অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিল কি :- অণ্ডকোষের চামড়া বেশ মোটা,
এর মধ্যে দুটি পর্দা আছে - একটির নাম টিউনিকা ভেজাইলেনিস এবং অপরটি হলো
টিউনিকা এলবুজিনিয়া। এই পর্দা দুটি হতে স্বাভাবিক অবস্থায় এক প্রকার জলীয়
পদার্থ নিঃসৃত হয় এবং ইহার ফলে পর্দা দুটি মসৃন ও সিক্ত থাকে এবং পর্দা
দুটি একত্রে জুড়ে যায় না। কোন কারণ বশত যখন উক্ত জলীয় পদার্থ স্বাভাবিক
অপেক্ষা অধিক পরিমানে নিঃসৃত হয় আর তা শোষিত না হয়ে পর্দা দুটির মধ্যে জমে
থাকে এবং ক্রমশই পরিমানে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন অণ্ডকোষটি আকারে বৃদ্ধি
পেয়েছে মনে হয়। এই অবস্থাকেই বলা হয় কোষবৃদ্ধি বা হাইড্রোসিল। বাস্তবপক্ষে
ইহা অণ্ডকোষের এক প্রকার শোথ বিশেষ।
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের কারণ :- হাইড্রোসিল নানা কারণে
হতে পারে যেমন - আঘাত লাগা, অত্যধিক কৃত্রিম উপায়ে মৈথন, চাপ লাগা, কোন
প্রকার ইনফেকশন ইত্যাদি। ইরিটেসনের ফলে কোষের বৃদ্ধি হতে পারে। ভিতরে পুজের
মত একপ্রকার তরল পদার্থ থাকার কারণে কোষ শক্ত হয়। উক্ত সঞ্চিত তরল পদার্থ
চাপ বাধতে থাকে অথবা রক্ত বা পুজের কনা মিশ্রিত বস্তু ঘোলা হয়ে জমে যেতে
পারে। অণ্ডকোষের অভ্যন্তরস্থ তরল বস্তু সমূহ বর্ণশূন্য থাকে অথবা কখনো বা
ইষৎ হলুদ বর্ণের হয়। এর সাথে ধীরে ধীরে পিগমেন্ট রক্ত, ফাইব্রিন, চর্বি,
মিউকাস এপিথেলিয়াম শুক্র ইত্যাদির মিশ্রনে সবুজাভ, ঘোর সবুজ বা কখনো লাল
বর্ণের হতে পারে। স্ক্রটামের উপরাংশের কোষ এবং নিচের অংশে সঞ্চিত তরল
পদার্থ থাকে কিন্তু ইরিটেসন বা প্রদাহের জন্য স্ক্রটামের সাথে সংযুক্ত হয়ে
যায় তখন কোষ নিজেই আবদ্ধ থাকে এবং তরল পদার্থসমূহ উপরে সঞ্চিত হয়ে থাকে।
রোগের এই অবস্থায় অনেক সময় বাহির থেকে স্ক্রোটাল হার্নিয়ার সঙ্গে ভ্রম হতে
পারে কিন্তু পরীক্ষায় হার্নিয়া হলে এবডোমিনাল রিঙের মধ্যে পাওয়া যাবে এবং
কাশি দিলে অণ্ডকোষ ফুলে উঠবে কিন্তু হাইড্রোসিলে তা হবে না। তবে সাধারণত
স্বাস্থ্যভঙ্গ, শোথ রোগ, আঘাত লাগা, অণ্ডকোষ ঝুলে থাকা ইত্যাদি কারণেই বেশি
হয়ে থাকে।
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের প্রকারভেদ :- হাইড্রোসিল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যথা-
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের প্রকারভেদ :- হাইড্রোসিল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যথা-
- যদি পর্দা দুটির (ভেজাইলেনিস ও এলবুজিনিয়ার) মধ্যে শুক্র ঢুকে তবে তাকে বলে স্পার্মাটোসিল (Spermatocle)।
- যদি পর্দা দুটির মধ্যে পানি বা কোন প্রকার তরল পদার্থ জমে তখন তাকে বলে হাইড্রোসিল (Hydrocele) ।
- আর যদি পর্দা দুটির মধ্যে রক্ত বা ঐ জাতীয় কোন তরল পদার্থ জমে তাকে বলে হেমাটোসিল (Hematocle)
তবে যে প্রকারেরই হোক না কেন তার লক্ষণ প্রায় একই ধরনের হতে পারে এবং কারণ
যাই হোক না কেন হোমিওর ক্ষেত্রে চিকিত্সার পার্থক্য বিশেষ কোনো পরিবর্তন
হয় না। লক্ষণ অনুসারে যথাযথ ট্রিটমেন্ট দিলেই আরোগ্য হয়।
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের লক্ষণ :-
০১. এই রোগটি দেখলেই বুঝতে পারা যায় যে অণ্ডকোষ সাধারন এবং স্বাভাবিক আকার
হতে অনেক বড় দেখায়। কোন কোন ক্ষেত্রে এত বড় হয় যে দেখতে নারিকেলের মত
দেখায়। কখনো একটি আবার কখনো দুটিই এত বড় হয়ে পারে।
০২. অণ্ড (Testis) ফুলে মোটা হয়ে যায় এবং নরম বোধ হয়। অণ্ডকোষের দুটি
