেও শান্তি পেতাম। ওহ্ ও তো অনেক্ষন ধরে দারিয়ে আছে।........ বসো মাহি।
আমিঃ এটা আমি কি শুনলাম!!উনি আমাকে এতো সুন্দর করে তুমি বলে বসতে বলছে??
আশফিঃ কি হলো হা করে দাড়িয়ে আছো কেনো?
আমিঃ (হা বন্ধ করে)ও হ্যা স্যার। actually কালকের ফাইলগুলোর correction করা হয়ে গেছে সেগুলোই দিতে এসেছি। এইযে.....
আশফিঃ হ্যা দাও।....... হুম ঠিক আছে।
আমিঃ ওকে স্যার আসছি।
আশফিঃ না।
আমিঃ জি....???
আশফিঃ না কিছু না। যাও
আমিঃ ওকে স্যার।বেরিয়ে আসলাম। কি হলো? কিছু বুঝতে পারলামনা। আজকে ওনাকে এমন লাগলো কেনো। তবে ওনাকে যতটা কঠোর ভেবেছি অতোটাও না।
স্যারকে দেখলাম ওনার রুম থেকে বেরিয়ে ম্যানেজারের সাথে কি কথা বলে বেরিয়ে গেলেন।
আশফিঃ ভালো লাগছেনা আর কিছু। অফিস থেকে বেরিয়ে এসে চাচ্চুকে ফোন করলাম।
হ্যালো চাচ্চু.....
চাচ্চুঃ হ্যা বাবা বল।
আশফিঃ চাচ্চু আমি সেদিন ই ওখানে যাবো যেদিন অসমাপ্ত কাজের সমাপ্ত করতে পারবো আর ওদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারবো।
চাচ্চুঃ আমিও সেই প্রতিক্ষাতে আছি বাবা।
রাখছি।
..................................
আমিঃ কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলাম। এসে দেখলাম মা বসে আছে। মনে হলো মা মাত্রই এসেছে। মা তোমার আসতে এতো দেরি হলো যে?
মাঃ আর বলিসনা রাস্তাই এতো পরিমাণ জ্যাম কতক্ষন যে বসে ছিলাম গাড়িতে।
আমিঃ হুম। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে রেস্ট নাও। আমিও যাচ্ছি।
তারপর রাতে খেতে বসে কথা বলছি।
মাঃ তুই একটু সাবধানে চলা ফেরা করিস তো মা। আমার কিছু ধরে কেমন যেনো অস্বস্তি অস্বস্তি লাগছে তুই বাইরে গেলে।
আমিঃ হুম, তোমার তো শুধু আমাকে নিয়ে যত বাজে চিন্তা। অকারণে এতো টেনশন করো বলেই তো কিছুদিন পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়ো।
মাঃ নারে। তুই বুঝবিনা। তার ওপর আজকে কি হয়েছে জানিস, বাসায় ফেরার সময় মনে হলো কেউ আমার পিছু নিয়েছে। পুরো রাস্তা আসার সময় এরকম মনে হয়েছে।
আমিঃ মার কথা শুনে আমারই এখন চিন্তা হচ্ছে। আমারও তো কিছুদিন এরকম মনে হচ্ছে। যাইহোক, মাকে আমার বিষয় টা কিছু বললামনা। না হলে আবার বাড়তি টেনশন করবে। খাবার খেয়ে রুমে এসে কালকে পরে যাওয়ার জন্য প্যান্ট আর শার্টটা ন্যারো করলাম
তারপর ল্যাপটপে কিছু কাজ করে শুয়ে পড়লাম। সকালে উঠে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলাম। মা আমাকে দেখে রেগে আগুন।
মাঃ মাহি.... । তুই আবার এসব ড্রেস পড়া শুরু করেছিস? এগুলো পড়ে তুই একদম অফিসে যাবিনা বলে দিলাম
আমিঃ মা মর্ডান ড্রেসআপ একদমই পছন্দ করেনা।
মা এগুলো কি আমি ইচ্ছে করে পরছি নাকি। স্যার নতুন নিয়ম করেছে। আজ থেকে এগুলো পরেই সবাইকে অফিসে যেতে হবে।
মাঃ তোর এই নতুন স্যার টাকে আমার একদমই ভালো লাগছেনা। আজকালকার Young generation এর ছেলেদের তো মেয়েদের টাইট ফিটিং ড্রেসে দেখতে খুব মজা লাগে। তুই কিন্তু খুব সাবধানে থাকবি।
আমিঃহুম একদম ঠিক বলেছো। আচ্ছা মা এখন আমি আসি।....................
