বৈশাখে শিশুর পোশাক

সুতির পোশাকে শিশুরা পায় আরাম। মডেল: রাইসা, আরিয়ান ও শাকির পোশাক: গাঁও গেরাম, ছবি: খালেদ সরকার
দমকা হাওয়া প্রকৃতিতে জানান দিচ্ছে বৈশাখ আসছে। আর শপিং মলে জানান দিচ্ছে বৈশাখের পোশাক। লাল আর সাদা পোশাকের সংগ্রহ তো আছেই; শিশুদের বৈশাখী পোশাক আরও নানা রঙে বর্ণিল। শাড়ি, কামিজ, টপ, পাঞ্জাবি, শার্ট বা টি-শার্টে বৈশাখের ভাবনা শিশুদের সব পোশাকেই। নিত্য উপহারের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বাহার রহমান জানালেন, এবার বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জন্য বিশেষ টি-শার্টের নকশা করা হয়েছে। গরমে শিশুদের আরাম দেবে টি-শার্ট।
মডেল: সামী, পোশাক: শৈশবমডেল: সামী, পোশাক: শৈশবআজিজ সুপার মার্কেটের দোকানগুলোতে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও পোশাকের সংগ্রহ আছে অনেক। টি-শার্ট, পোলো শার্টের ওপর বিভিন্ন প্রিন্টের ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ছোটদের পাঞ্জাবি, মেয়েদের টপ, ফতুয়ায় গ্রামবাংলার নানা রূপ ফুটে উঠেছে। যেমন: ধানখেত, প্যাঁচা, টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, পালতোলা নৌকা ইত্যাদি।
ফ্যাশন হাউস গাঁও গেরামের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘যেহেতু বৈশাখে আবহাওয়া গরম থাকে, তাই শিশুদের কথা চিন্তা করেই অধিকাংশ পোশাক সুতি, ভিসকস, লিনেনের তৈরি। শিশুদের জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবি তো আছেই। এ ছাড়া স্কার্ট, ফতুয়া, হাতাকাটা ফ্রক, টপ, কামিজ, শার্ট, প্যান্ট, আফগানি প্যান্ট, ধুতি আছে।’

মডেল: তাহিন, পোশাক: গঁাও গেরামমডেল: তাহিন, পোশাক: গঁাও গেরামশুধু লাল-সাদাই নয়বৈশাখ মানেই লাল-সাদা। এখন কিন্তু এই দুটি রঙের পাশাপাশি অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের পোশাকও কম যায় না। বিশেষ করে শিশুদের পোশাকে। লাল-সাদা ছাড়াও কমলা, জলপাই, হলুদ, নীল, কচি পাতা কিংবা সবুজ রঙের প্রাধান্য থাকছে। কয়েকটি রং মেশানো ফুলেল নকশাও দেখা গেল পোশাকে।
আর যদি আপনার শিশুর জন্য লাল-সাদাই কিনতে চান, তাহলে বেছে নিতে পারেন সাদার মধ্যেই বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ। হয়তো শিশুর শাড়িটি সাদা বা চাঁপা সাদা রঙের, কিন্তু তার পাড়ে লালের সঙ্গে সোনালি কিংবা কমলা রঙের ছোঁয়া। সাদা জমিনে লাল প্রিন্টের পাঞ্জাবিও আছে।

