দেশ ভ্রমণ সম্পর্কে ইসলামে পর্যটনের গুরুত্ব

ইসলামে পর্যটনের গুরুত্ব
আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। এ দিবস মানুষকে ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত করে তোলে। পৃথিবীতে মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক তথা কর্মজীবনের দায়দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই মানসিক শান্তির পাশাপাশি আল্লাহর সৃষ্টি অবলোকন করার মানসে মানুষ চায় কোথাও না কোথাও ঘুরে বেড়াতে। দেখতে চায় আল্লাহর সৃষ্টি নির্দশন। আল্লাহর নির্দশন দেখায় কুরআনের কথাগুলো জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ বলেন- قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللَّهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ -অর্থাৎ ‘(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম ’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০)
আল্লাহ অন্যত্র বলেন-
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانْظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذَّبِينَ - هَـذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ অর্থাৎ ‘তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৭-১৩৮)
ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলে থাকেন, পর্যটন হলো জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। সুস্থ্য দেহ ও সুন্দর মন তথা শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য ভ্রমণ করা খুবই উপকারী।

এজন্যই হজরত শেখ শাদি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, দুনিয়াতে দু’ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী- ১. ভাবুক বা চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং ২. দেশ সফরকারী ব্যক্তি।

বস্তুত পক্ষে পর্যটনের ধারা হজরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা যা নবি ও রাসূলদের বাস্তব জীবনে ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা বা মিরাজও এ পর্যটনের অন্তর্ভূক্ত। তাইতো পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, নবী-রাসূলের নাম পাওয়া যায়, যাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত ভ্রমণ করে ভ্রমণেতিহাসে অমর হয়ে আছেন। যার গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে কারিমায়।

ভ্রমণের উপকারিতা-
ক.মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ও আত্মার প্রশান্তি লাভ
খ. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা লাভ
গ. প্রাকৃতিক তথা জীব বৈচিত্রের স্বভাব-চরিত্রের ধারণা
ঘ. সৃষ্টির সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জন
ঙ. ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শক্তিশালী করণ
চ. সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে নানামুখী জ্ঞান অর্জন
ছ. সর্বোপরি আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ ও নৈকট্য অর্জন।

ভ্রমণে করণীয়-
ক. আল্লাহর সাহায্য কামনা করে ভ্রমণে বের হওয়া
খ. একাধিক ব্যক্তি এক সঙ্গে ভ্রমণ করলে একজনকে দলনেতা বানানো
গ. ভ্রমণে ইবাদতের নিয়ম কানুন জেনে নেয়া
ঘ. রাস্তার হক তথা পর্দা মেনে চলা
ঙ. অবৈধ ও গর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা
চ. সর্বোপরি দর্শণীয় স্থান সমূহ দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

ভ্রমণে বর্জণীয়
ক. রুচি বহির্ভূত পোশাক পরিহার করা
খ. বৈধ অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণে বের না হওয়া
গ. ভ্রমণে অপচয় না করা
ঘ. নিষিদ্ধ ও অবৈধ কথা-বার্তা, আচার-আচরণ পরিহার করা
ঙ. আল্লাহর নির্দশন বহন করে তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনকারী জিনিস নষ্ট না করা
চ. সব ধরনের অনিষ্ট হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়া।

পরিশেষে...
পর্যটন দিবসের অঙ্গীকার হোক এটাই যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন তা অবলোকন করে ঈমান ও আমলকে মজবুত করা। দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা। ভ্রমণের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নাহ আলো ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া। আল্লাহ তাআলা ভ্রমণেও মানুষকে উত্তম কথা ও কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নবীনতর পূর্বতন