ডায়াবেটিস রোগীদের কি কি খাওয়া যায় পড়লে তা বুঝতে পারবেন---


ডায়বেটিস রোগীরা সব কিছু খেতে পারে না। যদি খায় তাহলে নিশ্চিত মুত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তাই অনেক খাবার খাওয়া ঠিক নয়। দুই ধরনের খাবার গ্রহণকারী রোগীদেরই দৈনিক ৫০০ মিলি দুধ (ননিবিহীন) ও ৩০ গ্রাম চর্বি গ্রহণ করতে হবে। গোশত সপ্তাহে বা মাসে একবার গ্রহণ করবেন অথবা সম্পূর্ণ পরিহার করবেন। চর্বিবিহীন গোশত দৈনিক ৬০-৯০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে। দৈনিক সম্পূর্ণ ডিম খাওয়া যাবে না, তবে ডিমের সাদা অংশ দৈনিক দুইবার খাওয়া যেতে পারে। দুধ বা পানীয়র সাথে একটি ট্যাবলেট বা একফোঁটা নন কার্বোহাইড্রেট সুইটেনার্স যেমন- স্যাকারিন, সরবিটল ও অ্যাসপারমেট দেয়া যেতে পারো অথবা ডায়াবেটিক মিষ্টি ও ডিজার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত মোটা ডায়াবেটিস রোগীদের নন-কার্বোহাইড্রেট সুইটেনার্স বাদ দিতে হবে কারণ এগুলোয় ক্যালরির পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট সুইটেনার্সের মতো প্রায় সমপরিমাণ থাকে।
একটা কথা মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস রোগীর খাবার যতটা সম্ভব পরিবারের অন্য সদস্যদের খাবারের কাছাকাছি হতে হবে।
সীমিত ডায়াবেটিক খাবার গ্রহণকারী রোগীর জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা
দৈনিক বরাদ্দ: ৫০০ মি.লি. দুধ এবং ৩০ গ্রাম চর্বি (ঘি-বাটার, তেল, মারজারিন অথবা পনির)।
সকাল ৬টা: ১ কাপ (১২০ মি.লি.) দুধ-চা-কফি (চিনি ও দুধ ছাড়া)।
সকাল ৮টা (নাশতা) : ১ কাপ খিচুড়ি, ২ দোসা, ২ টুকরো পাউরুটি (বরাদ্দকৃত চর্বি থেকে বাটার বা পনির)। ১টি স্যান্ডেউইচ, ১টি ডিম (সেদ্ধ বা পোচ করা বা ফোটানো)। অথবা নাশতার তালিকা থেকে অন্য যেকোনো খাবার। ২০ গ্রাম মিষ্টিবিহীন সিরিয়াল কফি অথবা চা (চিনি ছাড়া) দৈনিক বরাদ্দ থেকে দুধসহ)।
সকাল ১০টা : ১ কাপ (১২০ মিলি) স্যুপ, ফলের রস, বাটারমিল্ক, ফল- আপেল, কমলা ইত্যাদি।
চা অথবা কফি- দুধসহ, ৩টি মিষ্টিবিহীন বিস্কুট, ২ টুকরো মচমচে পাউরুটি।
দুপুর ১২টা (দুপুরের প্রধান খাবার) : কুচি কুচি করে কাটা সবজিসহ ১ কাপ স্বচ্ছ স্যুপ, বাটার বা পনিরসহ ২ টুকরো সম্পূর্ণ পাউরুটি, ৬০-৯০ গ্রাম চর্বিবিহীন গোশত (মুরগি, মাছ) অথবা ১টি ডিম, ১টি ফল (আপেল বা কমলা), ১ কাপ দই, ১ কাপ ভাত ও ২টি চাপাতি পাউরুটি অথবা ৩টি চাপাতি ও হাফ কাপ ভাত অথবা ২ কাপ ভাত বা ৪টি চাপাতি, ৬০-৯০ গ্রাম চর্বিবিহীন গোশত, এক কাপ ডাল, সবজি সালাদ এবং ১ কাপ দই।
১ কাপ ভাত ও ২টি চাপাতি অথবা ৩টি চাপাতি ও হাফ কাপ ভাত অথবা ২ কাপ ভাত অথবা ৪টি চাপাতি, ১ কাপ সাদামাটা ডাল, ১ কাপ কারি ও ১ কাপ দই। দুধসহ চা বা কফি।
বিকেল ৪টা : দৈনন্দিন বরাদ্দ থেকে দুধসহ ১ কাপ চা বা কফি। ১টি ফল, ৩টি চিনিবিহীন বিস্কুট, ২ টুুকরো মচমচে পাউরুটি বা হালকা নাশতা (সকালের নাশতার তালিকা থেকে)।
সন্ধ্যা ৬টা : ১ গ্লাস বা কাপ (১২০ মিলি) স্যুপ, ফলের রস, বাটার মিল্ক, সালাদ ও দুধসহ চা কিংবা কফি।
রাত ৮টা (রাতের প্রধান খাবার) : দুপুরের প্রধান খাবারের মতো একই।