আজকে খুব স্মার্ট হয়ে সেজে গুজেই অফিসে আসলাম.....। হিহিহিহি সবাই আমাকে কেমন হা করে দেখছে। বুঝতে পারছি অনেক সুন্দর লাগছে আমাকে ।
আসিফঃ আরে মাহি নাকি! আজকে তো তোমার থেকে চোখ সরাতে পারছিনা। পুরো প্রেমে পড়ে গেলাম।
আমিঃ হয়েছে হয়েছে এখন off যাও। আর thanks.
এখন যাচ্ছি বুলডগের চেম্বারে তাকে দেখাতে যে আমি কতটুকু cultured.
-Good morning sir
উনি বসে একটা ফাইল দেখছিলেন।
আশফিঃ Good morning (অবাক হওয়ার দৃষ্টিতে)
আমিঃ উনি আমাকে মর্নিং বলার সময় একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করতে গিয়ে আবার দ্বিতীয়বার তাকালেন। বুঝতে পারলাম অবাক হয়েছে।মজা পেলাম । কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে কেমন শয়তানি মুচকি হাসি দিলেন। বুঝতে পারলামনা কি জন্য।
আশফিঃ বাহ্.... দেখতে তো বেশ লাগছে।কিন্তু ও কি জানে এই ড্রেসআপ পড়ার রুলটা আমি কেনো করেছি? জানতে পারলে বাচ্চাটা হয়তো ভুলেও এগুলো পরে আসতোনা। হাহাহাহাহা।( শয়তানি মুচকি হাসি)।
মাহি আমাকে এক গ্লাস পানি দিন তো।(গলায় হালকা কাশির ভাব নিয়ে)
আমিঃ হুহুহু.... আমাকে দেখে নিশ্চই বিসম খেলো।
-দিচ্ছি স্যার, এই নিন।
আশফিঃ হুম। গ্লাসটা আমাকে দেওয়ার সময় ইচ্ছে করেই ওর হাতে ধাক্কা দিলাম যাতে পানিটুকু আমার শার্টে এসে পড়ে।আর সেই বাহানায় ও আমার কাছে আসবে শার্টটা পরিষ্কার করে দিতে।..........
............
-এটা কি করলে এতোটা careless তুমি কি করে হও। অসহ্য....মুছে দাও।
আমিঃ এটা কি হলো। ওনার ধাক্কা লেগেই তো পানি পড়লো। আর আমাকেই বকা দিলো ।
-জি স্যার দিচ্ছি। আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি আর উনি গরুর মতো চোখ করে আমারদিকে তাকিয়ে আছে। উফফঃ আর নিতে পারছিনা ওনার জন্য আমার জীবনটা পুরো টিসু পেপার হয়ে যাচ্ছে। হয়েছে স্যার।
আশফিঃ হুম। এখন যাও এখান থেকে।
আমিঃ চলে আসলাম। ধুর আর ভালো লাগেনা প্রতিদিন সকাল সকাল ওনার ঝারি আর নিতে পারছিনা।
আশফিঃ আমি জানি তোমার খুব খারাপ লাগছে মাহি। কি করব বলো আমার মেজাজ টাই যে এমন
নীলাঃ কি খবর মাহি দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
আমিঃ চোখের সামনে ফানি শো দেখতে পাচ্ছোনা??
নীলাঃ ফানি শো??? ও হ্যা বুঝতে পেরেছি আসিফ আমাকে বলেছে। কি আর করার বস মানুষ। সহ্য তো করতেই হবে। তবে তোমার জায়গায় আমি হলে স্যারকে ইমপ্রেসড করার চেষ্টা করতাম।
আমিঃ আরে... মানুষ মানুষকে ইমপ্রেসড করতে পারে কিন্তু মানুষ হয়ে একটা গন্ডারকে কিভাবে ইমপ্রেসড করবো?
নীলাঃ হাহাহাহাহা। দারুন বলেছো। তবে অনেকসময় যে যেমন তার সাথে তেমনই করতে হয়।
আমিঃ কিভাবে?
নীলাঃ উফফঃ মাহি সবকিছুই কি ভেঙ্গে বোঝাতে হবে?? আমি আসছি।
আমিঃ আরে...নীলা? যাহ্ চলে গেলো? কিন্তু কি বলে গেলো ও যে যেরকম তার সাথে তেমনই করতে হয়.......
