এ সময়ে সুন্দর সতেজ


এই সময়ে রুক্ষ চুল, খুশকি, চুল পড়ার মতো ঘটনায় ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) সহায়তা করবে। মডেল: অমৃতা, সাজ: হারমনি স্পা, পোশাক: স্করপিয়ন, ছবি: কবির হোসেন
এই সময়ে রুক্ষ চুল, খুশকি, চুল পড়ার মতো ঘটনায় ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) সহায়তা করবে। মডেল: অমৃতা, সাজ: হারমনি স্পা, পোশাক: স্করপিয়ন, ছবি: কবির হোসেনএখন বসন্তকাল। ফাল্গুনও শেষ দিকে। গরম আসি আসি করছে। চৈত্র মাস সামনে। এই সময়ে ত্বক আর্দ্রতা হারায় এবং শুষ্ক হয়ে যায়। তাই তো রূপচর্চা আর ত্বকের জন্য বিশেষ যত্ন প্রয়োজন প্রত্যেকের। কেননা বাতাসে ধুলাবালি উড়ছে। ঘরের বাইরে বেরোলে এই আবহাওয়ার প্রভাব ত্বকের ওপর বেশি পড়ে। রোদ ও ধুলোবালিতে ত্বক হয়ে পড়ে নিস্তেজ আর অনুজ্জ্বল। বাসায় ফিরেই প্রথমে ত্বককে একটু সময় না দিলেই নয়। বাইরে থেকে এসে বেশি পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা জরুরি। গরমে শুধু মুখের ত্বকই নয়, মাথা ও চুলেও সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি, চুলে রুক্ষতা আসে—চুল মলিন হয়ে যায়, এমনকি চুলও পড়তে শুরু করে। গরমে চুল ঘেমে গেলে চুলের গোড়ায় চুলকানো ও চুল টানার কারণে গোড়া নরম হয়ে চুল পড়তে থাকে। শুধু শ্যাম্পু করলেই চলবে না, এ সময় নিতে হবে চুলের যত্ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এবং চর্ম ও যৌন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘অনেকেই ভাবেন, শীত চলে গেছে, রুক্ষতা কমে যাচ্ছে। তাই ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার কমিয়ে দেন। কিন্তু শীত থেকে গরম—আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে মুখের ত্বক ফেটে যায়, শুষ্ক হয়ে যায়। রুক্ষ হয়ে যায় চুল। এ ছাড়া এই সময় মাথার ও ত্বকের বিভিন্ন স্থানে খুশকি হয় আবার চর্মরোগ হয়ে থাকে। এর জন্য ঘরোয়া যত্ন নিতে হবে।
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, এ সময় ত্বক-চুল খুব শুষ্ক হয়ে যায়। হাত ও পায়ের ত্বক টানটান হয়ে যায়। কারণ, এ সময় ময়েশ্চারাইজারের পরিমাণ খুব কমে যায়। সে জন্য বিশেষজ্ঞদের হাতের ছোঁয়ার পাশাপাশি ঘরেও কিছু যত্ন নিয়মিত নিতে হবে।
ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবেভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবেযত্নআত্তি যা যা—* শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে
* নিয়মিত ত্বকে জলপাই তেল ব্যবহার করতে হবে
* পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
* ভারসাম্যমূলক ডায়েট মেনে চলতে হবে
* দিনে তিন-চার লিটার পানি আধা গ্লাস করে একটু পরপর পান করুন
* যেকোনো ফলের রস পান করা উপকারী
* ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে

 দিনের বেলায়* দিনে দুধ, বেসন লেবু মুখে একটি প্যাক দশ থেকে পনেরো মিনিটের জন্য লাগাতে পারেন
* যাঁদের ত্বকে উপটান মানায়, সেই উপটানও ব্যবহার করতে পারেন
* দুধ, মধু, অ্যালোভেরার প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন দিনের বেলায়

রাতের বেলায়মধু আর দুধ লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন। হারমনি স্পা ও ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী রাহিমা সুলতানা পরামর্শ দেন, ‘ত্বক সব সময় ঠান্ডা ও পরিষ্কার রাখতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পানির কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন দুধ, কাঁচা হলুদ ও আমলকী খাওয়া উচিত। এতে করে ত্বক উজ্জ্বল হবে ও ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।’

কোন ত্বকে কেমন যত্নতৈলাক্ত ত্বকগরমে তৈলাক্ত ত্বক থেকে প্রচুর তেল বের হয়। ফলে ত্বক আরও গরম হয়ে যায়, ব্রণ দেখা দেয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যা করতে হবে—মুলতানি মাটি ১ চা-চামচ + গোলাপ পাপড়ির পেস্ট ১ চা-চামচ + গোলাপ জল ১ টেবিল চামচ + মসুর ডাল ১ চা-চামচ। সব উপাদান মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সময় থাকলে নিতে পারেন ঘরোয়া পরিচর্যাসময় থাকলে নিতে পারেন ঘরোয়া পরিচর্যাস্বাভাবিক ত্বকমধু ১ চা-চামচ + গাঁদা ফুলের পেস্ট ১ চা-চামচ + লেবুর রস আধা চা-চামচ + সয়াবিন গুঁড়া ১ চা-চামচ। সব উপাদান মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বকগরমে শুষ্ক ত্বক আরও খসখসে, শুষ্ক, প্রাণহীন হয়ে যায়। এর থেকে বাঁচতে যা করতে হবে— মধু ১ চা-চামচ + তরমুজের রস ১ চা-চামচ + টকদই ১ চা-চামচ + চন্দন ২ চা-চামচ + ঘৃতকুমারী একসঙ্গে প্যাক করে লাগালে ত্বক মসৃণ ও নরম থাকবে।