রাত ১০টা: দৈনন্দিন বরাদ্দ থেকে অবশিষ্ট দুধসহ ১৫ গ্রাম ওভালটিন কিংবা যেকোনো পানীয়। পনির বা বাটারসহ ১ বা ২ টুকরো পাউরুটি।
অবাধ ডায়াবেটিক খাবার
অবাধ ডায়াবেটিক খাবার সেসব রোগীর জন্য যারা অতিরিক্ত মোটা নন। এদের খাবার নিচের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়-
এক. যেসব খাবার পরিহার করতে হবে
কন্দ জাতীয় সবজি এবং কাঁচা কলা
টাটকা ফলমূল যেমন কলা, আম, সফেদা, আতা, আনারস, পেয়ারা।
শুকনো ফল যেমন খেজুর, ডুমুর, খুবানি, কিশমিশ, চিনি, গুড়, মিছরি
গ্লুকোজ, জ্যাম, মধু, মারমালেড
খেজুর, তাল বা আখের রস, ফলের রস, চিনির রস মেশানো ফল, মিষ্টি, কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, চকোলেট, কেক, পেস্ট্রি, পিঠা, পুডিং, জেলি, আইসক্রিম, ক্রিম বিস্কুট, মিষ্টি ঘনীভূত দুধ বা যেকোনো মিষ্টি দুধ, ঘন সস ও ক্রিম, অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় যেমন ওয়াইন, শেরি, বিয়ার, হুইস্কি ইত্যাদি। সালাদ ড্রেসিং, অতিরিক্ত পানীয় মিশ্রণ যেমন ওভালটিন, হরলিক্স ইত্যাদি। সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যেমন ঘি, ডালডা ইত্যাদি। শূকর, গরু ও খাসির গোশত, সসেজ। শুকনো খাবার।
দুই. পরিমাণে কম খাওয়া যাবে
দুধ, ঘন স্যুপ, সব টাটকা ও শুকনো ফলমূল, আলু, মটরশুটি ও সেকা শিম। সব ধরনের রুটি, বিস্কুট ও  মচমচে রুটি, সিরিয়াল এবং পরিজ, ম্যাকারনি, স্ক্যাগেটি, কাস্টার্ড ও প্রচুর ময়দার খাবার। গোশত, ডিম, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যেমন পরিশোধিত বাদাম তেল, সূর্যমুখী তেল, স্যানফ্লাওয়ার তেল ইত্যাদি।
বাটার, মার্জারিন, পনির, ক্রিম, চর্বিবিহীন গোশত, ডায়াবেটিক খাবার, সব সিরিয়াল এবং ডাল, ফল যেমন- আপেল, পেঁপে, তরমুজ ও কমলা
তিন. ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে
পানি এবং সোডা পানি, দুধসহ চা ও কফি (চিনি ছাড়া), ডায়াবেটিক ফ্রুট ড্রিংকস, স্বচ্ছ স্যুপ কিংবা গোশতের নির্যাস, ভেষজ, সিজোনিংস ও মসলা
স্যাকারিন এবং এসপারমেট প্রিপারেশন
নিচের ফলমূল এবং শাকসবজিতে খুব সামান্য পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং এ কারণে ইচ্ছেমতো খেতে কোনো বাধা নেই।
ক. সব ধরনের সবুজ শাক যেমন পালংশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, কচুশাক ইত্যাদি।
সবজি যেমন- বেগুন, অ্যাসপারাগাস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, শসা, খিরা, মুলা, ওলকপি, করলা, উচ্ছে, শালগম, কাঁচা টমেটো, পেঁয়াজ, মাশরুম, কাঁচা পেঁপে, ঝিঙে, চিচিঙা, ধুন্দল, পটোল, চালকুমড়া, ডাঁটা, লাউ, ফ্রেঞ্চ বিন, কলার থোড় এবং মোচা, সামান্য পরিমাণ টাটকা বা হিমায়িত মটর।
ফল যেমন- কালোজাম, বৈচি জাতীয় ফল, লেবু, আমড়া, জাম্বুরা, কামরাঙা, বাঙ্গি, জামরুল, আমলকী ইত্যাদি।
এই খাবারগুলো কেবল সামান্য ডায়াবেটিকস রয়েছে এমন রোগী যারা অতিরিক্ত মোটা নন তাদের জন্য। যা হোক, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এবং আদর্শ শারীরিক ওজন থাকলে সুষম ও উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ খাবারের সাথে সীমিত পরিমাণ চিনি গ্রহণ করা যেতে পারে।
নবীনতর পূর্বতন