হুম বুঝতে পেরেছি। ওহ্ Thank u dear.আজ থেকেই গন্ডার টার ট্রিটমেন্ট শুরু। lunch time এ গন্ডারটার ফোন আসলো।নিশ্চই খাবার সার্ভ করে দেওয়ার জন্য ডাকছে। তাই আগে থেকেই তার ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। স্যার এর রুমে গেলাম।
-স্যার আসবো?
আশফিঃ হুস এসো। আর খাবারটা......(কথা থামিয়ে দিয়ে)
আমিঃ সার্ভ করে দেব তাই তো,এক্ষনি দিচ্ছি স্যার আপনি বসুন। এবার আমাকে দিয়ে খাবার সার্ভ করানোর ঝাল টের পাওয়াবো....ওয়েট।প্রত্যকটা আইটেম এ এত্ত পরিমাণ ঝাল দিয়েছি যে সারাদিন পানি খেলেও কাজ হবে না।
-নিন স্যার শুরু করুন
আশফিঃঅদ্ভুত, আজকে বলার আগেই করা শুরু করে দিল। হুম, তাহলে বাচ্চাটার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। Good.
_তুমিও বসো আমার সাথে।
আমিঃ এ্যাঁ.... নানা।আমি খাবোনা।(রাগি চোখে তাকালো)।
-আসলে মা খাবার দিয়ে দিয়েছে ওগুলো না খেলে মা বকবে।আপনি খান না???
আশফিঃএ্যাহহ্,বাচ্চা মানুষ তো তাই না খেলে মা বকবে??ঢ়ং।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, যাও।
আমিঃ ওহ গড বড় বাচাঁ বেচেঁ গেছি। চলে আসলাম আমার চেম্বারে। এখন শুধু দেখার অপেক্ষায় আছি ঝালে কিভাবে বুলডগ টা ডান্স দেই। হিহিহিহি।
আশফিঃউফফ!! তরকারিটাই এত্ত পরিমান ঝাল হয়েছে যে মুখ পুরো জ্বলে শেষ হয়ে যাচ্ছে,,,এটা আর খাওয়া যাবেনা অন্যগুলো খাই। উমমমঃ আর সহ্য করতে পারছিনা প্রত্যকটা আইটেম এ এত ঝাল!!! আজ বাড়ি গিয়ে সেফ এর কপালে দুঃখ আছে । মাগো! মরে যাবো পানি খেয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।(ঝালে শোষাতে শোষাতে)। উঠে দাড়িয়ে পেছনের গ্লাসে হাত দিয়ে মাথা ঠেকিয়ে দাড়ালাম। গ্লাসে মাহিকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মাহি আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হাসছে কেনো? আমি সামনে ঘুরে তাকালাম ও সাথে সাথে ও চোখ ফিরিয়ে নিলো।তার মানে ঐ কি?............... হুম আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা। মাহি তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা এখন তোমার কি অবস্থা হবে।আমি ওকে ফোন করে আসতে বললাম। ও ভেতরে আসলো।
আমিঃ হ্যা স্যার বলুন।
আশফিঃ খাবার গুলো সরাও।
আমিঃ কেনো স্যার আপনি খাবেন না?(চোখ গরম করে তাকালো)
-জি স্যার এখনি সরাচ্ছি।
ঝালে চোখ,নাক,মুখ লাল হয়ে আছে।বেশ হয়েছে।
আশফিঃও যখন খাবার সরাচ্ছিলো আমি তখন ওর হাত ধরে টান দিয়ে গ্লাসের সাথে মিশিয়ে ওর কোমোরটা চেপে ধরলাম।ও কিছু বলার আগেই ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট চেপে ধরলাম।যতক্ষন পর্যন্ত আমার ঝাল না কমছিলো ততক্ষন পর্যন্ত ওকে কিস করে যাচ্ছিলাম। ও আমাকে ছারানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। এভাবে কতক্ষণ করেছিলাম জানিনা। অনেকক্ষণ পর যখন ঝাল কমলো তখন ওকে ছেরে দিলাম। ও পুরো রোবট হয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি চেয়ারে এসে বসলাম। পানি খেতে গিয়ে থেমে গেলাম ভাবলাম এখন ঠোঁটে ওর ছোঁয়া আছে তাই আর খেলামনা। ওর দিকে তাকালাম, ওকে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে।বুঝলাম অনেক বড় shocked খেয়েছে। হাহাহাহাহা ও এখনো রোবট হয়ে দাড়িয়ে আছে। বেচারি আমাকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই কুপোকাত। আমি উঠে ওর সামনে দাড়ালাম।
ওকে বললাম,
-এরপর থেকে যেনো ঝালটা আরও বেশি হয়।
ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকালো _কি কথাটা মনে থাকবে তো। কারন ঝালের পরিমান টা বেশি হলে কিসটা ও অনেক্ষন ধরে করতে পারবো।কথাটা ওর কানেন কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বললাম।
আমিঃ আমি আর এক মূহুর্ত দাড়িয়ে থাকতে পারলামনা। দৌড়ে নিজের চেম্বারে চলে আসলাম।