পর্দার মধ্যে যে তরল পদার্থ জমে তা বুঝতে পারা যায়। কারণ হাত দিয়ে অণ্ডকোষ
সমেত একটি অণ্ড চেপে ধরলে এবং মৃদু চাপ দিলে নরম বোধ হবে।
০৩. এই রোগের অণ্ডকোষের চামড়া পুরু এবং মোটা হয় কিন্তু কোরণ্ড হলে চামড়া
অত্যন্ত মোটা হবে তবে এর মধ্যে কোন প্রকার তরল পদার্থের সঞ্চালন পাওয়া যাবে
না।
০৪. জ্বালা যন্ত্রণা বা টাটানি বেদনা থাকে আবার কখনো থাকে না এবং অণ্ডকোষের
চামড়া ও এর নিচের তন্তু গুলো পুরু হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় একই অণ্ডকোষে
এইরোগ হয় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দুটি অণ্ডই এক সাথে আক্রান্ত হতে পারে।
০৫. যদি আঘাত জনিত কারণে এই রোগ হয় তবে ঐ স্থানে বেদনা হয় এবং টান টান একটা ভাব থাকে, এমন কি রোগী এটি স্পর্শ করতে দিতে চায় না।
০৬. যদি রোগ জীবানু সংক্রান্ত কারণে হয় তবে আক্রমনের সাথে সাথেই জ্বর ভাব চলে আসে, তবে দেহের তাপমাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না।
০৭. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এই রোগের আক্রমনের সাথে সাথে
স্পার্মেটিক কর্ড (Spermatic Cord) কিছুটা ফুলে যায় এবং তাতে প্রদাহ ভাব
সৃষ্টি হয়।
০৮. অনেক সময় নির্দিষ্ঠ দিকের গ্রন্থীগুলি ফুলে উঠে এবং তাতে ভয়ানক বেদনা
থাকে। এছাড়া যোনি রোগ সংক্রান্ত কারণে যেমন সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি
কারনেও এটি হতে পারে।
০৯. আবার রোগী ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত হলেও এই উপসর্গটি দেখা দিতে পারে।
তখন পা ফোলে এবং পায়ের শিরা স্ফীত হয়ে উঠে। এতে অণ্ডকোষে বেশি পরিমান পানি
সঞ্চয় হয় এবং অনেক বেশি ফুলে যায়। প্রথম অবস্থায় এর ট্রিটমেন্ট করলে
আরোগ্য হয়ে যায় কিন্তু রোগটি যখন কঠিন অবস্থায় চলে যায় তখন অনেক সময়
অপারেসনেরও প্রয়োজন হতে পারে ।
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের জটিল উপসর্গ :-
ফাইলেরিয়া বা যোনি রোগ সংক্রান্ত কারণে হাইড্রোসিলের লক্ষণ দেখা দিলে
অধিকাংশ সময় এটি ভয়ংকর রূপ লাভ করে। জ্বর ভাব দেখা দেয় এবং ফাইলেরিয়াতে খুব
বেশি কোষবৃদ্ধি ঘটে। যোনি রোগ হলে আগে যোনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং
খুব বেশি কোষ বৃদ্ধি ঘটে। এই রোগ বৃদ্ধ বয়সে, রক্ত ফিকা বা পানির মত
(Hydremia) হলে, অথবা টিউবার কিউলোসিস রোগে আক্রান্ত হলে, অথবা বুকে পানি
জমলে বা ইউরেথ্রাইটিস হলে দেখা দিতে পারে। কোন কোন সময় সুস্থ স্বাস্থ্যবান
যুবকদের এমনকি বালকদেরও আক্রমন করতে পারে। ইহাতে অণ্ডকোষ মসৃন, চকচকে এবং
খুব শক্ত হয় আবার অনেক সময় ক্ষুদ্র হতে হতে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়।
হাইড্রোসিল সাধারণত ততটা বিপজ্জনক নয় এবং সাধারণত এটা প্রজননের ক্ষেত্রে
কোনো হস্তক্ষেপ করে না। তবে নিচের অবস্থাগুলোর সাথে এটা সম্পৃক্ত থাকতে
পারে, সে ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে :
- ইনফেকশন অথবা টিউমার :- এগুলো শুক্রাণু উৎপাদনে বা শুক্রাণুর কাজে বাধা দিতে পারে।
- ইনগুইনাল হার্নিয়া :- হার্নিয়া আটকে গেলে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সচরাচর যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো:- চলাফেরায় অসুবিধা , যৌন মিলনে সমস্যা এবং হাইড্রোসিল বেশি বড় হলে অণ্ডকোষের রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা।
