খনার বচন-2

 

Image result for স্মরণীয় উক্তি ছবি 

প্রশ্ন গণনা (প্রশ্নের শুভাশুভ বলে দেওয়া)
সাত পাঁচ তিন কুশল বাত, নয়ে একে হাতে হাত।
কি করবে ছটে চটে, কার্য নাশ দুয়ে আটে।।
জন্মলগ্নের শুভাশুভ নির্ণয়-
সূর্য কুব্জ, রাহু মিলে, গাছের দড়ি বন্ধন গলে।
যদি রাখে ত্রিশনাথ, তবু সে খায় নিচের ভাত।।
খনা বরাহেরে বলে কোন্‌ লগ্ন দেখ।
লগ্নের সপ্তম ঘরে কোন্‌ গ্রহ দেখ।।
আছে শনি সপ্তম ঘরে, অবশ্য তারে খোঁড়া করে।
থাকয়ে রবি ভ্রমায় ভূখন্ড।
চন্দ্র থাকয়ে ধরে নবদন্ড।
মংগল থাকে করে খন্ড খন্ড।
অস্ত্রাঘাতে যায় তার মুন্ড।।
থাকে বুধ বিষয় করায়, গুরু শত্রু থাকে বহু ধন পায়।।
লগ্নে আঁকা, লগ্নে বাঁকা, লগ্নে থাকে ভানুতনুজা।
লগ্নের সপ্তম অষ্টমে থাকে পাপ, মরে জননী পীড়ে বাপ।।
খালি ছাগলা বৃষে চাঁদা, মিথুনে পুরিয়ে বেদা।
সিংহে বসু কি করে বসে। আর সব পুরিবে দশে।।
পরমায়ু গণনা-
কিসের তিথি কিসের বার, জন্মনক্ষত্র কর সার।
কি কর শ্বশুর মতিহীন, পলকে জীবন বার দিন।।
নরা গজা বিশে শয়। তার অর্ধেক বাঁচে হায়।।
বাইশ বল্‌দা তের ছাগলা। তার অর্ধেক বরা পাগলা।।
দম্পত্তির মধ্যে অগ্র-পশ্চাৎ মরণ গণনা-
অক্ষর দ্বিগুন চৌগুণ মাত্রা। নামে নামে করি সমতা।।
তিন দিয়ে হরে আন তাহে, মরা বাঁচা যান।।
এক শূন্যে মরে পতি। দুই থাকিলে মরে যুবতী।
তিথি গণনা-
রবি কুড়ি সোমে ষোল, পঞ্চদশ মঙ্গলে ভাল।
বুধ এগারো বৃহস্পতি বারো, শুক্র চৌদ্দ শনি তেরো।।
হাঁচি জ্যেঠি পড়ে যবে, অষ্টগুন লভ্য হবে।।
যাত্রায় শুভ সময় নিরূপণ-
মঙ্গলের ঊষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা।
রবি গুরু মঙ্গলের ঊষা, আর সব ফাসাফুসা।
ডাকয়ে পাখি না ছাড়ে বাসা।
উড়িয়ে বসে খাবে করি আশা।।
ফিরে যায় নিজালয় না পায় দিশা।।
খনা ডেকে বলে সেই সে ঊষা।।
উড়ে পাখি খায় না। তখনি কেন যায় না।
যাত্রাকালীন শুভ লক্ষ্মণ-
শুন্য কলসী শুক্‌না না। শুকনা ডালে ডাকে কা।
যদি দেখ মুকুন্দ চোপা। এক পা না বাড়াও বাপা।।
ভরা হতে শুন্য ভাল যদি ভরতে যায়।
আগে হতে পিছু ভালো যদি ডাকে মায়।।
মরা হতে জ্যান্ত ভালো যদি মরতে যায়।
বাঁয়ে হতে ডানে ভাল যদি ফিরে চায়।।
বাঁধা হতে খোলা ভাল মাথা তুলে চায়।
হাসা হতে কাঁদা ভাল বাঁয়।
হাঁচি টিকটিকির ফল-
(খনার জিভ কেটে বরাহ তা নিভৃতস্থানে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি টিকটিকি খাদ্য দ্রব্য মনে করে তা খেয়ে নেয়। সেই থেকে টিকটিকির শব্দেও ভূত-ভবিষৎ প্রকাশ করা হয়)-
শয়নে ভোজনে উপবেশনে বা দানে। বিবাহে বিবাদে আর বস্ত্র পরিধানে ।।
