রাতের আকাশটা দেখতে খুব ভালোই লাগছে লিখনের।ছাদে বসে পায়ের উপর পা তুলে একের পর এক সিগারেট বের করে ফুকছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোয়া ছুড়ছে।একটা কষ্টের পাহাড় লিখনের মন
উঠোনে দাড়িয়ে আছে। ফোনস্ক্রীনে বার বার আলো জলছে আর নিভছে।কোনো দিকেখেয়াল নেই লিখনের।
রাত গভীর হয়েছে।প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে গিয়ে ফোনের দিকে নজর পড়ল। আলো জলছে আর নিভছে।ফোনটা হাতে তুলে নিলো লিখন। মেঘলার ফোন আসছে।লিখন ফোনটা আবার টেবিলে রেখে
দিয়ে এক মনে সিগারেট ফুকছে।
কি হয়ে গেলো একটু সময়ের ব্যাবধানে!আর কখনো যাযাবর জার্সিতে মাঠে নামতে পারবে না লিখন।বল হাতে নিয়ে কখনোই উইকেট তোলার দায়িত্বটা আর থাকবে না তার।ভাবতে ভাবতেই কেঁদে ফেলল লিখন।কিছুক্ষন পরে আবার মেঘলার ফোন।লিখন ফোনটা রিসিভ করলো...
-লিখন,তুমি একটু দেখা করতে পারবা?(মেঘলা)
-কখন,কোথায়?(লিখন)
-এখনি।তোমার বাসার নিচে।
-না।তুমি আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।
-লিখন,শুধু একবার দেখা করো। কাল থেকে চিরদিনের জন্য তোমার জীবন থেকে চলে যাব। প্লিজ লিখন।
লিখন ফোনটা কেটে নিচে নামলো।মেঘলা মেয়েটা অনেক ভালো।লিখনকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে মেয়েটি।কিন্তু লিখন কেন জানি ওকে ভালোবাসতেই পারেনা।আর বাসবেই বা কি করে! লিখনের ভালোবাসার মানুষটিতো লিখনকে ছেড়ে কবেই চলে গেছে।সেই থেকে লিখন আর কাউকে আপণ করতে পারেনা।
-কি হয়েছে?কিছু বলবা? (লিখন)
-হ্যাপি বার্থডে লিখন। (মেঘলা)
-থ্যাংস।আর কিছু বলবা?
-হুম।অনেক কিছু বলতে চাই।
-তারাতারি বলো।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি লিখন।
-আমি কাউকে ভালোবাসিনা মেঘলা।তাছাড়া এখন আমার জীবনটা শূন্য।আমি আর ক্রিকেট খেলতে পারবোনা কখনো।আমার সব আশাগুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে আমার চোখের সামনে অথচ আমি কিছুই করতে পারবোনা।তুমি চলে যাও এখান থেকে।আমাকে ভেবে কষ্ট পেওনা।
লিখন চলে গেলো নিজের ঘরে। মেঘলাও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।লিখন কেন ওকে মেনে নিতে পারেনা?কি কম আছে ওর?আর কিছুই ভাবতে পারছেনা মেঘলা।কাল মেঘলা চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে।লিখনের থেকে প্রায় সাত'শ কিলোমিটার দুরে।কিন্তু লিখনকে ভুলে যেতে পারবে কি?ওর খেলা,ওর রাগ এগুলো কিভাবে ভুলবে মেঘলা?
লিখন বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে।অনেক স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেট নিয়ে।স্বপ্নগুলো
আজ মেঘলা চলে যাবে লিখনকে ছেড়ে,লিখনের শহর ছেড়ে। শেষবারের মতো লিখনকে দেখতে মেঘলা লিখনের বাসায় আসলো।লিখন এখনো ঘুমাচ্ছে। কয়েক বার ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারলোনা।লিখনের
বিছানায় বসে আছে মেঘলা। লিখনের দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে।কাঁদতে কাঁদতে লিখনের চোখজোরা ফুলে উঠেছে।
মেঘলা ভাবছে ছেলেটা কত শান্ত দেখতে।অথচ এতোটা কান্না করতে পারে তা জানার বাইরে ছিলো।সাহস করে ডাক দিলো লিখনকে।
-লিখন,এই লিখন!উঠো না। দেখো আমি চলে যাচ্ছি।আর আসবোনা তোমাকে বিরক্ত করতে।(মেঘলা)
-কি হয়েছে মেঘলা?এতো সকালে তুমি?আর আমার রুমে কেন?(লিখন)
-আমি চলে যাচ্ছি লিখন।আর কখনো দেখা হবে কিনা জানিনা!তোমাকে এই বেইসলেট টা দিয়ে গেলাম। এটা হাতেপড়ো।হয়ত আমাকে মনে পড়বে।
কথাটি বলেই লিখনের ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো মেঘলা। লিখন মেঘলার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে প্যাকেট দিয়ে সিগারেট বের করে ফুকতে শুরু করলো আর মনে মনে ভাবলো,,ছেলেদের জীবনটা বড়ই বেমানান।তাইবেদনার আচর লাগতে দিতে নেই।