কিভাবে বানাবেন একটি সাধারন এপ

স্মার্টফোনের ‘স্মার্ট’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে এর হাজারো অ্যাপ। তাই বলা চলে এই অ্যাপকেন্দ্রিক এক বিপ্লব শুরু হয়েছে। আর সে বিপ্লবে বাংলাদেশের তরুণেরা পিছিয়ে থাকবে কেন! অ্যাপ বানাতে দরকার চমৎকার একটি ধারণা। এমন কিছু যা কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে। প্রোগ্রামিং সংকেত লেখায় নিজে দক্ষ না হলে দলে থাকতে হবে প্রোগ্রামার, ছবির কাজের জন্য দরকার গ্রাফিক ডিজাইনার।
অ্যাপ বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীর সমন্বয়ক রাজেশ পালিত। পটভূমি, উন্নয়ন, প্রকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও হালনাগাদ—এই চারটি ধাপে অ্যাপ তৈরি করতে হয়।
পটভূমি পর্যায়
e2770220fd6ed03d371b6c3732a6b0c2-5-300x169
ধারণা: অ্যাপ বানানোর প্রথম কাজ এটি। অ্যাপ তৈরির বিষয় ঠিক করে নিতে হবে।
বৈশিষ্ট্য চূড়ান্তকরণ: অ্যাপে কী কী থাকবে তা ঠিক করতে হবে।
ব্যবহারকারী: অ্যাপটির ব্যবহারকারী কারা এবং এটি কী কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের জন্য নাকি পুরো বিশ্বের জন্য হবে তা ঠিক করতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম: অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস নাকি উইন্ডোজ—কোন অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যাপ তৈরি করবেন তা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া কিছু প্রোগ্রাম আছে যেগুলোর মাধ্যমে সব অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে এমন অ্যাপ তৈরি করা যায়। এর মধ্যে আইওনিক, টাইটানিয়াম, ফোনগ্যাপ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে এইচটিএমএল ৫, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্টে লেখা অ্যাপ সব স্মার্টফোনেই চলে।
আয়: অ্যাপ থেকে আপনি কীভাবে আয় করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। বিনা মূল্যের অ্যাপে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে হয়। প্রিমিয়াম অ্যাপ নামানোর সময় টাকা দিয়ে নামাতে হয়, আয়ের উৎস অ্যাপ বিক্রির টাকা। আরেক ধরনের অ্যাপ আছে যেগুলো ফ্রিমিয়াম (ফ্রি+প্রিমিয়াম) নামে পরিচিত। বেশ কিছু সুবিধা বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়, তবে অতিরিক্ত সুবিধা পেতে টাকা খরচ করতে হয়।
ভাষা নির্বাচন: অ্যাপে কোন ভাষা ব্যবহার করবেন কিংবা কতটি ভাষায় অ্যাপটি তৈরি করা হবে তা ঠিক করতে হবে।
নাম নির্বাচন: এমন কোনো নাম বেছে নিতে হবে যেটি গ্রাহকদের টানবে।
তথ্যসূত্র: অ্যাপ তৈরিতে ব্যবহার করা তথ্যের উৎস উল্লেখ করতে হবে।
উন্নয়নপর্ব
অ্যাপে কী কী সুবিধা থাকবে, নকশা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে এই পর্যায়ে এসে। অ্যাপে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে সেটা গোছালোভাবে দিতে হবে। এরপর সবকিছুর স্কেচ তৈরি করে নিতে হবে, যা ওয়্যার ফ্রেম নামে পরিচিত। এবার স্কেচগুলো পাঠাতে হবে গ্রাফিক ডিজাইনারের কাছে। গ্রাফিকসের কাজ শেষে প্রোগ্রামিং সংকেত (কোড) লেখার কাজটি সেরে নেবেন ডেভেলপার। এবার অ্যাপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পালা। কোনো সমস্যা থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট কম্পিউটারের মডেলভেদে কর্মক্ষমতা, পর্দার আকার, তথ্য ধারণক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। অন্যদিকে ডেস্কটপ অ্যাপ সাধারণত কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তাই ব্যবহারকারীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। কিন্তু মোবাইল অ্যাপের ক্ষেত্রে কে ব্যবহার করবে তা আগে থেকে বলা অসম্ভব। তাই মোবাইল অ্যাপ হতে হবে নিখুঁত।
প্রকাশপর্ব
পরিকল্পনা হলো, উন্নয়ন হলো, এবার যাদের জন্য তৈরি সেই ব্যবহারকারীদের হাতে অ্যাপ তুলে দিতে হবে। যে অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যাপ বানানো হয়েছে সে প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উইন্ডোজ স্টোর, গুগল প্লেস্টোরে অ্যাপ উন্মুক্ত করতে খরচ পড়বে যথাক্রমে ১৯ ও ২৫ ডলার। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের ক্ষেত্রে প্রতিবছর ৯৯ ডলার ফি দিতে হবে। এ ছাড়া রয়েছে থার্ড পার্টি প্ল্যাটফর্ম। অ্যামাজন এমনই এক থার্ড পার্টি প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশে আছে ইএটিএল। থার্ড পার্টি প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করলে অ্যাপ সহজে ব্যবহারকারীর চোখে পড়ে।
রক্ষণাবেক্ষণ ও হালনাগাদ
অ্যাপ ব্যবহারে কোনো সমস্যা থাকলে তা নিয়মিত সমাধান করতে হবে। ব্যবহারকারীরা পর্যালোচনা, মন্তব্য কী দিচ্ছে তা দেখতে হবে। একই সঙ্গে আপনার অ্যাপে কোনো ত্রুটি বা বাগ আছে কি না, সে ব্যাপারে পরিষ্কার হতে হবে এবং নিয়মিত অ্যাপের হালনাগাদ প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি আপনার অ্যাপের জন্য প্রচারণাও চালাতে হবে
নবীনতর পূর্বতন