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় :-
সাধারণভাবে অল্পকোষ বৃদ্ধি এবং জ্বরের লক্ষণ না থাকলে চিন্তার এমন কোন কারণ
হয়ে দাড়ায় না, একে সাধারণ রোগ হিসেবেই ধরা হয়। যদি অল্পকোষ বৃদ্ধিসহ রোগীর
গায়ে জ্বর জ্বর ভাব থাকে, শিরা বা গ্রন্থি ফুলে যায় এবং ফাইলেরিয়ার লক্ষণ
দেখা যায় তখন ইহা ভয়ঙ্কর প্রকৃতির রোগ হিসেবেই বিবেচিত হয়।
সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা করে হাইড্রোসিল নির্ণয় করা হয়। অণ্ডথলি ফুলে গিয়ে বড় হয় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে না। সাধারণত চার পাশের পানির কারণে অণ্ডকোষে হাত দিয়ে অনুভব করা যায় না। পেটে কিংবা অণ্ডথলিতে চাপ দিলে কখনো পানিপূর্ণ থলি বড় বা ছোট হতে পারে, এ রকম হলে বুঝতে হবে ইনগুইনাল হার্নিয়া রয়েছে।
যেহেতু হাইড্রোসিলের পানি সাধারণত স্বচ্ছ হয়, তাই আপনার চিকিৎসক অণ্ডথলিতে টর্চের আলো ফেলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে আলোতে অণ্ডকোষের বাইরের রেখা দেখা যাবে, এতে বোঝা যাবে ওটার চার পাশে স্বচ্ছ পানি রয়েছে। যদি আপনার চিকিৎসক সন্দেহ করেন আপনার হাইড্রোসিল প্রদাহের কারণে হয়েছে, তাহলে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।
অণ্ডকোষের চারপাশে পানি থাকে বলে অণ্ডকোষ হাত দিয়ে অনুভব করা না-ও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সম্ভাব্য পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে : আলট্রাসাউন্ড ইমেজিং এবং পেটের এক্স-রে
সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা করে হাইড্রোসিল নির্ণয় করা হয়। অণ্ডথলি ফুলে গিয়ে বড় হয় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে না। সাধারণত চার পাশের পানির কারণে অণ্ডকোষে হাত দিয়ে অনুভব করা যায় না। পেটে কিংবা অণ্ডথলিতে চাপ দিলে কখনো পানিপূর্ণ থলি বড় বা ছোট হতে পারে, এ রকম হলে বুঝতে হবে ইনগুইনাল হার্নিয়া রয়েছে।
যেহেতু হাইড্রোসিলের পানি সাধারণত স্বচ্ছ হয়, তাই আপনার চিকিৎসক অণ্ডথলিতে টর্চের আলো ফেলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে আলোতে অণ্ডকোষের বাইরের রেখা দেখা যাবে, এতে বোঝা যাবে ওটার চার পাশে স্বচ্ছ পানি রয়েছে। যদি আপনার চিকিৎসক সন্দেহ করেন আপনার হাইড্রোসিল প্রদাহের কারণে হয়েছে, তাহলে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।
অণ্ডকোষের চারপাশে পানি থাকে বলে অণ্ডকোষ হাত দিয়ে অনুভব করা না-ও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সম্ভাব্য পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে : আলট্রাসাউন্ড ইমেজিং এবং পেটের এক্স-রে
অণ্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের চিকিৎসা :-
শিশুদের ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে হাইড্রোসিল আপনা আপনি মিলিয়ে যায়। যদি
হাইড্রোসিল এক বছর পরও মিলিয়ে না যায় কিংবা আরো বড় হতে থাকে অথবা
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল বড় হয়ে অস্বস্তি ঘটালে বা
বেঢপ আকৃতি ধারণ করলে অনেক ডাক্তারই সরাসরি অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কিন্তু প্রথম দিকে হাইড্রোসিল নির্মূলে অপারেশনের চেয়েও সফল এবং কার্যকর
হলো হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা। তাই প্রথমেই অপারেশনে না গিয়ে অভিজ্ঞ একজন
হোমিওপ্যাথের সাথে যোগাযোগ করুন এবং চিকিত্সা নিন।