এই সপ্ত কর্মে হাঁচি অতি সুশোভন। অন্য কর্মে শুভ নাহি হয় কদাচন।।
বৃদ্ধ শিশু অথবা কফের যে হাঁচি। যত্নপূর্বক সেই হাঁচি কদাপি না বাছি।
গোধনের হাঁচি হয় মৃত্যুর কারন। জ্যোতিষ বচনে ইহা অবশ্য বারণ।
দিকের নির্ণয় করি বুঝহ সুবুদ্ধি। উর্দ্ধভাগে হইলে ধনভোগ, কার্যসিদ্ধি।।
পূর্বদিকে অগ্নিকোণে হৈলে ভয় হয়। দক্ষিণেতে অগ্নিভয় জানিহ নিশ্চয়।।
নৈঋতে কলহ লাভ পশ্চিমে ভাব। বায়ুকোণে নববস্ত্র গন্ধ জয়লাভ।।
উত্তরতে টিকটিকি হাঁচি স্ত্রীলাভ কারণ। ঈশানে হইলে মৃত্যু কে করে বারন।।
রবিবার দোষে অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির লক্ষ্মণ-
পাঁচ রবি মাসে পায়। ঝরা কিংবা খরায় যায়।।
চৈত্রমাসে বারদোষে বৎসরের ফল-
মধুমাসের প্রথম দিবসে হয় যে যে বার।
রবি চোষে মঙ্গল বর্ষে দুর্ভিক্ষ হয় বুধবার।।
সোম শুক্র গুরুবার। পৃথিবী না সহে শস্যের ভার।।
পাঁচ শনি পায় মীনে। শকুনি মাংস না খায় ঘৃণে।।
শনির অবস্থা ভেদে চৈত্র মাসের ফল-
মধুমাসের ত্রয়োদশ দিনে যদি রয় শনি। খনা বলে সে বৎসর হবে শস্যহানি।।
ধর্মার্থে উপবাসের দিন-
শয়ন উত্থান পাশমোড়া। তার মধ্যে ভীম ছোঁড়া।। দুই-ছেলের জন্মতিথি।
অষ্টমী নবমী দুটি।। পাগলার চোদ্দ পাগলীর আট। এই নিয়ে কাল কাট।।
ইহাও যদি না করতে পারিস। ভগার খাদে ডুবে মরিস।।
সময় বিশেষে ভূমিকম্প দ্বারা অমঙ্গল আশঙ্কা-
ডাক দিয়ে বলে মিহিরে শুন হে পতির পিতা।
ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।।
রাজ্য নাশে গোধন নাশে হয় অগাধ বান।
হাতে কাঠা গৃহী ফেরে কিনতে না পায় ধান।।
তিথিভেদে ফাল্গুন মাসের ফল-
ফাল্গুনে রোহিণী যত্নে চাই। আগামী বৎসর গণিয়া পাই।
সপ্তমী অষ্টমী হয় ধান। নবমীতে বন্যা দশমীতে নির্মূল পাতান।।
বন্যা গণনা-
পূর্ণ আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়। সেই বৎসর বন্যা হয়।
আমে ধান। তেঁতুলে বান।।
বামুন বাদল বান। দক্ষিণা পেলেই যান।।
মড়ক গণনা-
চৈত্রে কুয়া ভাদ্রে বান। নরের মুন্ড গড়াগড়ি যান।।
গর্ভস্থ সন্তান পরীক্ষা-
যত মাসের গর্ভ নারীর নাম যত অক্ষর। যত জন শুনে পক্ষ দিয়ে এক কর।।
সাতে হরি চন্দ্র নেত্র বাণ যদি রয়। ইথে পুত্র পরে কন্যা জানিবে নিশ্চয়।।
বাণের পৃষ্ঠে দিয়ে বাণ। পেটের ছেলে গণে আন।।
দুই চারি থাকে ছয়। অবশ্য তার কন্যা হয়।।
যদি থাকে শুন্য সাত। তবে নারীর গর্ভপাত।।
গ্রাম গর্ভিণীর ফলে যুতা। তিন দিয়া হর পুতা।।
একে সূত দুয়ে সূতা। শুন্য হলে গর্ভ মিথ্যা।
এ কথা যদি মিথ্যা হয়। সে ছেলে তার বাপের নয়।।
নামে মাসে করি এক। তার দ্বিগুণ করি দেখ।।
সারে পুরি আটে হরি। সমে পুত্র বিষমে নারী।।

