আপনার ভিতরে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট (লাইফস্টাইল টিপস)

http://www.bollywoodshaadis.com/img/article-l-2014411911404742047000.jpg
আপনার ভিতরে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট প্রবেশ ও প্রসার ঘটান।
তাহলে অযথা তর্ক এড়িয়ে মানুষের ভালোবাসা ও মন জয় করতে পারবেন।
কিন্তু কিভাবে? জানতে জীবনকে উপভোগ করার ৬ নং পরামর্শটি পড়ুন।
অনেক লোক এমন আছে  যে, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলে একটু যেতে না যেতেই তাঁদের এ কথোপকথন তর্কের রূপ নেয়। আবার এমন অনেক লোক আছে যে, তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বললেও তাঁদের কথা চলতে থাকে স্বাভাবিক গতিতে ও হাসিমুখে। মূলত কথা বলার দক্ষতা ও যোগ্যতার পার্থক্যের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।
দুজন বক্তা মসজিদে একই বিষয়ে কথা বলছেন। কিন্তু একজনের কথা বলার সময় লোকজন হয়তো ঘুমাতে থাকে, নয়তো তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে উঠে চলে যায় কিংবা মসজিদের জায়নামায নিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে পড়ে। অথচ অপরজনের বয়ানের সময় দেখা যায়, শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তার আলোচনা শোনে। অপলক দৃষ্টিতে বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। শতভাগ মনোযোগ নিবন্ধ রাখে। এমন কেন হয়? কেন একজনের আলোচনার সময় থাকে পিনপতন নীরবতা, অপলক দৃষ্টি, নিবিড় মনোযোগ আর অপরজনের আলোচনার সময় নড়াচড়া, কথাবার্তা কিংবা মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠে মগ্নতা? বস্তুতঃ কথা বলার যে বিশেষ কলা-কৌশল রয়েছে তা প্রয়োগের পার্থক্যের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।
কোনো কোনো শিক্ষকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যখন তিনি মাসরাসার করিডোর দিয়ে  হাঁটেন তখন ছাত্ররা গভীর উৎসাহ নিয়ে একের পর একজন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। কেউ মোসাফাহা করে। কেউ পরামর্শ চায়। আবার কেউ কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়। তিনি নিজ কামরায় বসে ছাত্রদের আসার অনুমতি দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো কামরা ভরে যায়। সবাই তার কাছে একটু বসতে  ভালোবাসে।
অথচ অনেক শিক্ষক এমনো আছেন যে, তিনি আসলে কেউ তার সাক্ষাতে এগিয়ে আসে না। হাঁটেন তো একা একা। মসজিদ থেকে এব্র হন একা। কেউ হাসিমুখে এগিয়ে এসে তাঁকে সালাম করে না। পরামর্শ চাইতেও কেউ আসে না। কেউ তার কাছে কোনো অভিযোগও নিয়ে আসে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা আর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চব্বিশ ঘন্টা কামরা খুলে বসে থাকলেও কেউ তার কাছে আসে না। তার কাছে একটু বসতে চায় না। কেন এমন হয়?
মানুষের সঙ্গে আচরণগত দক্ষতার পার্থক্যের কারণেই এমন হয়ে থাকে।
অনেক লোক এমন আছে যাকে দেখলে সবাই আনন্দিত হয়। সবাই কামনা করে, তিনি যেন তার পাশেই বসেন। অথচ অনেক লোক এমন আছে যিনি আসলে কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না। কেউ তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় না। কেউ তার সাথে করমর্দন করলেও তা হয় নিরস ভঙ্গিতে। কেউ তাঁকে বসার জায়গা দেয় না কিংবা নিজের পাশে বসার জন্য ডাকেও না।
কেন এমন হয়?
মানুষকে আপন করে নেয়া এবং অন্যদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করার যোগ্যতার তারতম্যের কারণেই এমন হয়ে থাকে।
একজন পিতা বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে তার সন্তানেরা খুশিতে তার দিকে দৌড়ে আসে। আরেকজন পিতা বাড়িতে আসলে সন্তানদের মধ্যে কোন অনুভুতি বা ভাবাবেগ জন্মে না। তাঁরা দৌড়ে এসে তার কাছে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। সন্তানদের সঙ্গে আচরতণ গত কৌশলের পার্থক্যের কারণেই এমন হয়।
মানুষের সঙ্গে আচার-আচরণ, লেনদেন ও সকলকে আপন করে নেয়ার যোগ্যতা সবার এক রকম নয়। কেউ কেউ তো প্রথম পরিচয়ের সাথে সাথে অন্যকে আপন করে নিতে পারে। অবশ্য সবাই তা পারে না। তবে মানুষকে আপন করে তাঁদের হৃদয় জয় করা আপনি যত কঠিন কাজ বলে মনে করেন বাস্তবে তা তত কঠিন নয়।
আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আমি দেখেছি, সহজ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশিরভাগ মানুষেরই মন জয় করা সম্ভব। তবে শর্ত হলো, সে পদ্ধতিগুলো প্রথমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে হবে। এরপর যথাযথভাবে সেগুলোকে প্রয়োগ করতে হবে। এর ফলে আমাদের অজান্তেই অন্যরা আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে আমার জীবনের একটি বাস্তব ঘটনা আপনার কাজে লাগতে পারে।
প্রায় তের বছর যাবৎ একটি সামরিক কলেজের মসজিদে আমি ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। মসজিদের যাওয়ার পথে একটি গেট আছে। একজন নিরাপত্তা কর্মী সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্ব ছিল গেট খোলা ও বন্ধ করা। গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় ও বের হওয়ার সময় সবসময় তাঁকে দেখে আমি মুচকি হাসতাম এবং সালাম করতাম। কিন্তু এক সময় আমার ব্যস্ততা অনেক বেড়ে গেল। এ কারণে তখন আমি আমার মুঠোফোন অনেক সময় সাইলেন্ট করে রাখতাম। ফলে আমার মুঠোফোনে অসংখ্য এসএমএস ও মিসডকল উঠে থাকত। মসজিদ থেকে ফেরার পথে গাড়িতে বসে আম সেগুলো পড়তাম। এ লারনে সে সময় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়া বা সালাম করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু দারোয়ান বেচারা গেট খুলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। একদিন হঠাৎ বের হওয়ার সময় আমাকে থামিয়ে সে বললো, “শায়খ! আপনি কি কোনো কারণে আমার প্রতি রাগ করেছেন?’
আমি বললাম, ‘না তো! কী জন্য?’
সে বললো, ‘আপনি আগে যখন প্রবেশ করতেন তখন আমাকে হাসিমুখে সালাম দিতেন। অথচ এখন বের হওয়ার সময় হাসিও দেন না, সালামও দেন না।’
দারোয়ান ছিল সাদাসিধে প্রকৃতির মানুষ। আমার আচরণের কারণে নিজের অজান্তেই সে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। তাই আমার কাছ থেকে আগের মতো আচরণ না পেয়ে সে দুঃখিত হয়েছিল। আমি তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আমার ব্যস্ততার কারণ বুঝিয়ে বললাম।

সেদিন বুঝলাম, মানুষকে আপন করে নেয়ার দক্ষতাগুলো যখন আমাদের সহজাত গুণে পরিণত হয়, তখন আমরা অমনোযোগী থাকলেও অন্যরা সেগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করে।
আরও টিপস পেতে TipsBari.Com এর সাথেই থাকুন
নবীনতর পূর্বতন