সদ্য বিবাহিত ছেলে-মেয়ের জন্য অমূল্য উপদেশ

7ef4e9a5a26169440254e8e8a1be7cc6
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু ।
বিয়ের সময় পুত্রের উদ্দেশ্যে পিতার উপদেশ, তুমি এক নব্য জগতে এবং এক নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছ। তাতে অনেক কল্যাণ ও সৌন্দর্য রয়েছে, সুন্দরভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পারলে তুমি তা দেখতে পাবে। আবার তাতে অনেক অপ্রিয় ও তিক্ত দিক রয়েছে যা তোমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তাই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা ও উত্তরোত্তর উন্নতি করতে শিখতে হবে। আর অবশ্যই তোমাকে জীবন সঙ্গিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তুমি দশটি বিষয়ে লক্ষ্য না রাখলে নিজ ঘরে শান্তি পাবে না। নিজের স্ত্রীর জন্য তুমি এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অতএব কথাগুলো মনে রেখ এবং এসব অর্জনে সচেষ্ট থেকো :
প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয় হলো : স্ত্রীরা প্রেম ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে এবং তারা ভালোবাসার সুস্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে চায়। অতএব তোমার স্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে কার্পণ্য দেখাবে না।
তৃতীয় বিষয় হলো : স্ত্রীরা কঠোর ও অনড় স্বভাবের পুরুষদের অপছন্দ করে, আর দুর্বল ও কোমল চিত্তধারী পুরুষদের ব্যবহার করে। অতএব প্রতিটি গুণকে স্বস্থানে রাখবে। কারণ, এটি ভালোবাসা ডেকে আনে এবং প্রশান্তি ত্বরান্বিত করে।
চতুর্থ বিষয় হলো : মেয়েরা স্বামীর কাছে তাই প্রত্যাশা করে স্বামীরা স্ত্রীর কাছে যা প্রত্যাশা করে। যেমন : ভদ্রোচিত কথা, সুন্দর চেহারা, পরিচ্ছন্ন বসন ও সুগন্ধি। অতএব তোমার প্রতিটি অবস্থায় এসবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। স্ত্রীকে নিজের মতো করে কাছে পেতে তার কাছে এমন অবস্থায় ঘেঁষবে না যখন তোমার শরীর ঘামে জবজবে।তোমার কাপড় ময়লা।
পঞ্চম বিষয় হলো : ঘর হলো নারীদের রাজত্ব। ঘরের মধ্যে তারা নিজেকে নিজের আসনে সমাসীন ভাবে। নিজেকে সেখানকার নেতা মনে করে। অতএব তার সাজানো এই প্রশান্তির রাজ্যটিকে তুমি তছনছ করতে যাবে না। এ আসন থেকে তাকে নামাবার চেষ্টাও করবে না। তুমি যদি তা-ই করো, তবে তাকে যেন তার রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ করলে।
ষষ্ঠ বিষয় হলো : নারী যেমন চায় তার স্বামীকে পেতে; তেমনি তার পরিবারকেও সে হারাতে চায় না। অতএব তুমি কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে এক পাল্লায় মাপতে যাবে না।
সপ্তম বিষয় হলো : নিশ্চয় নারীকে সবচেয়ে বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি তার দোষ নয়। বরং এ তার সৌন্দর্যের রহস্য। তার আকর্ষণের চাবিকাঠি। যেমন ভ্রুর সৌন্দর্য তার বক্রতায়। অতএব সে কোনো ভুল করলে তার ওপর এমন হামলা চালিও না যাতে কোনো সহমর্মিতা বা সদয়তা নেই।
অষ্টম বিষয় হলো : নারীদের সৃষ্টিই করা হয়েছে স্বামীর অকৃতজ্ঞতা এবং উপকার অস্বীকারের উপাদান দিয়ে। তুমি যদি যুগযুগ ধরে তাদের কারো প্রতি সহৃদয়তা ও সদাচার দেখাও তারপর শুধু একটিবার তার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কর তবে সে বলবে, তোমার কাছে আমি জীবনে ভালো কিছুই পেলাম না। অতএব তাদের এ বৈশিষ্ট্য যেন তোমায় তাকে অপছন্দ বা ঘৃণায় প্ররোচিত না করে। কারণ, তোমার কাছে তার এ বৈশিষ্ট্যটি খারাপ লাগলেও অনেক গুণ দেখবে তার ভালো লাগার মতো।