বৃষ্টি গণনা, কুয়াশা গণনা, বন্যা গণনা, ধান্যাদি গণনা ও মৎসাদি গণনা-
দিনে জল রাতে তারা। এই দেখবে শুকোর ধারা।
পৌষে গরমি বৈশাখে জাড়া। প্রথম আষাঢ়ে ভরবে গাড়া।।
খনা বলে শুন হে স্বামী। শ্রাবণ ভাদর নেইকো পানি।।
পূর্বেতে উঠিল কাঁড়। ডাঙা ডোবা একাকার।।
চাঁদের সভার মধ্যে তারা। বরষে পানি মুষলধারা।।
চৈত্রেতে থর থর। বৈশাখে ঝর পাথর।।
জৈষ্ঠেতে তারা ফুটে। তবে জানবে বর্ষা ঘটে।।
কি কর শ্বশুর লেখা জোখা। মেঘেই বুঝবে জলের লেখা।।
কোদালে কুড়ালে মেঘের গা। মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে বা।
বলগে চাষায় বাঁধতে আল।আজ না হয় জল হবে কাল।।
দূর সভা নিকট জল। নিকট সভা রসাতল।।
পশ্চিমে ধনু নিত্য খরা। পুবের ধনু বরষে কড়া।।
ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন। শীঘ্র বৃষ্টি হবে জেনো।।
বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়। সে বৎসর বর্ষা হবে খনা কয়।।
পৌষের কুয়া বৈশাখের ফল। যতদিন কুয়া ত’দিন জল।।
শনির সাত মঙ্গলের তিন। আর সব দিন দিন।।
ভাদুরে মেঘ বিপরীত বায়। সে দিন ঝড় বৃষ্টি হয়।।
কর্কট ছরকট সিংহ শুকা কন্যা কানে কান।
বিনা ব্যায়ে তুলা বর্ষে কোথা রাখবি ধান।।
যদি বর্ষে আঘনে।। রাজা যান মাগনে।।
যদি বর্ষে পৌষে। কড়ি হয় তুষে।।
যদি বর্ষে মাঘের শেষ। ধন্য রাজা পুণ্য দেশ।।
যদি বর্ষে ফাল্গুনে। চিনা কাউন দ্বিগুণে।।
জৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা। শস্যের ভার না সহে ধরা।।
মাঘ মাসে বর্ষে দেবা। রাজা ছেড়ে প্রজায় সেবা।।
জৈষ্ঠে মারে আষাঢ়ে ভরে। কাটিয়া মাড়িয়া ঘর করে।।
যদি বর্ষে মকরে। ধান হবে টেকরে।।
যদি হয় চৈত্রে বৃষ্টি। তবে হবে ধানের সৃষ্টি।।
কাতির পূর্ণিমা কর আশা। খনা ডেকে বলে শোনরে চাষা।।
নির্মল মেঘে যদি বাত বয়। রবি খন্দের ভার ধরণী না সয়।।
মেঘ করে রাত্রে আর হয় জল। তবে জেনো মাঠে যাওয়াই বিফল।।
আষাঢ়ে নবমী শুকল পাখা। কি কর শ্বশুর লেখাজোখা।।
যদি বর্ষে মুষলধারে। মধ্য সমুদ্রে বগা চরে।
যদি বর্ষে ছিটে ফোঁটা। পর্বতে হয় মীনের ঘটা।।
যদি বর্ষে ঝিমি ঝিমি। শস্যের ভার না সয় মেদিনী।
হেসে চাকি বসে পাটে। শস্য সেবার না হয় মোটে।।

নবীনতর পূর্বতন