আশফিঃইসস, বাচ্চাটা খুব লজ্জা পেয়েছে। হুহুহু এটা তো মাত্র শুরু ডিয়ার, এরপর থেকে যে আরও কত রোমান্টিক_অত্যাচার সহ্য করতে হবে you've no idea.(মুচকি হেসে)
আমিঃ না আর এভাবে সহ্য করা যায়না। উনি ওনার লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। আজকেই আমি চাকরি ছেরে দিবো।(কান্না করতে করতে)
আশফিঃ কি ব্যাপার ও কি রেজিগলেশন লেটার লিখছে? সেরকমি তো মনে হচ্ছে। কিন্তু ওকে তো এখান থেকে যেতে দেওয়া যাবেনা। কিভাবে ওকে আটকানো যায়? বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা আগে আসুক।
আমিঃ দরজায় নক করলাম। যখন ই ওনাকে বলতে যাবো তখন উনি বললো.....
আশফিঃ এখনকার সময় যখন তখন ভালো জব পাওয়া খুবই টাফ। তার ওপর বছরের মাঝামাঝি সময়।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)। By the way তুমি বাসায় তোমার মা কে কি বলবে কি জন্য চাকরি টা ছেরেছো?(মাহির দিকে তাকিয়ে)
আমিঃ সত্যিই তো। যে কোম্পানি তে ২বছর ধরে চাকরি করছি সেটা আজ আমি কেনো ছাড়লাম। প্রশ্ন করলে কি বলবো তখন। আর মিথ্যও বলতে পারবোনা। চাকরিটা ছাড়লে কোনো problem ছিলোনা কারন নানু এমনিতেই আমাদের দায়িত্ব নিতে চাই কিন্তু মা সেটা চাইনা। তাই আমাকে চাকরি করে মাকে নিয়ে আলাদা থাকতে হয়। আর কিছুই করার নেই। চাকরিটা করতেই হবে। ওনাকে কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আশফিঃ উহহহ... যাক তাহলে আটকাতে পারলাম।আহারে কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাটা চোখ,মুখ একদম ফুলিয়ে ফেলেছে । ওকে এখন একটু ইজি করতে হলে বাইরো নিয়ে যেতে হবে। আর এমনিতেও বাইরে একটা কাজ আছে সেখানে যেতে হবে ওকে সাথে নিয়ে যাবো।
আমিঃ এখন আমার সত্যি মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এরকমটা হবে আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। ফোন আসলো।
চোখ,মুখ মুছে ফোন পিক করলাম।
-হ্যালো, মাহি স্পিকিং।
- আমার চেম্বারে এসো।(আশফি)
কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলাম। তারপর নিজেকে কিছুটা কনট্রোল করে ওনার রুমে গেলাম।
আশফিঃ বাইরে থেকে দুজন ক্লাইন্ট আসবে একটা হোটেলে মিট করতে যাবো জরুরি মিটিং আছে। সেখানে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
আমিঃ হুম।
আশফিঃ ওখানে একটা ফাইল আছে ওটা নাও। আর আমাকে স্যুটটা পরিয়ে দাও।(উঠে শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে বললো)
আমিঃ এবার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছিনা। রাগে চোখ গরম করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
আশফিঃ কি হলো?( ধমকের সুরে)
আমিঃ কিছু না বলে স্যুটটা পরিয়ে দিলাম। তারপর ওনার সাথে বেরিয়ে পরলাম।
আশফিঃ রহিম তোমাকে এখন ড্রাইভ করতে হবে না আমি নিজেই করবো তুমি থাকো। আমি সিটে গিয়ে বসলাম। মাহি অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে আছে তাই জোরে হর্ণ দিলাম। ও চমকে উঠলো।
আমিঃ গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পেয়ে পেছন সিটে বসতে গেলাম হঠাৎ করে উনি গাড়ি টান দিয়ে চলে গেলো। এবার আমর মেজাজ আবারও চরমে উঠে গেলো।
-কি হলো এটা? উনি বারবার এভাবে আমাকে কেনো হ্যারাস করছে।ওনার এসব কার্যকলাপে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।বলতে বলতে উনি গাড়ি নিয়ে ব্যাক করে আমার সামনে আসলো। তারপর সামনের দরজা খুলে দিয়ে বললো।
_আমি কোনো ড্রাইভার না যে পেছনের সিটে গিয়ে বসতে হবে। এটা একটা কমনসেন্স।
রাগের কারনে ইচ্ছে করে পেছনে বসতে চেয়েছিলাম। তাই বলে এরকম করবে? রাগে গজ গজ করতে করতে ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। গাড়ি চালানোর সময় উনি এমনভাবে ব্রেক করলো যে আর একটু হলে...............