পোশাকের নকশাএমব্রয়ডারি, লেইস, ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজের মধ্যে অ্যাপলিক ও সুতার কাজ করা রয়েছে শিশুর পোশাকে। শাড়ি, পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় আবার রয়েছে স্প্রে, টাইডাই কাজ। পোশাকে একটু জমকালো ভাব ফুটিয়ে তুলতে কোনোটায় আবার পুঁতি, ফিতা, কড়ি, শামুক বসানো রয়েছে। আবার কোনো পোশাকে হালকা কাজের মধ্যে একতারা, পাখি, তবলা, প্যাঁচা, ঘুড়ি, হাতি, ময়ূর, টমটম গাড়ি, মাছ, গাছের কিংবা হাতপাখার ছবি আঁকা রয়েছে। আবার কোনো ফতুয়া, পাঞ্জাবিতে রয়েছে স্ক্রিনপ্রিন্টের অবয়ব।
সাপলুডুর নকশায় বৈশাখের পোশাক। পোশাক: অঞ্জন’সসাপলুডুর নকশায় বৈশাখের পোশাক। পোশাক: অঞ্জন’সবসুন্ধরা সিটির এক দোকানি জানালেন, এবার শিশুদের পোশাকে মোটিফ হিসেবে ঘাসফড়িং ব্যবহার করা হয়েছে। আর সুন্দরবন সম্পর্কে শিশুদের ধারণা দিতে বাঘের মুখোশের মোটিফও রয়েছে।
এদিকে জ্যামিতিক নকশাও রয়েছে শিশুর পোশাকে। অঞ্জন’সের ম্যানেজার বকুল বেগম বলেন, জ্যামিতিক মোটিফ, বিভিন্ন বর্ণ বা লেখাযুক্ত পোশাক থাকছে এবারের সংগ্রহে। এতিহ্যবাহী খেলা সাপলুডুর নকশায় ছোট ও বড়দের পোশাক তৈরি করেছেন তাঁরা।
চাইলে পরিবারের সবাই মিলে শিশুর পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে পরতে পারেন। কারণ, আরও অনেক ফ্যাশন হাউসই শিশুর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বাবা-মায়ের জন্য শাড়ি-পাঞ্জাবির নকশা করেছে। শিশুর পোশাকে ব্যবহৃত নানা ধরনের ফুলের প্রিন্ট দেখা গেল। আড়ংয়ের মার্কেটিং বিভাগের অফিসার আজমেরী আকতার বলেন, ‘শিশুদের ফ্রক ও ফতুয়ায় ফ্লোরাল প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। স্কার্টেও ছোট ফুলেল প্রিন্ট এবং নকশা রয়েছে। অ্যান্ডি সিল্ক, খাদি কাপড়ের মধ্যে মিলবে এগুলো।’ রাতের কোনো দাওয়াত থাকলে সহজেই মানাবে এই পোশাকগুলো।
পাঞ্জাবি: শৈশবপাঞ্জাবি: শৈশবখেয়াল রাখুন
যে ধরনের পোশাকই হোক না কেন, শিশুর আরামের কথা মাথায় রেখেই পোশাক কিনুন। সুতি, কটন, হাফ-সিল্ক কিংবা ভয়েল কাপড়ের পোশাক শিশুর ত্বকের জন্যে আরামদায়ক।
শাড়ির ক্ষেত্রে তাঁত কিংবা সুতির শাড়িই বাছাই করাই ভালো। আর ছেলেদের জন্য নরম কাপড়ের শর্ট-পাঞ্জাবিও বেছে নিতে পারেন।

 যেখানে যেমনদেশী দশ, আড়ং, নিত্য উপহার, শৈশব, রং, বিবিয়ানা, গাঁও গেরাম, বাংলার মেলা, ক্যাটস আই, লা রিভ, বিশ্বরং, ইনফিনিটিসহ অনেক দোকানেই মিলবে শিশুর বৈশাখের পোশাক। এ ছাড়া আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং মল, নিউমার্কেটে পাবেন শিশুর পোশাক।
আর এর দরদামটাও নির্ভর করবে পোশাকের ধরন এবং শিশুর বয়স অনুযায়ী। ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য তাঁতের শাড়ি পাবেন ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ব্লাউজ পিসসহ শাড়ি পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। ধানমন্ডির হকার্স মার্কেট থেকেও কিনতে পারেন এই শাড়ি। আর ফ্যাশন হাউসগুলোতে বিভিন্ন এমব্রয়ডারি, হাতের বিভিন্ন কাজ করা ছাড়াও শাড়ির পাড়ে উজ্জ্বল রঙের প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর দাম পড়বে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

এ ছাড়া ২ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ছেলেদের ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট ২৩০ থেকে ৫০০ টাকা, আর পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকার মধ্যে।
নবীনতর পূর্বতন