একদিন গোপালের কোনও বন্ধু এসে
মহারাজকে কানভারী করার জন্য গোপনে জানালে, গোপাল আপনার একজন কর্মচারী।
লোকটাকে আপনি খুব বিশ্বাস করেন। তাই তার হাতেই টাকাকড়ি খরচ করার ভার
দিয়েছেন। তিনি আপনার অনেক টাকা সরিয়েছেন…… আপনি হিসেব মিলিয়ে দেখুন।
মহারাজ প্রথমে কিছুতেই লোকটিকে কথা কানে তুলতে চান না। বলেন-গোপাল আমার
বিশ্বাসী লোক, সে কখনও অমন কাজ করতে পারে না। কোনদিন টাকা পয়সা এদিক ওদিক
করবার লোক সে নয়।আমি তাকে বিশ্ব…াস করি’ তখন লোকটি দফায় দফায় গোপালের খরচের
নমুনা বলতে লাগল। সে অমুক তারিকে অত হাজার টাকা গাপ্ করেছে… অমুক তারিখে
অমুক সম্পত্তি নিজের নামে কিনেছে হিসাবের খাতায়…… অমুক তারিখে এক হাজার
টাকা জমা দিয়েছে…… আবার অমুক তারিখে…. জাল রসিদ দাখিল করে, তিন হাজার টাকা
বার করে নিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি কত কথা বলে গেল…… মহারাজ এইসব বিষয় অবাক
হয়ে শুনলেন, তারপর খাতাপত্র পরীক্ষা করে দেখলেন লোকটির সমস্ত কথাই সত্যি।
কিন্তু সে টাকা মহারাজ নিজে থেকেই দিয়েছেন। যেমন দিয়েছেন প্রায় সবই মিলে
যাচ্ছে, সেজন্য মনে মনে হাসতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন, আমার বাড়ীতে আমার
অন্য কর্মচারী বা আমি কিছুই জানলাম না, অথচ, বাইরের লোক হয়ে তুমি এত সব
খবর জানলে কি করে মশাই? গোপাল কি তোমাকে সব জানিয়েছে? লোকটি বললে, গোপালের
যা আয় তার চাইতে ব্যায় অনেক বেশী। ও প্রচুর টাকা ওড়াচ্ছে অনবরত! তাই
গোপালের নামে নালিশ করলাম সাবধান হওয়ার জন্য। মহারাজ বললেন তা হটে। তোমার
নাম-ধামটা বাপু আগে জানতে চাই। তুমি কোথায় থাক এবং তোমার নাম কি? লোকটি
সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলে, আমার নাম? কেন মহারাজ? আমি কি আপনার চুরি করেছি নাকি
যে, আমার নাম-ধাম জানতে চাইছেন? আমি আপনাকে সত্যি কথাই বলছি। মহারাজ
বললেন, কারণ দুই নম্বর আসামী বলে তোমাকে গ্রেপ্তার করতে হবে কিনা! তুমি
হচ্ছো গোপালের পরামর্শদাতা ও বখরাদার। তা নইলে এমন সব গোপনীয় কথা খাতাপত্র
না দেখেই তুমি জানতে পারলে কি করে? গোপাল যা কিছু করেছে, সব তোমারই
পরামর্শমত। বোধ হয় ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে, তাই গোপালকে ধরিয়ে দিতে
এসেছ-এই না? যাক নিজের চরকায় তেল দেও, পরের চরকায় তেল না দিলেও চলবে। লোকটি
মুখ নীচু করে চলে গেল।