জ্বর ও কাশি

ফাগুনের জ্বর ও কাশি
শেষরাত ও ভোররাতে তাপমাত্রা কমে যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রার এই ওঠানামার ফলে কিছু কিছু ভাইরাস শরীরের ওপর আক্রমণের সুযোগ পায়। আবহাওয়ায় তাপমাত্রার এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে যাঁরা খাপ খাওয়াতে পারেন না, তাঁরাই আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বরসহ সর্দি-কাশিতে। ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বরের এই প্রকোপ নতুন কিছু নয়, সাধারণের কাছে এটি ‘ফ্লু’ বা ভাইরাল ফ্লু হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, এমন আবহাওয়ার কারণে বেশিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া৷ ফলে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ছে৷ সঙ্গে শরীরজুড়ে ব্যথা৷ এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে সাধারণত সাত দিনের মধ্যে এমনিই ভালো হয়ে যায়। হঠাৎ করে ঠান্ডা যাতে না লাগে, তার জন্য বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে৷
কী কী লক্ষণ দেখা যায়
রোগী মূলত জ্বর, কেউ কেউ মাথাব্যথা, সর্দি, অরুচি, গাব্যথা, কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। ঠান্ডা সর্দির কারণে কান বন্ধ হতে পারে। কান বন্ধের সঙ্গে কানে ব্যথাও থাকে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অনেক সময় শিশুর প্রচণ্ড সর্দি লেগে যায়। কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বরও দেখা দিতে পারে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে জ্বর ততটা তীব্রভাবে না-ও হতে পারে।
প্রতিকার
জ্বর হলে গোসলে বিরত না থেকে প্রতিদিন একই সময়ে করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। চুল ও শরীরের পানি ভালো করে মুছে নিন, যাতে নতুন করে ঠান্ডা না লাগে।
জ্বর হলে কী করবেন
এ অবস্থায় প্রথমেই জ্বর কমানোর ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর কমানোর ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে সারা শরীর মুছে দেওয়া অর্থাৎ স্পঞ্জিং করা উচিত। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে না আসা পর্যন্ত এই স্পঞ্জিং চালিয়ে যেতে হবে। ২-১ ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় কী করবেন
সর্দি-কাশি বা সামান্য গলাব্যথা এমন কোনো বড় ব্যাপার নয়। তবে একবার ঠান্ডা লাগলে তা সারতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগবেই। আর কাশি তো বেশ কয়েক দিন থাকতে পারে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সাধারণ কাশির চিকিৎসা আপনিই করতে পারেন। এ ধরনের কাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। তবে কাশির সঙ্গে যদি জ্বর হয়, তাহলে গুরুত্ব দিতে হবে। ঠান্ডা খাবার, ফ্রিজের পানি পরিহার করতে হবে। কুসুম গরম পানি পান করতে পারলে ভালো হয়। ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন।
ধূমপান করবেন না
খুসখুসে কাশির একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ধূমপান। আর ঠান্ডা লাগলে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই ধূমপান পরিহার হরতে হবে।
শিশুর কাশি মানেই নিউমোনিয়া নয়
এই সময়ে শিশুরা যে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগে তা বেশির ভাগই নিউমোনিয়া নয়। ভাইরাসজনিত এই রোগের নাম ব্রংকিওলাইটিস। ব্রংকিওলাইটিসকে অনেকে নিউমোনিয়া ভেবে ভুল করেন। ব্রংকিওলাইটিস দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। ব্রংকিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করা যায়। তবে সুস্থ শিশুদের আক্রান্ত শিশু থেকে দূরে রাখতে হবে।
শিশুকে সিগারেট, মশার কয়েল ও রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন। ভাইরাসজনিত এই রোগে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। তবে শ্বাসকষ্ট খুব বেশি হলে, খিঁচুনি, ঠোঁট নীল বা কালো হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
লেখক: চিকিৎসক
নবীনতর পূর্বতন