গরমের টুকটাক রূপচর্চা

ঘরে প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চা ত্বক ভালো রাখবে  মডেল: ফারহানা, ছবি: সুমন ইউসুফ. কৃতজ্ঞতা: হারমনি স্পা
জ্যৈষ্ঠ এল বলে। গ্রীষ্মের দুটি মাসে উষ্ণতাই প্রকৃতির স্বাভাবিকতা। এই সময় সহজেই শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, রোদের তাপও ফেলে বিরূপ প্রভাব। তাই ত্বক ও চুলের সুস্থতায় প্রয়োজন সচেতনতা।
হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, সৌন্দর্য আসে ভেতর থেকে। সুস্থ জীবনযাপন সৌন্দর্যের প্রধান শর্ত। বাইরে থেকে হয়তো সৌন্দর্যের ১০ শতাংশ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব, কিন্তু শরীর ও মনের সুস্থতা ছাড়া সৌন্দর্য অসম্পূর্ণ।
রোজকার জীবনে কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিলেন তিনি—
* পর্যাপ্ত পানি পান করুন। মাঝে মাঝে ডাবের পানি বা ঘৃতকুমারীর (অ্যালোভেরা) রস খেতে পারেন।
* টাটকা মৌসুমি ফল ও সবজি রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। শর্করাসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
* বাসি খাবার খাবেন না। চেষ্টা করুন ঘরে তৈরি খাবার খেতে।
* মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখুন নিজেকে।
* রোজ অন্তত আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।
ত্বকের বাড়তি যত্ন
রাহিমা সুলতানা জানান, রোদের তাপে মাত্র ১০ মিনিট থাকলেই ত্বকে রোদে পোড়া ভাব চলে আসতে পারে। এমনকি যাঁরা ঘরে থাকেন, তাঁরা বারান্দার রোদের কারণেও এমন সমস্যায় পড়তে পারেন। পানিশূন্যতায় চুল ও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া গরমে ঘেমে গিয়ে চুলের গোড়া ভিজে থাকার কারণে খুশকিও হতে পারে।
জেনে নেওয়া যাক এই সময়ে ত্বকের জন্য কী করা প্রয়োজন—
* আধা চা-চামচ শসার রসের সঙ্গে আধা চা-চামচ দুধ ও আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। ঠান্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শুধু শসার রস বা শসা কুচি ব্যবহার করতে হবে।
* একইভাবে শসার রসের পরিবর্তে বাঙ্গির রসও ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক তৈলাক্ত হলে এ ক্ষেত্রে দুধ ও মধু বাদ দিয়ে দিন।
* এক টেবিল চামচ তরমুজের রসের সঙ্গে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করেও একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন।
* যাঁদের ত্বক খুব তৈলাক্ত কিংবা যাঁরা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা খুব সামান্য পরিমাণ আনারসের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। চাইলে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি কিংবা বেসন যোগ করতে পারেন। ২০ মিনিটের বেশি সময় মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে রাখবেন না।
* টোনিং-এর জন্য তরমুজের রসের সঙ্গে টকদই মিশিয়ে পুরো মুখে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে একবার স্ক্রাবিং প্রয়োজন। এর জন্য বাঙ্গি, তরমুজ বা শসার রসের মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। ফলের রসের সঙ্গে চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। ত্বক স্বাভাবিক বা শুষ্ক হলে এর সঙ্গে দুধ ও মধু যোগ করতে পারেন। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য জলপাই তেলও যোগ করতে পারেন। ত্বক শুষ্ক হলে ফলের রস আর চালের গুঁড়োর সঙ্গে যোগ করতে পারেন ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস। মুখের ত্বক ছাড়াও হাত ও পায়ের ত্বক স্ক্রাব করা প্রয়োজন।
•যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁদের কখনোই স্ক্রাবার ব্যবহার করা উচিত নয়। তাঁরা টকদই ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে এর সঙ্গে একটু সয়াবিন পাউডার যোগ করে নিতে পারেন। কোনো মিশ্রণ খুব বেশিক্ষণ ত্বকে লাগিয়ে রাখবেন না।
 চুলের জন্য
চুলের যত্নে রইল আরও কিছু পরামর্শ—
সপ্তাহে ২-৩ দিন তেল মালিশ করা প্রয়োজন। শ্যাম্পু করার আগের রাতে নারকেল তেল মালিশ করে রাখতে পারেন। নারকেল তেল সারা রাত রাখলেÿক্ষতি নেই।
খুশকির সমস্যায় ভুগলে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে এটি আধা ঘণ্টার বেশি সময় রাখা যাবে না; শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
ব্লেন্ডারে এক কাপ টকদইয়ের সঙ্গে ছোট একটা কলার অর্ধেক অংশ, একটি ডিম, মেথির গুঁড়ো ও আমলকী ব্লেন্ড করে চুলে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা। এরপর শ্যাম্পু করে নিন। মিশ্রণে মেথি ও আমলকী থাকায় ডিমের গন্ধ পাওয়ার ভয় থাকবে না। চুল পড়ার সমস্যায় ভুগলে মেহেদি যোগ করে নিতে পারেন। সবশেষে চায়ের লিকার কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
চুল রুক্ষ-শুষ্ক হলে এক টেবিল চামচ মধু বা অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে দুধ, টকদই ও মেথি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মধুও যোগ করতে পারেন চুলের এই প্যাকটিতে।
নবীনতর পূর্বতন