চিল্লায় বললাম,
- এভাবে কেউ গাড়ি চালায়।
আশফিঃ তার জন্য সিট বেল্টটা বাঁধতে হয়।
আমিঃ ওহহো...আমি সিট বেল্ট বাঁধিনি। নিজেই লজ্জা পেলাম। তারপর নামি দামী একটা হোটেলে ঢুকলাম। আগে থেকেই টেবিল বুক করা ছিল সেখানে গিয়ে বসলাম। ওয়েটার কে ডেকে একটা কোল্ড কফি আর একটা হট কফি অর্ডার করলো। আজব ব্যাপার উনি কি কোল্ড কফি টা আমার জন্য অর্ডার করলেন? আমি তো কোল্ড কফিই খাই আর কোথাও গেলে তাড়াতাড়ি করে গরম চা কফি খেতে পারিনা। খেতে দিলেও সেটাকে ঠান্ডা শরবত করে এক চুমুক দিয়ে গিলে খায়। ওয়েটার কফি নিয়ে আসলো। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম উনি আমাকে কোন কফিটা দেই। আরে উনি তো আমাকে কোল্ড কফিটাই দিলেন। অদ্ভুত তো উনি কিভাবে জানলো? আমি প্রশ্ন করলাম ওনাকে,
-আপনি কি করে জানলেন আমি কোল্ড কফি খায়
আশফিঃ কিভাবে আবার, সবসময় দেখি তুমি অফিসে এটাই আনতে বলো। বাচ্চা মানুষ তো তাই তাড়াতাড়ি গরম কিছু খেতে পারোনা।
আমিঃ কি? বাচ্চা মানে?
আশফিঃ কিছুনা খাও।
আমিঃ তারমানে অফিসে বসে উনি আমাকে সবসময় খেয়াল করে। কিন্তু কেনো? শুধু আমার সাথেই কেনো উনি এরকম করেন।ওনার ভাব গতি, উদ্দেশ্য আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কিছুক্ষণ পর দুজন জাপানিজ আসলো বুঝতে পারলাম ওরাই আমাদের ক্লাইন্ট। আমরা কথা বলছি ওদের সাথে। আজকে আমাদের অনেক বড় একটা অর্ডার এসেছে ওদের থেকে। তাই ওরা আমাদের সাথে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালো। আমার দিকে যখন একজন ব্যক্তি হাত বাড়ালো আমি হাত মেলানোর আগেই উনি তার হাতটা ধরে হ্যান্ডশেক করলো। তারপর আমার দিকে চোখ বড় করে রাগী চোখে তাকালো।আমি জাস্ট অবাক হলাম। ওনারা চলে যাওয়ার পর আমার দিকে উনি এগিয়ে এসে দাতে দাত চেপে বললো,
-আমি ছাড়া তুমি অন্য কোনো ছেলেদের হাত ধরবেনা। না হলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। ।
আমি বুঝলামনা উনি কেনো আমার সাথে এমন করছে। কেনো আমাকে নিয়ে উনি এত possessive হচ্ছেন। আর নিজে যেটা করলো আজ তার জন্য একটাবার sorry পর্যন্ত বললোনা উল্টে আমাকেই এসে শাসাচ্ছে। How strange!! .
তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চালিয়ে উনি একটা পার্কের সামনে গিয়ে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে সোজা পার্কের ভেতর ঢুকে গেলো। আমি আর না দাড়িয়ে থেকে ওনার পেছন পেছন চলে আসলাম। তারপর উনি একটা ফাঁকা জায়গা দেখে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসে পরলো। আমাকে একবার বসতেও বললোনা। উনি বসে স্যুটটা খুলে আমাকে ধরিয়ে দিলেন।(অন্যদিকে তাকিয়ে) আমিও চাকরানির মত সেটা ধরলাম। খেয়াল করলাম উনি একটা family এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেখানে বাবা মা বাচ্চা ছেলেটাকে নিয়ে খেলছে। আর আমি আমার মত চারপাশ টা ঘুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলাম।মন টা এখন একটু হালকা লাগছে।কিছুক্ষণ পর পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনি নেই।
-আরে কোথাই গেলো? চারপাশ তাকিয়ে খুঁজলাম কোথাও দেখমানা। আবার আমাকে রেখে চলে গেলো না তো। আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। বাইরে গিয়ে যেটা দেখলাম সেটা দেখে আমার রাগ হচ্ছে নাকি হাসি পাচ্ছে বুঝতে পারছিনা। উনি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ললিপপ খাচ্ছে। আমি সামনে গেলাম। উনি আমাকে দেখে ললিপপ যে হাতে সেই হাত আমার দিকে বারিয়ে দিল।
ছিঃ ইয়াক উনি ললিপপটা চেটে এখন আমাকে দিচ্ছে? কি জঘন্য একটা মানুষ।
-আপনি ভাবলেন কি করে আপনার খাওয়া ললিপপ আমি খাবো?
আশফিঃ what?? আমি আমার স্যুটটা চাচ্ছি ললিপপ দিচ্ছিনা। আমার স্যুটটা তোমার কাছে।
আমিঃ opps... তাই তো। আর আমি কি ভাবলাম।ছিঃ কি একটা লজ্জার বিষয়।
-এই নিন। যাক তাও ভালো রাস্তার মাঝে আর পরিয়ে দিতে বলেনি। এইটুকু কমনসেন্স আছে।তারপর আমরা গাড়িতে উঠলাম। উনি আমার দিকে একটা kitkat এগিয়ে দিলেন। বাহ্ এটা যে আমার ফেভারিট সেটাও জেনে গেছেন? ভালো। আমি kitkat টা আর না নিয়ে পারলামনা। নিয়ে খেতে শুরু করে দিলাম সেটা দেখে উনি মুচকি হাসলেন....হুহ্ ।
আশফিঃ এতক্ষন পর মহারাণীর মুড ঠিক হলো।
-অলরেডি অফিস টাইম শেষ।
আমিঃ হুম। আমাকে সামনে নামিয়ে দিন আমি চলে যাবো।
আশফিঃ আমি কি তোমাকে একবারও নেমে যেতে বলেছি?
আমিঃ আমি একাই যেতে পারবো। গাড়ি থামান। কি হলো গাড়ি থামাননা কেনো (চিৎকার করে)। উনি হঠাৎ করে এমন ভাবে গাড়ি থামালো আমরা সিটে বসেই অনেক জোড়ে ঝাঁকি খেলাম। বুঝতে পারলাম সেইরকম ভাবে রেগে গেছেন। আমার দিকে কিরকম রাক্ষশের মতো করে তাকিয়ে আছে। আমি তো ভয়ে পুরো ঠান্ডা। আবারো কি জোর করে করে বসবে নাকি। আমি তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরলাম। উনি আমার দিকে সত্যিই এগিয়ে আসছেন। এবার আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম। না উনি তো কিছুই করছেনা। আমি চোখ খুললাম। উনি আমার দিকে সেই রাক্ষসের মত করেই তাকিয়ে আছে। আর গাড়ির দরজাটা খোলা।তারপর উনি বললেন,
-নামো,(চিৎকার করে)।
আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আর এমন জায়গায় নামিয়ে দিয়ে গেলো যে রাস্তাই একটা কোনো রিক্সাও পাওয়া যায়না। এখন আমাকে এতখানি রাস্তা হেঁটে যেতে হবে? অসভ্য লোক একটা। আমি হাটছিলাম তখন ২/৩ টা বখাটে ছেলে আমাকে একা দেখে আমার পিছু নিলো। আমি ওদের দেখে এক দৌড়ে আমার বাড়ির সামনে এসে পড়লাম এত জোরে দৌড় দিয়েছি মনে হচ্ছে এখানেই শুয়ে পরি। অবশ্য একটা উপকার তো হয়েছে তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারলাম না হলে কচ্ছপের মত হাঁটতে হাঁটতে আসতাম কত দেরি হতো কে জানে। হাপাতে হাপাতে ঘরে ঢুকলাম। মা আমার এইরকম অবস্থা দেখে দৌড়ে আসলো।
মাঃ কিরে তোর এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে তোর?এভাবে হাপাচ্ছিস কেনো??
