শুভ্রকে লেখা নীলিমার শেষ চিরকুটখানা শুভ্র তার পকেটে নিয়ে হাঁটছে। গন্তব্য সমুদ্রসৈকত। অনেক আগের ইচ্ছে তার, পত্রখানা পরন্ত বিকেলে সমদ্রের পাড়ে বসে পড়বে। আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অস্তাচলের সূর্য দেখা নীলিমার খুব পছন্দের একটি বিষয় ছিল। শুভ্র তার শার্টের বুক পকেট থেকে চিরকুটটি বের করে চোখের সামনে মেলে ধরলো। সাদা কাগজে কালো কালির লেখা। লেখাগুলো একেবারেই জীবন্ত। একেবারে যেনো শুভ্রর দিকে বড়বড় চোখ করে চেয়ে আছে।
.
.
“প্রিয় শুভ্র,
আজ তোমার জন্মদিন।
জীবনে কি নেই? আছে সুখ-দুঃখ, সমস্যা-
সমাধান, নাটকীয়তা- বৈচিত্র্যহীন সব
ঘটনা ইত্যাদি ইত্যাদি… সব কিছু মিলে হৃদয়
একেবারে ঠাঁসা ! আজ এতটা সময় পার
করে এসে মনে হচ্ছে, একেবারে বুকের
ভেতরে-অন্তরের অন্তঃস্থলে একটা বিশাল
শূন্যতা এখনও কিভাবে যেন রয়ে গেছে।
বুঝতে পারিনি। এ যেন এক
ফুটো হয়ে যাওয়া পাত্র, হাজার বার পুরণ করেও
ঠিক শূন্যই থেকে যায় …
শুভ্র! আজ তোমার জন্মদিন…
এ দিন টি কে আমি খুব ভুলে থাকার
চেষ্টা করি, জানো! কিন্তু ক’দিন আগে থেকেই
তোমাকে স্বপ্নে দেখতে শুরু করি। ভিন্ন ভিন্ন
দৃশ্যপট-কিন্তু বার বার সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি।
তুমি শুধু ক্ষমাই-ই চেয়ে যাও, আর আমি শুধুই মুখ
ফিরিয়ে রাখি! আশ্চর্য না, বলো? একই স্বপ্ন মানুষ
কতবার দেখতে পারে?
যা-ই হোক, শুভ জন্মদিন। খুব ইচ্ছে করে, দূর
থেকে দাঁড়িয়ে এই একটা দিন তোমাকে এক
নজর দেখে আসতে। কিন্তু আমি তা কখনই
করবো না। তোমাকে ক্ষমা করার প্রশ্নে আমার
যে নিরবতা- এ নিরবতা আমি কোনদিন
ভাঙতে পারবো না।
যদি এসে সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাও কখনও-
হয়তোবা বোকা মেয়ে আমি-
তোমাকে স্বস্তি দিয়েও দিতে পারি। তারপর
তো তুমি ভুলে যাবে আমাকে। সুখের’
সাগরে ভাসবে তোমার ঘরণী আর
ফুটফুটে দুটো বাচ্চা নিয়ে। ভালই
কেটে যাবে তোমার বাকী দিন গুলো। কিন্তু
আমি নিরব থেকে অন্তত, একবারের জন্যে হলেও
হঠাৎ তোমার মনে পড়ে যেতে চাই।
আমাকে ভেবে তোমার মনের কোণে যদি মেঘ
জমে ক্ষণিকের জন্যে, তোমার চোখে এক বিন্দু
জল এসে জমা হয়ে যদি আর গড়িয়ে না পড়ে-এই
টুকুই আমার অনেক বড় পাওয়া। আমাকে পাগলী
ভাববার প্রয়োজন নেই। আমার মতন করে আজীবন
ভালোবেসে জ্বলে পুড়ে ছাই
না হতে পারো, আমাকে মনে করে তোমার
বুকে যদি একবারের জন্যে কাঁপন তোলে এক
মুহুর্তের কোন অনুভুতি; তাতেই আমার আনন্দ শুভ্র!
সারাজীবন আগলে রাখার যে প্রতিশ্রুতির
স্বপ্ন তুমি দেখিয়েছিলে-তার এক
কণা বাস্তবতাও তুমি আমাকে দাওনি। তার
বিনিময়ে যদি আমি এই এক বিন্দু আনন্দ নিজের মত
করে পেতে চাই-খুব বেশি কি অন্যায়
হয়ে যাবে, বলো?
তুমি ভালো থেকো। আমি যেভাবেই
থাকি, যেখানেই থাকি-আমার কামনা তাই।
কারো কারো জীবন একসাথে গাঁথা হয়েও
কিভাবে যেন ভাগ হয়ে যায়,
আলাদা আলাদা দুটো গল্পে। তোমার গল্প
তো এগিয়ে গেল, লোকমুখে অনেক শুনি। কিন্তু
আমার গল্পের পাঠক আজ অবধি পাই নি কাউকে।
কে জানে, কিছু গল্প হয়তোবা অপঠিত
থেকে যায়। কালের
গর্ভে ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যায়
নিরবে, দৃষ্টির অন্তরালে। সে অপেক্ষাই করছি।
শুভ জন্মদিন শুভ্র। ভালো থেকো। নিজের প্রতি যত্ন নিও।
.
.
ইতি……
~~~ তোমার নীলিমা ~~~
৩১.০১.২০১১ ইং
.
.
শুভ্রর চোখ ছলছল করছে। এখনই গলগল করে চোখের পানি পড়া আরম্ব করবে। সমুদ্রের নোনা জল আরো নোনা হবে…