নবম বিষয় হলো : নানাবিধ শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক ক্লান্তির মধ্য দিয়ে নারী জীবন বয়ে চলে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য কিছু ফরয পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছেন যা এ সময় কর্তব্য ছিল। যেমন রজস্রাব ও সন্তান প্রসবকালে তার জন্য পুরোপুরিভাবে সালাত মাফ করে দিয়েছেন। এ সময়দুটোয় সিয়াম পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ না তার শরীরিক সুস্থতা ফিরে আসে এবং তার মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে যায়। অতএব এ সময়গুলোয় তুমি আল্লাহর ইবাদতমুখী হয়ে যাবে। কারণ, তার জন্য আল্লাহ যেমন ফরযকে হালকা করে দিয়েছেন তেমনি তার থেকে তোমার চাহিদা ও নির্দেশও হালকা করে দিয়েছেন।
দশম বিষয় হলো : মনে রাখবে স্ত্রী কিন্তু তোমার কাছে একজন বন্দিনীর মতো। অতএব তার বন্দিত্বের প্রতি সদয় থাকবে এবং তার দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। তাহলে সে হবে তোমার জন্য সর্বোত্তম সম্পদ। সে তোমার সর্বোত্কৃষ্ট সঙ্গী হবে। আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন।
বিয়ের রাতে বিদায়ী কন্যার প্রতি মমতাময়ী জননীর একগুচ্ছ উপদেশ: হে আমার মেয়ে, তুমি তোমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছো। যেখানে তুমি জন্মেছিলে।যে বাসস্থানে তুমি প্রতিপালিত হয়েছো। যাচ্ছো এমন পরিবেশে যার সঙ্গে তুমি মোটেও পরিচিত নও। মিলিত হবে এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যাদের তুমি চেনো না। অতএব তুমি তার দাসী হয়ে যাও।সে তোমার দাস হয়ে যাবে।আর তার জন্য তুমি ১০টি বৈশিষ্ট্য ধারণ করো, তবে সে তোমার জন্য সঞ্চিত ধন হয়ে যাবে।
প্রথম ও দ্বিতীয়টি হলো : স্বামীর সঙ্গে থাকবে অল্পে তুষ্টির সঙ্গে এবং জীবনযাপন করবে আনুগত্য ও মান্যতার ভেতর দিয়ে।
তৃতীয় ও চতুর্থটি হলো : স্বামীর নজরে পড়ার জায়গাগুলো দেখাশোনা করবে এবং তার নাকে লাগার স্থানগুলো খুঁজে ফিরবে। তার দুই চোখ যেন তোমার কুৎসিত কিছুর প্রতি পতিত না হয়। আর সুবাস ছাড়া তোমার কাছে যেন কোনো গন্ধ না পায়।
পঞ্চম ও ষষ্ঠটি হলো : স্বামীকে খাওয়াবার সুযোগ তালাশ করবে এবং তাঁর নিদ্রার সময় নিরব থাকবে। কারণ, ক্ষুধার তাপ মানুষকে তাতিয়ে দেয়। আর ঘুম থেকে কেঁপে ওঠা তাকে ক্ষেপিয়ে দেয়।
সপ্তম ও অষ্টম হলো : স্বামীর বাসা ও সম্পদের যত্ন নেবে এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
নবম ও দশম হলো : তার কোনো নির্দেশ অমান্য করবে না এবং তার কোনো দোষ খুঁজে বের করবে না। কারণ, তুমি তার নির্দেশের অবাধ্য হলে অর্থ তার মনটাকে চটিয়ে দিলে। যদি তার কোনো দোষ প্রকাশ করলে তো তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় অনিরাপদ হয়ে গেলে। এরপর আরও মনে রাখবে, তাঁর বিষণ্নতার সময় আনন্দ প্রকাশ করবে না। আবার তাঁর আনন্দের সময় বিষণ্নতা প্রকাশ করবে না। কারণ,প্রথমটি তার কাছে অবহেলা মনে হবে এবং দ্বিতীয়টি তাকে বিরক্ত করবে। তাকে সবচে মর্যাদা তুমি তখনই দেবে যখন তাঁকে সবচে বেশি সম্মান করবে। অবশেষে প্রার্থনা, আল্লাহ তোমার সার্বিক কল্যাণ করুন। তোমাদের দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করুন। আমীন।
ফ্রম-কাজী অফিস ব্লগ
নবীনতর পূর্বতন