আমিঃ উফফ মা তোমার প্রশ্নের কারনে তো আমি আরও হাপিয়ে যাচ্ছি। আগে একটু দম নিতে দাও। তারপর বলছি।
মাঃ হ্যা তুই বস আমি পানি নিয়াসি।........... নে ধর।
আমিঃ হুম দাও। তারপর পানিটুকু খেয়ে একটু স্থির হয়ে বসলাম। এদিকে মা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। মা কে আমি থামিয়ে বললাম।
-বলছি মা বলছি।আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। তারপর খেতে বসে বলবো।
মাঃ আচ্ছা যা।
আমিঃ ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন পর মা খেতে ডাক দিল। তারপর খেতে বসে রাস্তার বখাটে ছেলেগুলোর কথা বললাম। মা তো শুনে বললো,
-এখন থেকে আমি ফেরার পথে এগিয়ে নিয়ে আসবো।
মা আজকে তো কোনো গাড়ি পাইনি তাই............
তারপর মাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে রুমে চলে আসলাম। এরপর ঘুমানোর জন্য যত চেষ্টা করছি তত আজ সকালের কথা মনে পরছে। ভুলতে পারছিনা। রাত ১০:৪৫ এ আমার ফোনে মেসেজ টোন বাজলো। মেসেজেটা সেই আগের নাম্বার টা থেকে এসেছে। Are you ready for
#রোমান্টিক_অত্যাচার ??? আমি Reply korlam ke apni? No sms.
আমি ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। তারপর সকালে অফিসে গিয়ে দেখলাম সবাই মিষ্টি খাচ্ছে। কারন জনতে চাইলাম সবাই বললো আজকে স্যারের Birthday. তাই সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। আমি ওনার চেম্বারে যাবো কালকের ফাইল টা দেওয়ার জন্য। তখন ম্যানেজার বললো, - মাহি, স্যার আজ অফিসে আসবেননা আপনাকে ফাইলটা নিয়ে ওনার বাসায় যেতে বলেছে।
ওহ আচ্ছা। এখন ওনার বাসায় যেতে হবে আবার কিন্তু আমি তো ওনার........( কথা থামিয়ে দিয়ে)
ম্যানেজারঃ চিন্তা করোনা মাহি স্যার অলরেডি তোমার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
আমিঃ ও মা তাই নাকি। ঠিক আছে। কিন্তু আমার তো এখানেও বেশ কিছু কাজ আছে। আপনি স্যারকে বলে দিন আমি অফিস hours শেষ করে তারপর দিতে যাব।
ম্যানেজারঃ ওকে।
আমিঃ চেম্বারে এসে কাজ শুরু করলাম। হঠাৎ করে মনে হলো স্যার ওনার চেম্বারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকালাম। কিন্তু কৈ স্যার তো নেই। তাহলে আমার এরকম মনে হলো কেনো। আমি কি স্যারকে miss করছি? কি সব ভাবছি আমি। নিজের কাজে মন দিলাম। কাজ শেষ করে ওনার বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠলাম। ওখানে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। এই প্রথম আমি এত বড় বাড়ি দেখলাম। বিশাল জায়গা নিয়ে ওনার বাড়ি আর বাড়ির সামনে অনেক বড় বাগান। আর তার উল্টো পাশে অনেক বড় পুল। কিন্তু পুল সাইডে এত লোকজন কেনো? তারমানে উনি বাসায় Birth day party arrange করেছেন? হায় হায় আর আমাকে আজকেই আসতে হলো? হঠাৎ একটা লোক এসে বললো ম্যাডাম আপনি কি মিস মাহি?