গরমে ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখতে ময়েশ্চারাইজার কাজে দেবেগরমে ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখতে ময়েশ্চারাইজার কাজে দেবেমিশ্র ত্বকমিশ্র ত্বক গরমে তৈলাক্ত হয়ে ওঠে এবং মুখের চামড়া উঠতে থাকে। মিশ্র ত্বকের জন্য প্রয়োজন— কচি ডাবের শ্বাস + কমলার রস ১ চা-চামচ + বেসন ২ চা-চামচ + কালো জিরার তেল প্যাক করে লাগাতে হবে। এতে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হবে।
পানি পান করুন একটু পরপরপানি পান করুন একটু পরপরহাতের যত্ন
বেসন ২ চা-চামচ + টকদই ২ চা-চামচ + চিনি ১ চা-চামচ + পাতিলেবুর রস আধা চা-চামচ। মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* পাকা কলা একটির সঙ্গে চিনি মিশিয়ে হাতে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* পেস্তাবাটা ২ চা-চামচ + গুঁড়া দুধ ১ চা-চামচ + মধু ২ চা-চামচ + গোলাপজল ২ চা-চামচ। মিশিয়ে ২ হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* পাকা কলার সঙ্গে তেঁতুলের ক্বাথ মিশিয়ে কনুইয়ে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* চালের গুঁড়া ২ চা-চামচ + টকদই ২ চা-চামচ + মুলতানি মাটি ২ চা-চামচ + কমলার খোসা গুঁড়া ১ চা-চামচ+ জলপাই তেল ১ চা-চামচ। মিশিয়ে হাতে লাগানোর পর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* বেসন ২ চা-চামচ + সামান্য কাঁচা দুধ ও অ্যাপ্রিকট স্ক্রাবার ২ চা-চামচ মিশিয়ে সম্পূর্ণ হাতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুলের জন্য দরকার ই-ক্যাপসুলচুলের জন্য দরকার ই-ক্যাপসুলপায়ের যত্ন
মুলতানি মাটি ২ চা-চামচ + মধু ২ চা-চামচ + তরমুজের রস ২ চা-চামচ +ডাবের পানি ২ চা-চামচ নিন। সব মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
* শসার রস ২ চা-চামচ + আলুর রস ২ চা-চামচ + মধু ১ চা-চামচ পায়ে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। টকদই ২ চা-চামচ + জলপাই তেল ১ চা-চামচ + চিনি ১ চা-চামচ +লবণ আধা চা-চামচ একত্রে মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে আলতোভাবে ঘষে তুলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
* কুসুম গরম পানি ১ বোল + লবণ ১ চিমটি + ১ চা-চামচ শ্যাম্পু + ১ চা-চামচ জলপাই তেল মিশিয়ে ওই পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রেখে পরে ঝামা দিয়ে ভালো করে পায়ের গোড়ালি ঘষতে হবে। এতে মরা কোষ উঠে যাবে।
* নারকেল তেল ২ চা-চামচ + পাতিলেবুর রস আধা চা-চামচ + বাঁধাকপির রস ২ চা-চামচ মিশিয়ে পায়ে ভালো করে মালিশ করতে হবে।
* গাজরের রস ২ চা-চামচ + তিলের তেল ১ চা-চামচ + শসার রস ২ চা-চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে ভালো করে লাগান। এরপর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
চুলের যত্ন
* পরিমাণমতো লেবুর রস + ঘৃতকুমারীর (অ্যালোভেরা) রস + ইক্যাপ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে সারা রাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল তাড়াতাড়ি বাড়ে।
* লেবুর রসের সঙ্গে ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন চুলে ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল বাড়ে।
* লেবুর রসের সঙ্গে টকদই ব্যবহার করলে খুশকি দুর হয়।
* লেবুর রসের সঙ্গে চায়ের লিকার মিশিয়ে শ্যাম্পু শেষে ব্যবহার করলে চুল ঝলমলে ও সুন্দর হয়।
* নারকেল তেলের সঙ্গে কর্পূর মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করলে খুশকি দূর হবে।
রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন বলেন, সাধারণ সমস্যার জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এ ছাড়া শ্যাম্পুর পর চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাথার ত্বকে না লাগে। মাসে অন্তত একবার চুলের ধরন বুঝে একটা ট্রিটমেন্ট নিতে হবে সৌন্দর্যসেবাকেন্দ্রে গিয়ে।

নবীনতর পূর্বতন