-জি
- স্যার ঐদিকে আছে আমার সাথে আসুন।
আমাকে পুল সাইডে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে উনি ওনার বন্ধুদের সাথে Drinks হাতে নিয়ে বসে গল্প করছেন। দেখলাম ওনার বন্ধুরা ওনাকে বলছে,
- আশফি তোমাকে কিন্তু এখন আমাদের সাথে এই শ্যাম্পেন পার্টিতে পার্টিসিপেট করতেই হবে।
আশফিঃ আরে এগুলো তো তোমাদের জন্যই, তোমরা আজকে যত পারো খাও।
-নানা সেটা কি করে হয়। তোমার birthday তে তোমাকে রেখেই enjoy করবো? Not possible. তোমাকে তো থাকতেই হবে। নাও নাও শুরু করো।
আমিঃ এগুলো বলেই ওরা ওনাকে কিছুটা জোর করেই ২/৩ গ্লাস খাইয়ে দিল। তারপর হঠাৎ ওনার আমার দিকে চোখ পরলো কিন্তু no reaction. উনি স্বাভাবিক ভাবে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজে থেকেই ওদের সাথে Drinks করা শুরু করলো। এভাবে অনেক গুলো Drinks নেওয়া শুরু করলো। আমি আর কি করবো চারপাশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম ভালোই লাগছিল। তারপর পেছনে তাকালাম উনি নেই। অসহ্য এভাবে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো। আর উনি হুট করে কোথায় চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে বললো,
-ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছেন উনি বাগানের ঐ সাইডে আছেন আপনি যান
আমিঃ হুম।তারপর আমি গেলাম গিয়ে দেখলাম বাগানের ভেতরটাও মরিচ বাতি দিয়ে সাজিয়েছে সুন্দর করে কিন্তু এখানে কেউ নেই। ওনাকে দেখলাম উনি এক সাইডে Drinks হাতে নিয়ে বসে আছে চেয়ারের মত একটা সিটে আর সিটটা এতোটাই উঁচু ছিল যে উনি বসেই আমার সমান Height লাগছে। কিন্তু আমি ভাবছি সিট টাই উঁচু নাকি উনিই বেশি লম্বা? যাইহোক ভাবনা বাদ দিয়ে ওনার কাছে গিয়ে দেখলাম উনিই বেশি লম্বা ।
-স্যার?
উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি বললাম এইযে ফাইলটা। কিন্তু উনি শুধু আমারদিকে তাকিয়েই আছে। কিছু বলছেনা। আজ প্রথম আমি ওনার চোখের দিকে তাকালাম। সত্যিই মনে হচ্ছে ওনার চোখে অনেক প্রেম। আমি ওনার চোখের অনেক গভীরে হারিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ এক ঝটকায় আমাকে ওনার কাছে টেনে আমার কোমোর জরিয়ে ধরলেন বসে থাকা অবস্থাতেই।তখন আমার ঘোর ভাঙ্গলো।
- কি করছেন কি আপনি? ছাড়ুন আমাকে। স্যার প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।
আশফিঃ উহুমম.. স্যার নয় আশফি। আশফি বলে ডাকো।
আমিঃ ওনার মুখ দিয়ে মদের গন্ধ আসছে আমার আর সহ্য হচ্ছেনা। প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। না হলে আমি চিল্লাবো কিন্তু। কথাটি বলার সাথে উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরলেন।
আশফিঃ কিহ্ চিল্লাবে। চিৎকার করলে এখানে কে আসবে শুনি। আমাকে তো তোমার মানুষ মনে হয়না তাইনা। আমি তোমার কাছে আসলে তোমার অসহ্য লাগে। আর আসিফ? ওকে তোমার খুব ভালো লাগে, ও যখন তোমার হাত ধরে তোমার গাল টেনে দেয় তখন খুব শান্তি লাগে তোমার??? আমার সাথে কথা বলার সময় তোমার মুখে কথা থাকেনা, হাসি বন্ধ হয়ে যায়। খুব ভালো লাগে ওকে??
আমিঃ আমি ওনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম এসব কি বলছে উনি?
- আপনি এসব কি বলছেন? আসিফ শুধুমাত্র আমার বন্ধু। এর বেশি কিছুনা।
আশফিঃ তাহলে আমার সাথে তুমি কেনো এমন করো। তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। তুমি সেটা কেনো বোঝোনা মাহি। তোমাকে ছাড়া আমার যে থাকা অসম্ভব।তোমার জন্যই যে আমার দেশে আসা।আমি সহ্য করতে পারিনা যখন তুমি অন্য পুরুষের সাথে কথা বল, অন্য কারো হাত ধরো। শুধুমাত্র আমার চোখের সামনে তোমাকে রাখার জন্য নানা রকম বাহানায় তোমাকে আমার কাছে ডাকি। আর সেই তুমি সবমসময় আমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাউ। কেনো বলতো? তুমি কি আমার চোখ দেখে একটাবারের জন্যও বোঝোনি এই চোখে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করো কোনটা? (কথাগুলো কান্না করে বলছিল)।
আমিঃ আমি কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তবে এটা বুঝতে পারছি ওনার নেশা হয়ে গেছে।